সংবিধানে সমাজতন্ত্র যোগ বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শন: সৈয়দ মনজুরুল

“তিনি সবসময় বৃহত্তর বৃত্তের পরিসরে কিভাবে যেতে হবে তা নিয়ে চিন্তা করতেন,” বলেন অধ্যাপক মনজুরুল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2023, 06:51 PM
Updated : 18 May 2023, 06:51 PM

সংবিধানের চার মূলনীতিতে সমাজতন্ত্র যোগ করা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বড় দূরদর্শন বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, “আমাদের সংবিধানে সমাজতন্ত্র যোগ করা বঙ্গবন্ধুর একটি বড় দূরদর্শন। পুঁজির শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, পুঁজিবাদের আগ্রাসন যাতে না আসে- সেজন্যই বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্রকে এনেছিলেন।”

বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টি আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু বক্তৃতামালা’র একুশতম পর্বে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, “রাজনীতিবিদের জন্য একটি বিশ্ববীক্ষা থাকা অত্যন্ত আবশ্যিক একটি গুণ৷ আমরা যখন ঘর থেকে বের হয়ে সমাজে যাই, সেখানে আমাদের এক ধরনের দর্শন, গ্রাম থেকে বের হয়ে শহরে গেলে সেখানে অন্য বিশ্বদর্শন; আবার যখন পৃথিবীর বুকে পা রাখব- তখন সেটি আরেকটি বিশ্বদর্শন।

“এই দর্শন সমকেন্দ্রিক বৃত্তের মতো কাজ করে৷ এটি একটি আরেকটিকে নাকচ করে দেয় না৷ এই দর্শন বঙ্গবন্ধুর ভেতর কিভাবে প্রসারিত হয়েছে তা তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লেই বোঝা যায়। তিনি সবসময় বৃহত্তর বৃত্তের পরিসরে কিভাবে যেতে হবে- তা নিয়ে চিন্তা করতেন।”

অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধুর বিশ্ববীক্ষা ও বিশ শতকের দক্ষিণ এশিয়া’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক এবং সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেসের পরিচালক অধ্যাপক আশফাক হোসেন।

তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে অনেক গল্প, প্রবন্ধ, গ্রন্থ ও কবিতা প্রকাশিত হলেও বঙ্গবন্ধুর বিশ্ববীক্ষা নিয়ে কোনো লেখা আমার চোখে পড়েনি। এর পেছনে অবশ্য সঙ্গত কারণও রয়েছে।

“প্রথমত বিষয়টি জটিল এবং এর পরিসরও অনেক ব্যাপক। দ্বিতীয়ত, এজন্য যে গভীরতায় গিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন এবং তার পেছনে যে সময়, অর্থ, পরিশ্রম ও মেধা ব্যয় করা প্রয়োজন তা মনে হয় বর্তমানে ‘স্মার্টফোনে’ জীবন কাটিয়ে দেওয়া দুনিয়ায় খুব কম মানুষেরই রয়েছে “

অধ্যাপক আশফাক বলেন, “বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র থেকে স্বাধীনতা অর্জনের কর্মতৎপরতার মাধ্যমে। এরপর পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাঙালি মুসলিমদের যে ভূমিকা ছিল, সেখানেও তিনি ছিলেন একজন অন্যতম সংগঠক। তারপরের ইতিহাস তো আমাদের সবার জানা। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী বাঙালিদের জন্য প্রথম ও একমাত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেজন্য তিনি আমাদের জাতির পিতা।”

প্রবন্ধের উপর আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্ত্তী বলেন, “বাঙালির প্রাচীন এবং মধ্যযুগের ইতিহাস যদি আমরা সঠিকভাবে না পড়ি, তাহলে বঙ্গবন্ধুর বিশ্ববীক্ষা আমাদের জন্য বোঝা কঠিন হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু কখনও শক্তি প্রয়োগে বিশ্বাসী ছিলেন না, তিনি ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু জয় করতে চেয়েছিলেন।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টির পরিচালক অধ্যাপক ফকরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ফেলো হাসান নিটোল।