আশুরা উপলক্ষে ছুটির দিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম দেখা গেছে, ছিল না হর্নের অত্যাচার বা মানুষের ভিড়।
Published : 17 Jul 2024, 04:41 PM
দুই সপ্তাহ ধরে চলা কোটা সংস্কার আন্দোলন আর সংঘাতে বিপর্যস্ত ঢাকা শহর বুধবার যেন একটু বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পেল সরকারি ছুটির দিনে।
আশুরা উপলক্ষে ছুটির দিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম দেখা গেছে, ছিল না হর্নের অত্যাচার বা মানুষের ভিড়।
সকালে জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষদের বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে রাস্তায়। আবার যাত্রীর অভাবে বাসগুলোকে অন্য সময়ের তুলনায় বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে স্টপেজগুলোতে।
সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি একেবারে কম, তবে বাইক ও অটোরিকশা চলেছে। রাজধানীর প্রবেশমুখে যানজটের ঝক্কি ছাড়াই প্রবেশ করেছে দূরপাল্লার বাস।
দক্ষিণাঞ্চলগামী বাস ছেড়ে যাওয়ার স্থান সায়দাবাদ টার্মিনাল ও উত্তরের দিকে চলাচলকারী মহাখালী বাস টার্মিনালেও যাত্রী উপস্থিতি তুলনামূলক কম দেখা গেছে।
যাত্রী তুলতে হেলপারদের ডাকাডাকি ছিল রাজধানীর মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ি, সায়দাবাদ, গুলিস্তান, পল্টন, মৎস্যভবন, মগবাজার, সাতরাস্তা ও মহাখালী এলাকায়।
ফাঁকা সড়কের কয়েকটি মোড়ে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতির পাশাপাশি, টহল পুলিশের মহড়া দেখা গেছে। যানবাহন ও পথচারীদের থামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছন তারা। ফার্ম গেইট এবং পুরানা পল্টন এলাকায় রায়টকার ও জলকামান দেখা গেছে।
জরুরি না হলে বের হতে দিত না পরিবার
সকাল সাড়ে ৭টায় রাজধানীর রায়ের বাগ এলাকা থেকে তেজগাঁওয়ের উদ্দেশ বের হওয়া মোহাম্মদ শাকিল হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গোডাউনের চাবি আমার জিম্মায় থাকে। কোম্পানির মাল (পণ্য) জরুরি ডেলিভারি যাবে, এজন্য বের হইছি। ঢাকার যা অবস্থা দেখলাম গতকাল, জরুরি না হলে বের হতে দিত না পরিবার।’’
নারায়ণগঞ্জের গাউসিয়া-গুলিস্তান রুটে চলাচলকারী গ্লোরি এন্টারপ্রাইজ বাসের চালক সোহাগ মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাস্তা এক্কেবারে ফাঁকা। কোনো জ্যাম নাই। একটানে চইলা আইছি।’’
পোস্তগোলা থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে গাজীপুর রুটে চলাচলকারী অনাবিল পরিবহনের চালকের সহকারী আব্দুল হান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাত্রী কম, তাই পোস্তগোলা আজ যাই নাই। যাত্রাবাড়ী থেকেই গাড়ি ঘুরাইছি, আবার গাজিপুর ফিরুম।’’
আব্দুল হান্নান বলেন, “রাস্তা তো ফাঁকা। কোনো সিগন্যালে খাড়ানো লাগেনি। অন্যদিন সকাল সকাল অনেক যাত্রী থাকে। আইজ তো অফিস নাই-আবার গণ্ডগোল আছিল, তাই মানুষও কম।”
সায়দাবাদ টার্মিনালেও যাত্রীর চাপ খুব একটা দেখা যায়নি। ঢাকার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে বলাকা পরিবহনের বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিল।
বাসের চালক ও সহকারীরা সড়কের পাশে ফুটপাতে গল্প করছেন, কারোর হাতে ছিল চায়ের কাপ। এর মধ্যে হেলপাররা গাড়িতে ওঠার জন্য যাত্রীদের ডাকাডাকিও করছিলেন।
টিকাটুলির পাশে ‘রাজধানী মার্কেট’ এলাকায় পুলিশের একটি দল বাস, অটোরিকশা থামিয়ে তল্লাশি চালান।
