ঢাকার জুরাইনের এক নারী আক্ষেপ করে বললেন, এই যে নিজের বাড়িতে তার ‘রোহিঙ্গার মত’ থাকা লাগছে, এর কি কোনো সমাধান নাই?
Published : 08 Jun 2024, 08:21 AM
“ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর থেকেই অশান্তিতে দিন পার করছি কয়দিন। বৃষ্টির পানিতে থাকার ঘর, রান্নাঘর, এমনকি টয়লেট– সব ডুবে গিয়েছিল। ওই বৃষ্টির পর তিন-চারদিন পর্যন্ত বিছানা থেকে পা নামাইলেই পানিতে পড়তে হয়েছে। এই কয়টা দিন না ছিল খাওয়া-দাওয়া, না ছিল গোসল। ঘর ডুইবা নিজের বাড়িতেই ভাসমান ছিলাম আমরা।"
প্রখর রোদের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে রান্না করার সময় কথা বলছিলেন ঢাকার পূর্ব জুরাইনের কুসুমবাগ এলাকার নাজনীন আক্তার।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ঝরা বৃষ্টিতে ডুবে যায় জুরাইনের অনেক এলাকা। পরে বিভিন্ন স্থানের পানি সরলেও কোথাও কোথাও এখনো জলাবদ্ধ হয়েই আছে।
নাজনীন আক্তার আক্ষেপ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছিলেন, “এই যে নিজের বাড়িতেও রোহিঙ্গার মত থাকা লাগতেছে, এইটার কি কোনো সমাধান নাই? পানিতে আমার রান্না ঘর তছনছ হইয়া গেছে। একটু স্বস্তিতে এই কয়টা দিন ধরে রান্না করতেও পারি নাই।”
কথা বলার এক পর্যায়ে নবম শ্রেণি-পড়ুয়া ছেলে রাইয়ানকে দিয়ে ওয়াসার পানি দেখালেন। খালি চোখেই সেই পানিতে ময়লা দেখা যাচ্ছিল।
এই পানি দিয়ে সাদা কাপড় ধোয়া যায় না বলে জানালেন নাজনীন।
তার ছেলে রাইয়ান বলে, “পাশের কুসুমবাগ মসজিদ থেকে পানি এনে খেতাম আমরা। ঘূর্ণিঝড়ের সময় থেকেই এই পানিও খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে গেছে। এই পানি খেয়ে কয়েকজনের ডায়রিয়া হইছে। তাই এখন আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে মিষ্টির দোকান এলাকার মসজিদ থেকে পানি আনতে হয়।”
একই এলাকার বাসিন্দা চুনু খান বললেন, “পানি পাশের তিতাস খালে যাওয়ার যে ড্রেন, তা ময়লাভর্তি থাকায় ড্রেন দিয়েও পানি যাচ্ছে না। তাই রাস্তাতেই জমে থাকে পানি। পরে মহল্লার সবাই চাঁদা তুলে পানি নিষ্কাশনের মোটর কিনে রাস্তার পানি সেচে খালে দিচ্ছে।”
পূর্ব জুরাইনের বাসিন্দা নাঈম খান বললেন, “১ থেকে ২ হাজার করে যে যতটা পেরেছে, ততটা চাঁদা দিয়ে মোটর কিনে রাস্তার পানি খালে ফেলছি। অথচ এ কাজটা সিটি করপোরেশনের করার কথা।”
এ এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, “এখন কিছু কিছু রাস্তা আবার এত উঁচু করেছে যে রাস্তার পানি ঘরে ঢোকে। অথচ ২০১৫ সাল থেকেই আমরা বলে আসছি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার।”
রেমালের ছয় দিন পর কুসুমবাগের বিড়ি ফ্যাক্টরি মোড়ে এসে দেখা যায়, বেড়ার মসজিদে যাওয়ার রাস্তায় পানি জমে আছে। এদিক দিয়ে না যেতে পেরে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে বলে প্রায় আধা কিলোমিটার রাস্তা বেশি ঘুরতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
এই সড়কের পাশেই বাড়ি নূর আলমের। তিনি বললেন, “রাস্তার পাশের এই ড্রেন ৮ থেকে ১০ ফিট গভীর। তবু পানি ঠিকঠাকভাবে যায় না। তাই আমরা যে যার মতো করে নিজের দোকান বা বাড়ির সামনে মাটি ও বালি ফেলছি।
“এখন এটি কাঁচা রাস্তা হয়ে আছে। কোথাও কোথাও পানি জমে থাকে। গাড়ি তো দূরের কথা, রিকশাও চলে না। পরিত্যক্ত প্রায় রাস্তার দুইপাশেই অসংখ্য দোকানপাট ও বাড়ি আছে।”
