দিনের পাশাপাশি রাতেও তাদের গাড়ি ছাড়ছে, তবে পরিমাণে কম।
Published : 25 Jul 2024, 10:44 PM
সাত ঘণ্টার কারফিউ শিথিলের দ্বিতীয় দিনে ঢাকার সঙ্গে দেশের প্রায় সব বিভাগ, জেলা-উপজেলার দূরপাল্লার বাস চলাচল করেছে, কম হলেও চলছে রাতেও।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মহাখালী, গাবতলী, সায়েদাবাদ টার্মিনালসহ দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যাওয়ার পয়েন্টগুলোতে কাউন্টারে গিয়ে সেসব জায়গায় যাত্রীর চাপ দেখা গেছে।
এনা পরিবহন এবং নাবিল পরিবহনের কাউন্টারের বুকিং সহকারীরা বলেছেন, দিনের পাশাপাশি রাতেও তাদের গাড়ি ছাড়ছে, তবে পরিমাণে কম।
অবশ্য বুধবার থেকেই ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে এবং জেলা-উপজেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশে অনেক বাস চলাচল করেছে বলে তথ্য দিয়ে বুকিং সহকারীরা বলেছেন, বৃহস্পতিবার যাত্রী বেশি হওয়ায় বাসও ছেড়ে গেছে বেশি।
১৫ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অবরোধে দিনের বেলা সারা দেশে বাস চলাচল বিঘ্নিত হয়। ১৬ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত সীমিত সংখ্যায় বাস চলাচল করলেও ১৮ জুলাই শাটডাউন কর্মসূচি ঘিরে পরিস্থিতি আরও সহিংস হয়ে ওঠে। কার্যত ওই দিন থেকে ঢাকার সঙ্গে দূরপাল্লার বাসের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ১৯ জুলাই আসে কারফিউ। সেদিন রাত থেকে দেশের কোনো প্রান্ত থেকে ঢাকার উদ্দেশে বাস ছেড়ে আসেনি। এ অবস্থা ছিল ২৩ জুলাই পর্যন্ত।
২৪ জুলাইয়ে শুরু হয় দূরপাল্লার বাসের চলাচল। এ দিন সাত ঘণ্টা কারফিউ শিথিলের সুযোগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় এবং ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে বাস চলা শুরু হয়।
সকাল ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল বুধ ও বৃহস্পতিবার।
শ্যামলী থেকে উত্তরবঙ্গগামী নাবিল পরিবহনের বুকিং সহকারী ইলিয়াস হোসেন বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দিনের পাশাপাশি রাতেও আমাদের বাস চলছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম।”
আন্দোলনে নজিরবিহীন সহিংসতা ও কারফিউয়ের মধ্যে পাঁচ দিন ছুটির পর বুধবার থেকে অফিস-আদালত, দোকানপাট খুলেছে। প্রয়োজনে ঘর থেকে বেরিয়েছে মানুষ, ফিরেছে কর্মচঞ্চলতা।
এই কয়েক দিনে ঢাকায় এসে ও ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে গিয়ে আটকে পড়া মানুষ বুধবার থেকে দূরপাল্লার বাস পেয়েছে।
১৬ জুলাই পরিবার নিয়ে রাঙ্গামাটি গিয়েছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফারুক হোসেন। ১৯ জুলাই ঢাকায় ফেরার কথা ছিল, টিকেটও কাটা ছিল আগে। তবে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় তারা আটকা পড়েন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে তিনি বলেন, পাঁচ দিন আটকা থাকার পর কারফিউ শিথিলের সুযোগে বুধবার বাস ছাড়তে পারে জানতে পেরে রাঙামাটিতে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে যোগাযোগ করলে তারা নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছিলেন না। শেষপর্যন্ত তিনি টিকেট পান।
রাঙামাটি থেকে বুধরাত বিকালে সায়েদাবাদ টার্মিনালে পৌঁছায় তাদের বহনকারী বাসটি। পরিবার নিয়ে ঢাকায় ফিরতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ফারুক।
