বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মহাপরিকল্পনায় চীনের অর্থায়ন যখন চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায়, ঠিক তার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে তাতে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে ভারত সরকার।
Published : 04 Jul 2024, 04:43 PM
তিস্তা প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের যে কোনো সিদ্ধান্তে চীন ‘খোলা মন নিয়ে’ কাজ করবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে ‘কোনো উত্তেজনা’ তিনি দেখছেন না।
“যেমনটা আমি আগে বলেছি, যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে, সেটাই আমাদের সবার স্বার্থে, আমরা চাই এ প্রকল্পটি দ্রুত শুরু হোক। যেহেতু বাংলাদেশের প্রায় তিন কোটি মানুষের জন্য প্রয়োজন এই প্রকল্প, সুতরাং আমরা চাই প্রকল্পটি দ্রুত শুরু এবং শেষ হোক।”
বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মহাপরিকল্পনায় চীনের অর্থায়ন যখন চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায়, ঠিক তার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে তাতে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে ভারত সরকার।
এর অংশ হিসাবে একটি কারিগরি দল শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে বলে ২২ জুন শেখ হাসিনার সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আসছে ৮-১১ জুলাই বেইজিং সফরের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ভারত সফর থেকে ফিরে এসে সম্প্রতি তিনি বলেছেন, তিস্তা নিয়ে যাদের প্রস্তাব বেশি লাভজনক হবে, সেটাই বাংলাদেশ গ্রহণ করবে।
তবে তিনি এও বলেছেন, “ভারত যদি আমাদের তিস্তা প্রজেক্টটা করে দেয়, তাহলে আমাদের সব সমস্যারই তো সমাধান হয়ে গেল। তো সেটাই আমার জন্য সহজ হল না?”
ভারতের সঙ্গে পানিবন্টন চুক্তি ঝুলে থাকার মধ্যে তিস্তা প্রকল্পও বাস্তবায়ন দীর্ঘসূত্রিতায় যাতে না পড়ে, সেই দাবি জানিয়ে আসছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।
অন্যদিকে, তিস্তার মতো ‘বেশ বড়’ প্রকল্পে ভারত ও চীন উভয় দেশকেই বাংলাদেশ সম্পৃক্ত করতে পারে বলে মনে করছেন কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।
এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেছিলেন, “তারা যেহেতু আমাদেরকে পানি দিচ্ছে না, নতুন করে পানি দেওয়ার আশ্বাস দেয়নি, সুতরাং আমরা আমাদের ভেতরে কী করছি, সেটা আমরা নিজেরা বুঝে দেখব।
“আমরা যদি দেখি যে, এই রকম সুযোগ আছে, যেহেতু প্রকল্পটা অনেক বড়, সেহেতু প্রকল্পের কিছু অংশে ভারতকেও হয়ত অংশীদার হিসাবে নিতে পারি। এটা আমার ধারণা।”
ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন রাজি কি না, এমন প্রশ্নে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সহাস্যে বলেন, “এটা খুব ভালো প্রশ্ন।”
এরপর তিনি বলেন, “আমি শুধু বলতে পারি, আমরা প্রস্তুত এবং আমরা উন্মু্ক্ত। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত দেখব এটা বাংলাদেশের জন্য সহায়ক, চীন খোলামেলা আছে।
“পরবর্তী পদক্ষেপে কীভাবে এগোবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের রয়েছে। বাংলাদেশের যে কোনো সিদ্ধান্তে চীন খোলা মন নিয়ে আছে।”
ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে বাস্তবায়নের বিষয়ে আরেক প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, “এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে বাংলাদেশ।”
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে চীনের অবস্থানের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা চাই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে, অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ভালো সম্পর্ক আছে। এটা আপনাদের ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এমন জাতীয় পররাষ্ট্রনীতি সফলতা।
“আমরা সত্যিকারের সম্পর্ক দেখতে চাই। আমরা চাই, আমাদের দুই দেশের সম্পর্কও একটি সামগ্রিক ভূমিকা রাখুক। অন্য দেশগুলো এটাকে (সম্পর্কটাকে) ইতিবাচকভাবে দেখুক, যাতে সেটা উইন-উইন সহযোগিতা হয় এবং সবপক্ষকে উপকৃত করে।”
ডিকাব সভাপতি নূরুল ইসলাম হাসিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি আশিকুর রহমান অপু বক্তব্য দেন।
তিস্তা প্রকল্প ভারত করলে সব সমস্যারই সমাধান হয়: প্রধানমন্ত্রী
তিস্তা মহাপরিকল্পনায় চীনের পর এবার ভারতের প্রস্তাব
তিস্তার সমাধান 'নিজস্ব পথেই' বাংলাদেশকে করতে হবে: তারিক করিম