“পুরো বিষয়টা কমিটি দেখবে, টাইম লাইনের বিষয়টা তারা ঠিক করবে,” কমিটির নাম ঘোষণা করে বলেন তথ্য উপদেষ্টা।
Published : 02 Nov 2024, 08:37 PM
লেখক ও গবেষক এবাদুর রহমানকে আহ্বায়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলমকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের’ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, যেটি গণভবনকে যাদুঘরে রূপান্তরের কাজ করবে।
শনিবার গণভবনের গেইটে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোঃ নাহিদ ইসলাম এ কমিটির ১৭ সদস্যের নাম তুলে ধরেন।
কমিটির অন্যান্য সদস্য হলেন- লেখক ও মানবাধিকার কর্মী মুসতাইন বিল্লাহ; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক জাহিদ সবুজ; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক নুরুল মোমেন ভূঁইয়া; আলোকচিত্রী, শিক্ষক ও শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক তানজিম ওয়াহাব; লেখক ও গবেষক সহুল আহমেদ মুন্না; স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম; বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক; আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি; গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী; স্থাপত্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান স্থপতি মো. আসিফুর রহমান ভূঁইয়া; ইন্সটিটিউট অভ্ আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের সভাপতি বা উপযুক্ত প্রতিনিধি; নকশাবিদ আর্কিটেক্টসের লিড আর্কিটেক্ট বায়েজিদ মাহবুব খন্দকার এবং ডিজাইন ওয়ার্কস গ্রুপের আর্কিটেক্ট তানজিম হাসান সেলিম।
এছাড়া কমিটিতে এক বা দুজন ছাত্র প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে তিনি জানান।
কমিটির আহ্বায়ক এবাদুর রহমান কিউরেটর ও চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজও করেন। এ কমিটির যুগ্ম আহ্ববায়ক মাহফুজ আলম ও সদস্য মুসতাইন বিল্লাহ অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে বিদ্যমান সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশনে সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
মাহফুজ বলেন, চলতি সপ্তাহে নবগঠিত কমিটি কাজ শুরু করতে পারে।
শনিবার গণভবন ঘুরে দেখার সময় উপদেষ্টা নাহিদের সঙ্গে এবাদুর ও মাহফুজ ছিলেন।
জাদুঘর রূপান্তর কাজের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে নাহিদ ইসলাম বলেন, “পুরো বিষয়টা কমিটি দেখবে, টাইম লাইনের বিষয়টা তারা ঠিক করবে। তখন আপনারা জানতে পারবেন।”
জাতীয় সংসদের উত্তর কোণে শেরেবাংলা নগরের প্রাসাদোপম গণভবন নামের বাড়িটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন ছিল।
প্রবল গণআন্দোলন ও জনরোষের মুখে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার মুহূর্তে, ৫ অগাস্ট হাজার হাজার বিক্ষোভকারী গণভবনে প্রবেশ করে সেটি লণ্ডভণ্ড করে।
এরপর গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে’ রূপান্তরে উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, এটি গবেষণার ক্ষেত্রও হতে পারে।
“জুলাই বিপ্লবে সারা দেশের স্মৃতিগুলো এখানে (গণভবন) জাদুঘরের বিভিন্ন জায়গায় স্মৃতি হিসেবে রাখা হবে। এছাড়া গত ১৬ বছরে যে নিপীড়নের স্মৃতি রয়েছে, আপনারা ইতোমধ্যে শুনেছেন আয়নাঘরের একটা রেপ্লিকা করার কথা ভাবা হচ্ছে।
“সেই সকল নিপীড়নের চিহ্ন এবং বিজয়ের চিহ্ন এখানে জড়ো করা হবে। এখানে শুধু অনেকগুলো স্মৃতিকে ধারণ করা নয়, বরং আমাদের একটি গবেষণার ক্ষেত্রও হতে পারে।”
স্মৃতি জাদুঘরের কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণার পর উপদেষ্টা বলেন, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে যে নিপীড়নের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে, সেগুলো ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে’ সংরক্ষণ করা হবে। এর পাশাপাশি এ জাদুঘরে ছাত্র-জনতার বিজয়ের স্মৃতিচিহ্নও সংরক্ষণ করা হবে। জাদুঘরে ‘আয়নাঘর’ এর একটি প্রতিরূপ (রেপ্লিকা) তৈরির কথাও ভাবা হচ্ছে। স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের পাশাপাশি গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবেও এই জাদুঘরকে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
তার আশা, ছাত্র-জনতার বিজয়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে জনগণ এই জাদুঘরকে ধারণ করবে।
উপদেষ্টার সঙ্গে গণভবন ঘুরে দেখার পর সাংবাদিকদের মাহফুজ আলম বলেন, বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের মানবিক মর্যাদা রক্ষার্থে গণভবনে প্রবেশ করে ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকারপ্রধানের দম্ভ ভেঙে দিয়েছে। গত ১৬ বছরে এই গণভবন বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ-যাতনার জায়গায় পরিণত হয়েছিল। আবার এই গণভবনে জনগণের বিজয়ের স্মৃতিচিহ্নও রয়েছে।
“ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের বিজয়ের চিহ্নও এই জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। এই জাদুঘর শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, সারাবিশ্বের মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।”
আরও পড়ুন:
জুলাই স্মৃতি জাদুঘর গবেষণার ক্ষেত্রও হতে পারে: নাহিদ
গণভবন জাদুঘরে থাকছে 'আয়নাঘরের' প্রতিরূপ