অটোরিকশার যাত্রী নামিয়ে তল্লাশি শেষে দলটির নেতৃত্বে থাকা সহকারী পুলিশ পরিদর্শক এ এস আই আসাদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা রুটিন চেক করছি। টার্মিনাল এলাকাতো তাই বেশি সতর্ক থাকতে হয়। গতকালকের পরিস্থিতিও মাথায় রাখা হচ্ছে।’’
একই ধরনের ঢিলেঢালা চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তানেও। সাভার, গাজীপুর, নবাবগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালসহ অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটের বাসের চলাচল শুরু হয় এখান থেকে। বাস ও নিয়মিত যাত্রী কম থাকায় এসব জায়গায় তেমন ভিড় ছিল না।
পুরান পল্টন মোড়ে পুলিশের সতর্ক উপস্থিতি ছিল। এসময় রায়টকার অনবরত চক্কর দিচ্ছিল পল্টন-মতিঝিল মোড়ে। ছিল জলকামানও।
বেলা সাড়ে ৯টায় মগবাজার মোড় থেকে শিয়া মুসলমানরা আশুরা উপলক্ষে শোক মিছিল বের করে। ওই সময় ওই সড়কের এক পাশে চলাচল সাময়িক সময়ের জন্য সীমিত হয়ে যায়। শোকের মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের পরনে কালো পোশাক, মাথায় কালো ফেট্টি, কারও হাতে আবার ঝালর দেওয়া লাল, কালো, সোনালি রঙের ঝাণ্ডা দেখা গেছে।
মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আশুরার আরেকটি মিছিল ফার্মগেইটে এসে জড়ো হলে ওই এলাকায় ঘণ্টাখানেকট যানজট তৈরি হয়। ওই মিছিল শেষ হয় এলেনবাড়িতে গিয়ে।
চাপ নেই মহাখালী টার্মিনালেও
ঢাকার ব্যস্ততম মহাখালী টার্মিনাল এলাকার চারদিকেই পুলিশ পাহারা দেখা যায়।
ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী এনা পরিবহনের মাহখালী বাস টার্মিনালের কাউন্টার ব্যবস্থাপক পলাশ চন্দ্র দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘৩৪টা বাস ছাড়ছি সকাল ১০টা পর্যন্ত। বাস ভরলেই গেছে। বাড়তি চাপ নাই, যে যার মত আসছে। বাসের সমস্যা নাই।”
ছুটির দিনে রাজধানী ছেড়ে অনেকেই কাছাকাছি এলাকায় যান। বুধবার সরকারি ছুটি, শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। মাঝের একদিন বৃহস্পতিবার অনেকেই ছুটি নিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন।
তাই সকালে যাত্রী পেয়ে বাস ভরতে সময় লাগেনি বুধবার জানিয়ে পলাশ চন্দ্র বলেন, “বাড়তি কোনো দাম রাখিনি টিকেটে। যাত্রী পেলেই বাস ছেড়ে দিয়েছি আমরা।”
ঢাকা থেকে পুত্রবধূ ও দুই নাতি নিয়ে ময়মনসিংহ যেতে মহাখালি টার্মিনালে এসেছেন খায়রুল হোসেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গ্রামে যেতে চাইছে কয়েক দিন ধরে বাসার সবাই।
স্কুল তো বন্ধ হল, তাই নাতিদের নিয়ে চার দিনের জন্য গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ যাচ্ছি। ছেলেরা থাকবে ঢাকায়, তাদের ব্যবসা আছে। গণ্ডগোলের সময়ে দোকান-পাট তো দেখে রাখতে হবে। তাই তারা ঢাকায় থাকতে চাচ্ছেন।”
গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে মাত্র সোয়া এক ঘণ্টায় মহাখালী টার্মিনাল এলাকায় আসা গাজীপুর-সাইনবোর্ড রুটে চলাচল করা মনজিল পরিবহনের বাসের চালক মোহাম্মদ সোহেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তো লোকাল যাত্রী টানি না (স্বল্প দূরত্বের যাত্রী নেওয়া হয় না)। তাই খাড়ায়া থাকি না, যাত্রী পাইলে লই, না পাইলে যাইগা।’’
এভাবে ফাঁকা সড়কে কম সময়ে টঙ্গী থেকে সাতরাস্তা মোড়ে আসার কথা জানিয়েছেন আজমেরি গ্লোরি পরিবহনের সহকারী জুলহাস সিকদারও।