রাঙামাটি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পদক মঈন উদ্দিন সেলিম বুধবার বলেছিলেন, ১৯ জুলাই থেকে জেলার বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে প্রায় ৩০০ পর্যটক আটকা পড়েছিলেন, বুধবার নাগাদ যাদের সবাই রাঙামাটি ছেড়ে যে যার গন্তব্যে চলে গেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে মহাখালী টার্মিনালে গিয়ে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী এনা পরিবহনের কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের দীর্ঘলাইন চোখে পড়ে।
সেখানে কথা হয় আবেদা সুলতানা নামে একজনের সঙ্গে। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকুরে আবেদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল ১৯ জুলাই। আন্দোলন আর কারফিউয়ে আটকা পড়েছিলাম। কাল থেকে বাস চলাচল শুরু হওয়ার পর আজ যাচ্ছি।”
কাউন্টারের বুকিং সহকারী রাসেল হোসেন বলেন, “কারফিউ শিথিল হওয়ার পর আজ থেকে যাত্রীদের চাপ বেশি। গতকাল (বুধবার) তেমন চাপ ছিল না।”
সেখানে লাইনে দাঁড়ানো গফরগাঁওয়ের বাসিন্দা নাজমুল হক বলেন, “কিছু অপেক্ষাও দারুণ হয়। এত দিন ধরে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলাম বাড়ি যেতে পারব কিনা। আজ যেতে পারছি, আনন্দ হচ্ছে।”
“কাল যাইনি, ভাবলাম ভিড় বেশি হবে, আজ এসে দেখি আরও বেশি ভিড়,” বলেন নাজমুল।
ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলাচলকারী লাবিবা ক্লাসিক লিমিটেডের কাউন্টারের সামনেও ভিড় দেখা যায়।
সেখানে টিকেট নিতে এসেছিলেন রিয়াজ মাহমুদ। ব্যাংকে চাকরি সূত্রে ঢাকায় থাকা রিয়াজ যাবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৈরতলায়। তিনি বলেন, “ছুটি পেয়েছিলাম আগেই। যেতে পারলাম না পরিস্থিতির জন্য। আজ একটু ভিড় আছে, তবু যেতে পারব আশা করছি।”
শ্যামলী বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা থেকে রংপুরে চলাচল করা নাবিল পরিবহনের কাউন্টারে কথা হয় আরশিল আযিম নামের একজনের সঙ্গে।
পল্লীবিদ্যুতের এই কর্মকর্তা বিরক্ত হয়ে বললেন, “আমি যাব শঠিবাড়ি। এত দিন তো বাস চলল না। মা অসুস্থ, উনাকে নিয়ে আসতে যাচ্ছি। আসলে আন্দোলন হোক আর যাই হোক, ভোগান্তি কিন্তু আমাদের।”
শাট-ডাউন, কারফিউর ক্ষতি পোষাতে সরকারি সহায়তা দাবি
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীদের কমপ্লিট শাট-ডাউন এবং চলমান কারফিউয়ের মধ্যে যান চলাচল না করায় আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন দাবি করে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন এই খাতের পরিবহন শ্রমিকরা।
তারা বলছেন, যারা বেতনে গাড়ি চালান, তারা ট্রিপে যেতে না পারলেও বেতন পাচ্ছেন। তবে যারা ট্রিপের ভিত্তিতে কমিশন পান, তাদের দুরাবস্থা। এই কয়েকদিন এক প্রকার বসেই থাকতে হয়েছে তাদের।
ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জে চলাচল করা সেবা লাইনের চালক জয়নাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই কয়দিনে কোনো ট্রিপ মারতে পারি নাই। ট্যাকাটুকা ভাইঙা খাইছি বইসা। আমরা তো কোনো দোষ করলাম না। তাও ভুগলাম। সরকার আমাদের কিছু আর্থিক সহায়তা দিক।”
তার কথায় সায় দিয়ে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জে চলাচল করা অনন্যা ক্লাসিক পরিবহনের চালকের সহকারী আবদুল করিম বলেন, “একেক সময় একেক দল আন্দোলন করে, আমরা না খাইয়া মরি। কয়দিন গাড়ি চলে নাই। এখন সরকার আমগো হেল্প করুক।”
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলে এখনও তো পরিস্থিতি অ্যাবনরমাল। গতকাল (বুধবার) আমাদের কিছু বাস চলেছে, আজও চলছে।
“কারফিউ কিছু সময়ের জন্য শিথিল আছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব, সরকারের কাছে আমরা কীভাবে কী চাইতে পারি।”