ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাসে যাত্রীর চাপ বেড়েছে।
Published : 26 Jul 2024, 01:25 AM
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে প্রায় এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর ফের সড়কে ফিরেছে গতি; এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন রুটে গণপরিবহনসহ ঢাকার সঙ্গে দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে।
বৃহস্পতিবার থেকে সীমিত আকারে ট্রেন চলাচলের ঘোষণা দিয়েও তা থেকে সরে এসেছে রেলওয়ে, তারা তাকিয়ে আছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার দিকে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। সকাল থেকেই ঢাকার সড়কে দেখা যায় মানুষের চাপ। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কিছু সড়কে যানজট তৈরি হয়, যা শেষ বিকালে আরও প্রকট হয়।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি কমেছে, সরিয়ে নেওয়া হয়েছে তল্লাশি চৌকিও। বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার ঢাকার সড়কে যান চলাচল ছিল বেশি। যাত্রীদের যানবাহন না পাওয়ার সংকটও দেখা যায়নি।
ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা লুৎফুন্নাহার কাকলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গুলশানের অফিসে যাওয়ার জন্য মিরপুর-১২ নম্বর থেকে একটি বাসে উঠেন। তবে সরাসরি বাস পাননি, উত্তরার একটি বাসে উঠে কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে নামেন,সেখান থেকে আরেক বাসে মহাখালী। আর বনানীতে এসে প্রায় একঘণ্টা যানজটে ছিলেন।
তিনি বলেন, “বাস না পাওয়ায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। দুইবার বাস বদল করতে হয়েছে। যানজটের কারণে আরও দেরি হযেছে। তবে দীর্ঘদিন পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছি, এতে ভালো লাগছে।”
বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাসেও যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে।
সকালে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী এনা পরিবহনের কাউন্টারের সামনে দেখা গেছে যাত্রীদের লম্বা লাইন।
ওই পরিবহনের যাত্রী ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী আবেদা সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল ১৯ জুলাই। আন্দোলন আর কারফিউতে আটকা পড়েছিলাম। কাল (বুধবার) থেকে বাস চলাচল শুরু হওয়ার পর আজ যাচ্ছি।”
মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল মালেক বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কারফিউ শিথিলের সময় তারা বাস ছাড়ছেন। তবে যাত্রী কম।
“কারফিউ যখন শিথিল থাকছে সে সময়ে আমরা বিভিন্ন ডেস্টিনেশনে গাড়ি ঠিকমত পাঠাচ্ছি। তবে যাত্রী কম। কারণ মানুষ হয়ত বের হচ্ছে না। নির্দিষ্ট সময়ে আসার একটা বাধ্যবাধকতা আছে। কেউ ঢাকা থেকে রংপুর রওনা হলে কিন্তু আমি সময়ই পাচ্ছি ৭ ঘণ্টা, ওই সময় পৌঁছানো কঠিন হয়ে যাবে। এতে অনেকে হয়ত দ্বিধাগ্রস্ত। তবে দুয়ে দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে, আশা করছি।”
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত দুই দিন কারফিউ শিথিলের মধ্যে সারা দেশের বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল করেছে। শুক্রবারও চলবে।
“দূরপাল্লা এবং শহরের বিভিন্ন রুটের বাস ঠিকমতই চলছে। কারফিউ শিথিলের মধ্যেই বাস যাওয়ার চেষ্টা করছে, কোথাও হয়ত দেরি হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার যাত্রীও পাওয়া গেছে মোটামুটি।”
পরিস্থিতি স্বাভাবিকের অপেক্ষায় রেল
কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর বাস ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল শুরু হলেও বন্ধ আছে ট্রেন চলাচল। বৃহস্পতিবার থেকে সীমিত পরিসরে ট্রেন চালানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে রেলওয়ে বলছে, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সারা দেশে রেল চলাচল ফের শুরু হবে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় রেলভবনে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইফতেকার আলম রাজন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ট্রেন চলবে। আমাদের সচিব স্যার, রেলওয়ের ডিজি মহোদয়সহ রেলওয়ের কর্মকর্তারা একটা মিটিং করেছেন। সেখানে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতার জেরে বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রেন সেবা সীমিত পরিসরে চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বুধবার।
বৃহস্পতিবার কোনো ট্রেন চলাচল করেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনের মাস্টার মাহমুদুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আজ সকাল থেকে দুটি লোকাল ট্রেন চলার কথা ছিল। তবে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। কোনো ট্রেন চলেনি।"
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে গত ১৬ জুলাই মঙ্গলবার ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী ও ময়মনসিংহ, রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রেলপথ অবরোধ করা হয়। তাতে কয়েক ঘণ্টার জন্য ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
পরের দিন ট্রেন চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। তবে ১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির দিন সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সেদিন ঢাকার মহাখালীতে রেললাইনে আগুন ধরিয়ে অবরোধ করা হয়। ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন জায়গাতেও একই ঘটনা ঘটে। এরপর থেকেই সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে ১৪ জুলাই থেকে দুই দিনের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনকারীরা। এরপর ১৮ জুলাই থেকে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ দেওয়ার পর আন্দোলন ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নেয়।
গত শুক্রবার রাত থেকে সারা দেশে কারফিউ দেয় সরকার। কারফিউর মধ্যে রবি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ছিল সাধারণ ছুটি। বুধবার থেকে ঢাকায় ৭ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করার ঘোষণা দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যা বৃহস্পতিবারও একই ছিল।
বৃহস্পতিবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দুই দিনে ৯ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।