“দলীয় প্রতীকসহ বা বাদে কোনোটাতেই খুব ভাল কিছু আছে বা ক্ষতিকর কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না,” বলেন তিনি।
Published : 08 Jun 2024, 05:45 PM
টেকসই উন্নয়নের জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, “ডেমোক্রেসি ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ এখানে মতামত দেওয়ার সুযোগ আছে। বিতর্কের সুযোগ আছে। এখানে মন্দ কাজের সমালোচনা করার সুযোগ আছে। অথবা আপনার দৃষ্টিতে মন্দ, তবে জনগণের জন্য কল্যাণ হচ্ছে। তার পরও আপনার দৃষ্টিতে মন্দ; সেটার সমালোচনা করছেন।
“এখানে সুবিধা হলো আমি ভাল কাজই করছি, কিন্তু আপনার সমালোচনা করার কারণে আমি আরও সতর্ক হতে পারি, যাতে কাজটা আরও নিখুঁতভাবে হয়৷ আমাদের সমালোচনা যেমন দরকার আছে, আবার উৎসাহেরও দরকার আছে। ক্ষমতায়নের দরকার আছে, তেমনই জবাবদিহিতারও দরকার আছে।”
শনিবার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে চ্যালেঞ্জ ও নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে বা দলীয় প্রতীক বাদে কোনোটার পক্ষে-বিপক্ষে নই। আমার মনে হয় না, দুইটার কোনোটাতেই খুব ভাল কিছু আছে বা ক্ষতিকর কিছু আছে। প্রতীক দিয়েই নির্বাচন হয়; হয়তো দলীয় প্রতীক দিয়ে হয় বা দলীয় প্রতীক ছাড়া হয়।
“আমাদের দল স্থানীয় নির্বাচনে প্রতীক বাদ দিয়ে দিয়েছে। আর যে নির্বাচন করবে, তাকে তো প্রতীক দেওয়াই হয়। আমাদের আইনটা এমনভাবে করা আছে যে, দলীয় প্রতীকসহ বা দলীয় প্রতীক ছাড়া দুইভাবেই নির্বাচন আয়োজনের সুযোগ আছে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে মাথাপিছু আয় বেড়েছে জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল বলেন, “পাকিস্তানের ২৩ বছর শাসনামলে আমাদের মাথাপিছু আয় কখনো ১৪০ ডলারের উপরে যায়নি। বঙ্গবন্ধু যাত্রা আরম্ভ করেছিলেন ৯৪ ডলার দিয়ে, সাড়ে তিন বছরের মাথায় এটাকে ২৭৭ ডলারে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন, যা পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে দ্বিগুণের কাছাকাছি গিয়েছিল।
“বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠন করে। এর আগে ১৯৯৫ সালে ২১ বছরে মাথাপিছু আয় উন্নীত করতে পেরেছিলাম ৩২৯ ডলারে। মানে ২১ বছরে মাত্র ৫২ ডলার উন্নতি হয়েছে। আর ২০০৯ সাল থেকে আজকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে ২ হাজার ৬৬৬ ডলার উন্নতি হয়েছে এই আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে।”
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, “স্থানীয় সরকার পরিচালনার সিস্টেমটাতে সমম্বয়ের ব্যাপারটা একটু জটিল। জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন বা সিটি করপোরেশন সমন্বয় করে কাজ করবে, সেটার সুযোগ নাই। আর জেলা ও উপজেলা পরিষদ অনেক ক্ষেত্রে জনবিচ্ছিন্ন।
“সেক্ষেত্রে ইউনিয়ন অনেকটাই জনমুখী। আমাদের দেশে স্বাধীনতার পরে প্রথম শুরু হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ, আর এরশাদের সময়ে উপজেলা পরিষদ আসছে।”
দেশের বেশিরভাগ ‘সাধারণ মানুষ’ দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কিন্তু আমি এককভাবে প্রতীকের পক্ষে। প্রতীক মানে দল ইলেকশন করবে।
“এখন অন্য দল নাই বলে এক দলের ভেতরেই দুইজন করতেছে, চারজন করতেছে। কিন্তু দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাটা বেশি জরুরি।”
সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “প্রতীক দেওয়ার মানে হচ্ছে কেন্দ্রের হাতে ক্ষমতা রাখা। প্রতীক দেওয়ার মানে হচ্ছে- যাকে প্রতীক দিলাম, তাকে ভোট দাও। প্রতীক না দিলে প্রচুর লোকের জনসমাগম হয়; নির্বাচন প্রাণবন্ত হয়।
“এটা একটা দলের সুবিধা-অসুবিধার কথা চিন্তা করে প্রতীক উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রতীক দিয়ে লোকাল ইলেকশন করাটা উচিত নয়। লোকাল বডিকে লোকাল বডি অনুযায়ী চলতে দেন। আমি মনে করি প্রতীকের কোনো প্রয়োজন নাই।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য সাঈদ খোকন বলেন, “স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার বিষয়টি একটা চলমান প্রক্রিয়া। পঁচাত্তরের পরে যে স্বৈরশাসনের আবির্ভাব হয়েছিল, তখন মেয়র পদে নির্বাচন হতো না; বরং মনোনয়ন দেওয়া হতো।
“সেই সময়ের একটা ঘটনা- একজন মেয়র মনোনীত হয়ে মেয়রের চেয়ারে বসে আছেন। আরেকজন সামরিক পোশাক পরিহিত একজন এসে হাতে কাগজ ধরিয়ে দিলেন যে তাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং নতুন একজনকে মনোনীত করা হয়েছে।”
সেই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বর্তমানে জনগণের নির্বাচনের মাধ্যমে মেয়র মনোনীত হয়। দেশ এগিয়ে চলছে, আমরা স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এখন সময় এসেছে একটি শক্তিশালী স্থানীয় সরকার গঠন করার।
“দলীয় প্রতীক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে না- এটা প্রধানমন্ত্রীর একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার সুযোগ পায়।”
রিপোর্টার্স ফোরাম অব ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি একারামুল হক সায়েম। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মুখ্য পরিচালক আব্দুল আলীম, সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম।