আপিল বিভাগে শুনানি পর্যন্ত হাই কোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা থাকবে।
Published : 03 Dec 2023, 06:41 PM
নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ কল্যাণের সাবেক ১০৬ কর্মীকে মুনাফার অংশ দিতে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছিল, তা বাতিল করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ে স্থিতাবস্থা রেখে শুনানির দিন ঠিক করেছে আপিল বিভাগ।
রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালত আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির দিন ঠিক করে। ওই সময় পর্যন্ত হাই কোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা দেওয়া হয়।
চেম্বার আদালতে গ্রামীণ কল্যাণের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন। ১০৬ কর্মীর পক্ষে শুনানি করেন দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
পরে অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তারা স্থগিতাদেশ চাইতে এসেছিল। শুনানির পর আদালত স্থগিতাদেশ না দিয়ে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন রেখে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। ওই সময় পর্যন্ত হাই কোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা থাকবে।”
গত বৃহস্পতিবার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয় বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের বেঞ্চ।
২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১০৬ জন শ্রমিক বিভিন্ন পদে গ্রামীণ কল্যাণে চাকরি করেছেন। তাদের কেউ অবসরে গেছেন, কেউ চাকরিচ্যুত হয়েছেন। চাকরির পর প্রতিষ্ঠানটির মুনাফার কোনো অংশ তারা পাননি।
কিন্তু ২০২১ সাল থেকে গ্রামীণ কল্যাণের মুনাফার অংশ শ্রমিকদের দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে এই শ্রমিকরা মুনাফার অংশ চেয়ে প্রথমে গ্রামীণ কল্যাণের কর্তৃপক্ষকে উকিল নোটিস দেন।
তাতে সাড়া না পেয়ে পরে গ্রামীণ কল্যাণের সাবেক ১০৬ কর্মী শ্রমিক ২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত কল্যাণ তহবিল ও শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল থেকে মুনাফা পেতে শ্রম আইনের ২৩১ ধারায় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে ব্যাখ্যা চেয়ে মামলা করেন। এর শুনানি নিয়ে গত ৩ এপ্রিল রায় দেয় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল আইন অনুসারে ২০০৬ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সময়ের মুনাফার অংশ দিতে নির্দেশ দেয়।
পরে ওই রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গ্রামীণ কল্যাণের পক্ষে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম মইন উদ্দিন চৌধুরী হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৩০ মে বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেয়। একই সঙ্গে অন্তবর্তী আদেশে ট্রাইব্যুনালের রায়ের ওপর ছয় মাসের স্থিতাবস্থা জারি করা হয়।
শ্রমিকদের মুনাফার অংশ দিতে নির্দেশ দেওয়া শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। স্থিতাবস্থার কারণে ১০৬ শ্রমিকের মুনাফা প্রাপ্তির প্রক্রিয়া আটকে যায়।
পরে ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন শ্রমিকেরা।
শুনানির পর হাই কোর্টের স্থিতাবস্থার আদেশ গত ২২ জুন স্থগিত করে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকীর চেম্বার আদালত। পাশাপাশি আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য গত ১০ জুলাই ধার্য করা হয়।
তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ গত ১০ জুলাই আবেদনটি শোনে। পরে দুই মাসের মধ্যে এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করতে হাই কোর্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
তার ধারাবাহিকতায় গত ৩০ নভেম্বর হাই কোর্ট শ্রমিকদের মুনাফার অংশ দিতে নির্দেশ দিয়ে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় বাতিল করে।
গ্রামীণ কল্যাণ একটি অলাভজনক সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মুহাম্মদ ইউনূস এর চেয়ারম্যান।
গ্রামীণ কল্যাণের মুনাফা: শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিল
গ্রামীণ কল্যাণ: হাই কোর্টের রুল দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