এ পর্যন্ত ১১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
Published : 15 Apr 2025, 06:33 PM
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এমন সংস্কার করবে, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে আর কোনো সরকার যেন ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে না পারে, এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এল ডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সঙ্গে বৈঠকে এ প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।
এদিন বিকালে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সঙ্গে বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন।
আলোচনার শুরুতে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির পক্ষে মোশরেফা মিশু বলেন, “২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। ৫৪ বছরে দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি কেউই।
“আমরা দেখেছি, এই সময়ের শাসনকালে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন।”
তিনি বলেন, “২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট বাস্তবায়নে বর্তমান অন্তবর্তী সরকার অনেক কাজ করবে বলে আমরা আশা করি। এনসিসি (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) এমন সংস্কারের জন্য কাজ করবে যেন ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর কোনো সরকার ফ্যাসিস্ট না হয়ে উঠে।
“বাংলাদেশের মানুষকে আর যেন কোনো ফ্যাসিবাদকে দেখতে না হয়। কমিশনের কাছে আমরা এটাই প্রত্যাশা করি।”
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন।
পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। এরপর সেই মতামত ধরে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে সংলাপ করছে কমিশন।
এদিন বিকালের বৈঠকে বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশুর নেতৃত্বে দুই দলের আট সদস্যের প্রতিনিধি দল যৌথভাবে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বসে।
সংলাপে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বৈঠকের শুরুতে বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, “ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নতুন এক পরিস্থিতিতে প্রবেশ করেছি। প্রধান উপদেষ্টা শুরুতে আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, যেসব বিষয় নিয়ে একমত হবে সেসব বিষয় নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমরা আশা করি, এনসিসি তাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কঠিন কাজটি সম্পন্ন করবে।
“প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছিলেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাই এবং এর সঙ্গে সংস্কার বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে। এতে সহসভাপতি হিসেবে রয়েছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ।
কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গত ২০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ইতোমধ্যে ১১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ করেছে কমিশন৷
আগামী ১৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপির সঙ্গে কমিশনের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।