এ রাস্তার বিড়ি ফ্যাক্টরি মোড় থেকে বেড়ার মসজিদ রোডে যাচ্ছিলেন সনিয়া আক্তার ও তার বান্ধবী নিপা রহমান। নতুন এসেছেন তাই এলাকাটা চেনেন না ভালো করে, সেজন্য রিকশা খুঁজছিলেন। রিকশাচালক জানালেন, এ রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় না। পরে তারা রাস্তার পাশের ড্রেনের উপর দিয়ে হাঁটা শুরু করলেন।
ঘূর্ণিঝড়ের পর সপ্তাহখানেক ধরে স্কুলে উপস্থিতি একেবারেই কমে গিয়েছিল বলে জানালেন জুরাইন সরকারি আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শাকিলা নাসরিন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টির পানি আমার স্কুলের ৮০ ভাগ মেয়েদের বাড়ির থাকার ঘরে পর্যন্ত উঠছে। আমার থাকার ঘরও রেহাই পায়নি। ঘরে পানি উঠেছে।
“বৃষ্টি চলে যাওয়ার পরেও নিচে থেকে পানি উঠতেছে আমার বাড়িতে। আর প্রতিদিন আমরা পানি সেচতেছি। শিক্ষার্থীরা এটা নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় আছে।”
‘আন্দোলনেও কাজ করানো যাচ্ছে না’
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বৃষ্টিতে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে তা নতুন অভিজ্ঞতা নয় জুরাইনবাসীর। দীর্ঘদিন ধরে তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্দোলন করে আসছেন।
পূর্ব জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা এসব সমস্যা সমাধানের দাবিতে বারবার অনশন করেছি। কিন্তু প্রশাসনের কেউ কর্ণপাত করছে না। যেন কারোরই দেখার দায়িত্ব নেই।”
এই এলাকার মা মিষ্টান্ন ভান্ডারের কর্মী খলিল মিয়া বলেন, “আগে এখানকার রাস্তায় পানি জমত না। গতবছর থেকে রাস্তায় পানি জমা হওয়া শুরু হইছে। এবার খুব বেশি জমছিল। এটা নিয়ে কথা বলার লোক কম। বলেও লাভ হয় না। প্রশাসন নড়ে না।”
জুরাইনে পানি নিষ্কাশনের বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহুল আমিন বলেন, “ডিএনডি প্রজেক্টের ভিতরে হচ্ছে জুরাইন। কিন্তু ডিএনডির প্রজেক্ট একটা কুয়া। আমরা ডিএনডি প্রজেক্টের একটা কুয়ার মধ্যে বসবাস করি।
“আমাদের পানি টানার চারটি জায়গা আছে, কিন্তু একটু বৃষ্টি হইলেই সেই পানি যায় না। লাইনগুলো অকেজো হয়ে যায়।”
পানি না যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি রাস্তা ও খাল দখল করে মানুষের বাড়ি নির্মাণের কথা বলেন।
জনপ্রতিনিধি রুহুল আমিন বলেন, “ভূমিদস্যুরা রাস্তার উপরে বাড়িঘর করে। এটা নিয়ে পুলিশসহ সবার সাথে কথা বলেও তেমন কাজ হয় নাই। বর্তমান মেয়র বেশকিছু বিল্ডিং ভেঙেছে। কিন্তু এখনও পানি যেদিক দিয়ে যাওয়ার কথা সেখান দিয়ে খুবই অল্প গতিতে যায়। যার কারণে আমরা দুর্ভোগে আছি।
“বিশেষ করে আমি মস্তবড় বিপদের মধ্যে আছি৷ আমার এলাকা নিচু। এর মধ্যে রাস্তার চলমান কাজগুলো বন্ধ হয়ে আছে।”
৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মীর হোসেন মীরু বলছেন, “আগে একসময় এ এলাকায় পানি জমত না। এখানকার পানি নিচু এলাকায় চলে যেত। ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের পরে ৫৮, ৫৯ ও ৬০ নম্বর ওয়ার্ড এগুলোতে ধান ক্ষেত ছিল। তাই আমাদের জুরাইনে পানি জমত না বললেই চলে।
“নিচু এলাকায় বাড়ি-ঘর হওয়ার পর আর আমাদের এলাকা হয়ে গেছে নিচু। আমাদের শ্যামপুর খাল, জিয়া সরণি খাল এবং তিতাস খাল সব উঁচু হয়ে গেছে। ড্রেন আবর্জনায় ভরে গেছে। আমরা রেমালের বৃষ্টির পরদিন ড্রেন থেকে প্রায় দুই ট্রাক ময়লা সরাইছি।”
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেওয়ান আইনুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আরেকজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কোহিনুর আলমের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
ডিএনডি প্রজেক্টের পিডি প্রকৌশলী কোহিনুরকে ফোন দেওয়ার পর সাংবাদিক পরিচয় শুনে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর আর ফোন ধরেননি।
বিষয়টি আইনুল হককে জানালে তিনি ডিএনডি প্রজেক্টের সাবেক পিডি ও প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামানকে ফোন দেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে তিনিও কথা বলতে চাননি।
পানির মাঠ এখন পানির নিচে
জুরাইনের ধনিয়ায় শিয়া মসজিদের পাশে একটি মাঠের নাম পানির মাঠ। এই মাঠের পাশে বসেছিল ১১ বছর বয়সী মেহেদী হাসান ও ১২ বছর বয়সী আব্বাস আলী। তারা পাশেই ব্লু বার্ডস কিডস স্কুলের শিক্ষার্থী। তাদের ক্লাস শুরু হয় সকাল ৭ টা থেকে, আর শেষ হয় দুপুর ১২ টায়।
এরপর থেকে বিকাল পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করে থাকেন- কখন খেলতে পারবে। বিকালে বন্ধুরা সবাই একসঙ্গে হয় ঠিকই, কিন্তু মাঠে কোমর পর্যন্ত পানি থাকায় খেলার সুযোগ পায় না তারা। দনিয়ায় বিকল্প কোনো মাঠও নেই। সে কারণে এখন মোবাইলে গেম খেলে সময় কাটছে তাদের।
পুরো জুরাইন ঘুরে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিংবা কোনো জায়গায় বড় কোনো মাঠ খোঁজে পাওয়া যায়নি। ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনো পরিত্যক্ত জায়গায় মাঠ বানিয়ে সাময়িকভাবে খেলাধুলা করছে শিশুরা। তবে সেই জায়গাও খুব কম। এ এলাকায় অনেক শিশু মাঠের অভাবে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
মুরাদপুরের কুদার বাজার (কুদরত আলী বাজার) সংলগ্ন ক্যাপ্টেন মাঠে খেলছিল আবুল বাদশা, মিরাজ হোসেন, সাইদুল ইসলাম প্রান্তরা। তারা জানাল, ক্যাপ্টেন মাঠে কয়েক বছর পর বাড়ি হয়ে গেলে তাদের আর খেলার জায়গা থাকবে না।
মুরাদপুর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাত বলেন, “আমাদের স্কুলের মাঠ নেই। অল্প একটু জায়গা। আর ক্যাপ্টেন মাঠে মিনি মাঠ বানিয়ে খেলা হয়।
“কিন্তু মানুষ বেশি হওয়ায় গাদাগাদি করে খেলতে হয়। আর এই জায়গার মালিক যখন কাজ ধরবে তখন আমরা যামু কই?”
জুরাইন সরকারি আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শাকিলা নাসরিন বলেন, “জুরাইনে মাঠ তো নাই-ই। অল্প অল্প একটু জায়গা- এটাকে মাঠ বলা যায় না। স্কুলের নীতিমালায় ছিল খেলার মাঠ থাকবে। আমি বিশ্বাস করি, এটা আবশ্যক। কিন্তু জুরাইনের চিত্রই আলাদা। জুরাইনজুড়ে কোথাও কোনো মাঠ দেখি না।
“স্কুল ছাড়াও বাচ্চাদের খেলাধুলারও কোনো জায়গা নাই। খেলার মাঠ নিয়ে মাথা কে ঘামাবে? এখানের মানুষ ঘনঘন বিল্ডিং বানাচ্ছে আর ভাড়াটিয়া তুলতেছে। পুরো এলাকাই একটা অপরিকল্পিত অবস্থায় গড়ে উঠছে। কোথাও যেন একটা গাছও নাই।”
শাকিলা বলেন, “আমি ২০০০ সালের আগে যখন এই স্কুলে যোগদান করি, তখন শিক্ষার্থী ছিল ১২০০-এর উপরে। আর এখন ৩০০ জনও নাই। মানে এখানকার পড়াশোনার মান কোথায় গেছে ভাবা যায়! বিদ্যালয়ে বা আশেপাশে যদি মাঠ না থাকে, খেলাধুলার সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকে- তাহলে শিক্ষার্থীরা যাবে কোথায়?
“কোথাও গিয়ে জুরাইনের পরিচয় দিলে মানুষ নেতিবাচকভাবে দেখে। মনে করে এই এলাকার মানুষ খারাপ, সন্ত্রাসীরা থাকে এখানে। অথচ এ এলাকাটাও একটা সময় ব্যাপক সাজানো গোছানো ছিল।”
গ্যাস সংকট মাত্রাছাড়া
জুরাইনে দিনের বেলা গ্যাসের চাপ কম থাকে, আর রাতের বেলা কিছুটা চাপ পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে দিনের বেলা একবারেই গ্যাস থাকে না। এ নিয়ে বেশ ভোগান্তিতে থাকার কথা জানালেন এলাকাবাসী।
গত শুক্রবার পূর্ব জুরাইনে পানি নিষ্কাশন এবং গ্যাসের চাপ বৃদ্ধির দাবিতে অনশন করেন এলাকার একদল বাসিন্দা।
সিয়াম টি স্টোররের বিক্রেতা যতি আক্তার বলেন, “নানাবিধ নাগরিক অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত। পানির সমস্যা তো আছেই, তবে গ্যাসের সমস্যা সবচেয়ে বড়। রাত ১২টার পরে গ্যাসের কিছু চাপ পাওয়া যায়।
“দিনের বেলা একেবারেই হালকা চাপ। তাই সকালের রান্না রাতে করতে হয়। আমি দুইদিন ধরে ঠিকমতো রান্নাই করি না। দোকানের রুটি খাইয়া জীবন যাইতাছে।”
আরেক বাসিন্দা জহির ইসলাম বলেন, “বছর কয়েক আগে গ্যাসের দুই চুলার মূল্য ৫০০ থেকে ১২৮০ টাকা করলো । কিন্তু গ্যাসের চাপ বাড়লো না। আর ইদানীং তো গ্যাস নাই বললেই চলে। নামমাত্র গ্যাস নিয়া ১২৮০ টাকা দেই মাসে।
“বছরের পর বছর গ্যাস না পেয়েও আমরা বিল দিচ্ছি। এসব দেখতে আর সহ্য হচ্ছে না। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও এ বিষয়ে নজর দেয় না।”
এ বিষয়ে জানতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্র সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওিয়া যায়নি।
ওয়াসার পানির কষ্ট শেষ হবে কবে?
জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল বিশুদ্ধ পানির দাবি নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ দাঁড়িয়েছিলেন ঢাকা ওয়াসার সামনে। বছরের পর বছর পাইপলাইনে নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহের প্রতিবাদে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জুরাইনের পানি দিয়ে বানানো শরবত খাওয়াতে চেয়েছিলেন তিনি।
মিজানুরের প্রতিবাদ সেই সময় আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। এরপর কেটে গেছে পাঁচটি বছর। বদলে গেছে রাজধানীর অনেক এলাকার চেহারা। শুধু বদলায়নি জুরাইনে সরবরাহ করা ওয়াসার পানির গুণমান।
মিষ্টির দোকান মোড়ের মা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বিক্রেতা রানা বলেন, “আমরা হোটেলে খাওয়ার জন্য পানি আনি পাশের মসজিদ থেকে। ওয়াসা যে পানি দেয়, সেই পানি খাওয়া তো দূরের কথা, তা গ্লাস-প্লেট ধোয়া যায় না। সোজা কথা ব্যবহারের অনুপযোগী। ওয়াসার পানি দিয়ে ধুলে পরে পরিষ্কার পানি দিয়ে আবার ধোয়া লাগে।”
স্থানীয়রা বলছেন, ১৯৮০ সালের দিকে সেখানে ওয়াসার পানি সরবরাহ শুরু হয়। নব্বইয়ের দশকে সেই পানি ফুটিয়ে খাওয়া যেত। তবে ২০০০ সালের পর থেকে অবস্থার অবনতি ঘটে, তখন ওয়াসার পানি দিয়ে অন্য কার্যক্রম চালানো গেলেও খাওয়া যেত না। আর গত এক যুগ আগে থেকে পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিন দাবি করেন, আগের চেয়ে এখন পানির মান ভাল।
পরে অবশ্য তিনি বলেন, “এ এলাকার পানি সরবরাহের লাইন বহুত বছর আগের। লাইনগুলো রাস্তা থেকে ১৫ থেকে ২০ ফুট নিচে। বিভিন্ন স্থানে পাইপ ছিদ্র হয়ে গেছে, যেখান দিয়ে নোংরা পানি ঢুকে পড়ছে। এছাড়াও মানুষ সেখানে অবৈধ কানেকশন নিছে ৷
“একটা পাম্প বন্ধ হইলে মানুষ মনে করে ১২ ঘণ্টায়ও পানি পায় না। সরু রাস্তায় ২০ ফুট নিচে গিয়ে কাজ করা যায় না। আর গেলে পাশের ভবন ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।"
সহিদ উদ্দিন বলেন, ঢাকা শহরে পানির লাইন প্রতিস্থাপন প্রকল্পের আওতায় জুরাইন-মুরাদপুরেও নতুন লাইন বসানোর কথা ছিল। লাইন বসাতে সড়ক খননের জন্য সিটি করপোরেশনের অনুমতি প্রয়োজন হয়।
“দুইটা বছর আমরা ঘুরছি অনুমতির জন্য, সে কারণেই পানির লাইন বসাতে দেরি। এখন অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে। তবে যেগুলো নতুন রাস্তা, সেগুলোর অনুমতি দেয় না। তাই কাজ করতে দেরি হচ্ছে।”