ডেঙ্গু রিসার্চ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে চিকিৎসকরাও কাজ করবেন, বলেছেন উপাচার্য।
Published : 05 Aug 2023, 09:53 PM
মৃত্যু ও সংক্রমণের মারাত্মক বিস্তারের মধ্যে এইডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের টিকা দেশে তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে ‘ডেঙ্গুবিরোধী সামাজিক আন্দোলন চাই’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি গবেষণা করে ডেঙ্গুর টিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান।
এজন্য বিএসএমএমইউ এর ভাইরোলজি বিভাগকে দ্রুত কাজ শুরুর আহ্বান জানান তিনি। সভায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে একটি কমিটিও করা হয়েছে।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকার মধ্যে এ রোগের টিকা ব্যবহারের বিষয়ে সরকারও ভাবছে।
মশাবাহিত এ ভাইরাসের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা যায় কি না, তা নিয়ে আগামী ৮ অগাস্ট জাতীয় টিকা সংক্রান্ত কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির (নাইট্যাগ) সভায় আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর টিকা হিসেবে ব্যবহারের জন্য আমেরিকার তৈরি ডেংভেক্সিয়া এবং জাপানের কিউডেঙ্গা কয়েকটি দেশে অনুমোদন পেয়েছে। ভারতও ডেঙ্গুর টিকা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট প্যানাসিয়া বায়োটেক ডেঙ্গুর টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য আবেদন করেছে। বাংলাদেশেও ওই টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা যায় কি না, তা ভেবে দেখছে সরকার বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকার মধ্যে গত এক দিনে আরও ১০ জনের মৃত্যুসহ চলতি বছর প্রাণহানি হয়েছে ৩০৩ জনের, যা এক বছরে সর্বোচ্চ। এর আগে এক বছরে এ ভাইরাসে এত রোগী মারা যাননি। এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৪৯৫ জন রোগী। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৯৬৮ জনে।
বাংলাদেশে এর আগে শুধু ২০১৯ ও ২০২২ সালে এর চেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ এ বছর এখনও তার চূড়ায় ওঠেনি। সে হিসেবে মৃত্যু আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
এ বছর এইডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও ভর্তি রোগী ও মৃত্যুর এই সংখ্যা সামনে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে সতর্ক থাকার কথা বলেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বিএসএমএমইউ এর উপাচার্য বলেন, “আমাদের দেশে সারা বছর ডেঙ্গু নিয়ে কাজ হয় না বলেই আজ এ অবস্থা। স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে যেকোনো কাজ, গবেষণা করার জন্য উৎকৃষ্ট স্থান হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে আমরা ডেঙ্গু রিসার্চ ইনস্টিটিউট গড়ে তুলব। ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরাও কাজ করবেন।”
সভায় বিএসএমএমইউর উপাচার্যকে চেয়ারম্যান ও আবাসিক চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক ডা. তৌফিক আহমেদকে সদস্য সচিব করে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটি-২০২৩ গঠন করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে প্রধান উপদেষ্টা, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেনকে বিশেষ উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন কমিটিতে।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৩০০ ছাড়াল, এক বছরে সর্বোচ্চ
এ বছর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ৬০ হাজার ছাড়াল
ডেঙ্গু: ভয়ঙ্কর জুলাই মৃত্যু নিল ২৫১ জনে, রোগী ছাড়াল ৫১ হাজার