বিএনপি-জামায়াত চক্র গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি প্রভূদের সহযোগিতায় ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে বলে মনে করে নির্মূল কমিটি।
Published : 17 Jul 2024, 09:49 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ডেকে তাদের কথা শোনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে যৌথ সভা শেষে বুধবার নির্মূল কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা বলতে চাই, কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশ ঘটলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণ রয়েছে, যারা আপনার সন্তান, আমাদের সন্তান।
“আপনি অতীতে বহুবার নির্দলীয় নাগরিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এবারও অনুরোধ করব আপনি তাদের ডাকুন, কথা শুনুন, আমাদের সন্তানদের কোনোভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের দ্বারা ব্যবহৃত হতে দেবেন না।”
কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জামায়াত-বিএনপি চক্রের অনুপ্রবেশ, রাজাকারদের পক্ষে স্লোগান এবং উদ্ভূত সংঘাতময় পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ মতবিনিময় সভা আয়োজন করে নির্মূল কমিটি। সংগঠনের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে এ সভায় অংশনের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা।
নির্মূল কমিটির সভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, সাধারণ সম্পাদক শহীদসন্তান আসিফ মুনীর সভায় কথা বলেন।
বিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়েছে, সভায় কোটা সংস্কারের ন্যায্যতা, সংক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রীদের আবেগ ও অনুভূতিকে পুঁজি করে তাদের আন্দোলনে স্বাধীনতারিবোধী, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির অনুপ্রবেশ, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করে একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী গণহত্যাকারী, নারী ধর্ষণকারী রাজাকারদের মহিমান্বিত করে স্লোগান দেওয়া, ১৬ জুলাই ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যু এবং আহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
চলমান আন্দোলনে হতাহতের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রয়োজন মন্তব্য করে বিজ্ঞপ্তিতে নির্মূল কমিটির নেতারা বলেছেন, তারা কখনও ছাত্রদের হাতে অস্ত্র দেখতে চান না।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি-জামায়াত চক্র সংঘাত ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিদেশি প্রভূদের সহযোগিতায় ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে বলে মনে করে নির্মূল কমিটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “বিভিন্ন সময়ে ছাত্র ও জনতার বিভিন্ন ন্যায়সঙ্গত ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনে তারা অনুপ্রবেশ করে সেগুলোকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে একাত্তরে পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের পাশাপাশি বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মত ব্যর্থ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানাতে চাইছে।"
কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে যাতে কোনোভাবে দেশের অর্থনীতি ও জনজীবন বিপর্যস্ত করে সরকার পতনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান রেখেছে নির্মূল কমিটি।
অন্যান্যদের মধ্যে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, শহীদসন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল, লেখক ব্লগার মারুফ রসূল, চারুশিল্পী ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী সভায় উপস্থিত ছিলেন।
ইসমাত জাহান, শাহীন উদ্দিন আহমেদ, কেশব রঞ্জন সরকার, এ,বি,এম মাকসুদুল আনাম, কামরুজ্জামান অপু, হারুণ অর রশিদ, লুবনা শারমিন, শেখ শাহনেওয়াজ আলী পরাগ, সাইফ উদ্দিন রুবেল, তপন পালিতসহ অনেকে সভায় অংশ নেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে মঙ্গলবার সারা দেশে কোথাও কোথাও আন্দোলনকারী এবং সরকার দলীয় সংগঠন ও পুলিশের ত্রিমুখী সংর্ঘের মধ্যে ছয়জন নিহত হন। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থীরা হল ছাড়া শুরু করেন।
এর মধ্যেই মঙ্গলবার নিহতদের স্মরণে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বুধবার ঢাকায় গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি পালন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও গায়েবানা জানাজা ও প্রতীকী কফিন মিছিল করার সময় তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়।
বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোটা সংস্কারের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
এরপর রাত পৌনে ৮টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে খুনের দায়ে জড়িতদের বিচার ও সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন' কর্মসূচি ঘোষণা আসে আন্দোলনকারীদের পক্ষে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ তার ফেসইবুক প্রোফাইলে এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। একই বার্তা তিনি সাংবাদিকদের কাছেও পাঠিয়েছেন্।