প্রয়াত চিকিৎসকের ছেলে জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজকে দেহ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে জানানো হয়েছে, কেউ “এই দেহে ছুরি লাগাতে পারবে না।”
Published : 13 Apr 2023, 05:40 PM
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ইচ্ছা অনুযায়ী চিকিৎসার গবেষণার জন্য তার দেহ দান করা হচ্ছে না; তাকে সমাহিতই করা হচ্ছে।
প্রয়াত চিকিৎসকের একমাত্র ছেলে বারিশ চৌধুরী জানিয়েছেন, সাভারে তার বাবার গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রেই হবে তার শেষ শয্যা।
এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ জানিয়ে তিনি বলেছেন, তারা দুটি প্রতিষ্ঠানকে দেহ দানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা ‘রাজি হননি’।
মঙ্গলবার রাতে ৮২ বছর বয়সে মারা যান মুক্তি সংগ্রামী জাফরুল্লাহ চৌধুরী, যিনি বিলাসী জীবন ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। আর স্বাধীনতার পর পাঁচ দশক ধরে স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে গেছেন।
তার মৃত্যুর পর ছোট বোন আলেয়া চৌধুরী পরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য মরদেহ দান করার পক্ষে। তিনি কয়েকবার বলেছেন দেহ দান করতে। আমরা তার কথার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”
তবে বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর পর দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জানাজার আগে পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত জানান ছেলে বারিশ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবার সারা জীবনের ইচ্ছা ছিল যে, তার দেহ দান করা হোক মেডিকেল সায়েন্সের জন্য। আমরাও সন্তান হিসেবে, পরিবারের সদস্য হিসেবে তার এই আশাটা ফুলফিল করতে চেষ্টা করেছিলাম।”
কেন তা পূরণ করা গেল না, সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জাফরুল্লাহর নিজের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজকে প্রস্তাব দিলে সেখান থেকে জানানো হয়েছে, তারা কেউ ‘এই দেহে ছুরি লাগাতে পারবে না’।
“এটা একটা সম্মান থেকেই এই বিষয়টা বলা হয়েছে,” বলেন জাফরুল্লাহর ছেলে।
বারিশ চৌধুরী বলেন, “যখন সম্মান থেকে, ভালোবাসা থেকে আমাদেরকে বলা হচ্ছে যে, কেউ হাত দিতে রাজি না, আমাদের আসলে আর কিছু করা নাই সেটা নিয়ে।”
শুক্রবার সাভারে গণস্বাস্থ্যে কেন্দ্রে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানেই জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে সমাহিত করা হবে বলে জানান তার ছেলে।
পরে সেখানে প্রয়াত চিকিৎসকের ছোট ভাই সাবেক রাষ্ট্রদূত নাজিমুল্লাহ চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা জানাজায় অংশ নেন।
জানাজার পর কফিন অ্যাম্বুলেসের করে নিয়ে যাওয়া হয় ধানমণ্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে। সেখানে আরেক দফা জানাজার পর তা পাঠানো হয় সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে।
শুক্রবার জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত মরদেহ সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে সেখানে। নামাজের পর আরেক দফা জানাজা শেষে সমাহিত করা হবে তাকে।
আরও পড়ুন