ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
Published : 04 Oct 2024, 08:37 PM
রাজধানীসহ দেশজুড়ে বুধবার থেকে শুরু হওয়া চলমান বৃষ্টি আরও দুইদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নদ-নদীর পানি বাড়ছে।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ মাস জুড়েই মৌসুমি বৃষ্টিপাত হবে এক-দুই দিন বিরতি দিয়ে। তবে, চলমান বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আরও দুই দিন অব্যাহত থাকবে। এরপর কমতে পারে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে।
এর প্রভাবে ঢাকাসহ ৮ বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও-কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
শুক্রবার এক বিশেষ সতর্কবার্তায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হয়েছে।
এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
সে কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইলে দেশের সর্বোচ্চ ২১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এছাড়া ময়মনসিংহে ১৪৯ মিলিমিটার, পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৬ মিলিমিটার, টেকনাফে ২৯ মিলিমিটার, মোংলায় ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত নথিবদ্ধ করা হয়েছে।
শুক্রবার খুলনার কয়রায় দেশের সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নথিবদ্ধ করা হয়েছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অধিকাংশ নদীর পানি বাড়ছে, শেরপুরে বিপৎসীমার উপরে
ময়মনসিংহ বিভাগের ভুগাই-কংস, সোমেশ্বরী ও জিঞ্জিরাম নদীসমূহের পানি বাড়ছে এবং ভুগাই নদী শেরপুর জেলার নাকুয়াগাঁও পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে তথ্য দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
ইতোমধ্যে প্রবল বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে শেরপুরের মহারশি, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর দুকূল উপচে দুই উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
উপজেলা দুইটির গ্রামীণ অধিকাংশ রাস্তাঘাট, বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। অনেক বাড়িঘরে হাটু পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। অসংখ্য পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টাও এসব নদীর পানি বাড়তে পারে শুক্রবার কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর ফলে শেরপুরের ভুগাই নদীর ভাটিতে নেত্রকোণার কংস নদী এবং জামালপুরের জিঞ্জিরাম নদী বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এতে ভুগাই-কংস নদী সংলগ্ন শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণা এবং জিঞ্জিরাম নদী সংলগ্ন জামালপুর জেলার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
এরপরের ২ দিনে নদীগুলোর পানি সমতল কমতে পারে এবং বিপদসীমার নিচে প্রবাহিত হতে পারে।
অন্যদিকে, সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে বুলেটিনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগ ও এর উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা রয়েছে।
যার প্রেক্ষিতে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়তে পারে। তবে এসইব নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। পরবর্তী দুই দিনে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি কমতে পারে।
এছাড়া সিলেট বিভাগের অন্যান্য প্রধান নদীসমূহ-সারিগোয়াইন, যাদুকাটা ও মনু নদীর পানিও বাড়ছে।
অপরদিকে, এই বিভাগের খোয়াই ও ধলাই নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের এই সকল নদীর পানিও বাড়তে পারে, তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। পরবর্তী ২ দিনে দুই নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে বলে বুলেটিনে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, কুমিল্লার গোমতী নদীর পানিও বাড়ছে।
আর চট্টগ্রাম বিভাগের সাঙ্গু, মুহুরী, হালদা, ফেনী ও মাতামুহুরী নদীসমূহের পানি কমছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগ ও এর উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা রয়েছে, যার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিভাগের এসব নদীর পানি বাড়তে পারে।
তবে পানি বাড়লেও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। পরবর্তী ২ দিনে নদীগুলোর পানি কমতে পারে।
লঘুচাপের প্রভাবে শুক্রবার থেকে আগামী তিন দিন বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতে স্বাভাবিকের থেকে কিছুটা অধিক উচ্চতার জোয়ার পরিলক্ষিত হতে পারে।
কেন্দ্রের তথ্য বলছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি বাড়ছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে, আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত এসব নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। পরবর্তী ২ দিন নদীগুলোর পানি কমতে পারে।
এছাড়া, রংপুর বিভাগের ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার ভাটিতে যমুনা নদীর পানিও বাড়ছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী পাঁচ দিন নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে, তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
আর, রাজশাহী বিভাগের গঙ্গা নদীর ও তার ভাটিতেও পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে যা বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি ধীর গতিতে বাড়বে এবং পরবর্তী চার দিন গঙ্গা-পদ্মা উভয় নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
এছাড়া, ঢাকা জেলা এবং এর চারপাশের প্রধান নদীগুলো- বুড়িগঙ্গা, টঙ্গী খাল, তুরাগ ও বালু নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা রয়েছে। এরপর ৫ দিন পর্যন্ত ঢাকা জেলা এবং এর চারপাশের নদীগুলোর পানি ধীর গতিতে বাড়তে পারে। তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।