বিএনপিকে ভোটে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের শরণ নেওয়ার খবর নাকচ করেছেন মোমেন।
Published : 16 Apr 2023, 11:25 PM
নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের কাছে ‘নালিশ’ করে কোনো লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে রাজনীতিকদের বৈঠকে প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “আমার মনে হয়, এগুলো খুব দুঃখজনক।
“উনাদের (বিএনপি) বরং তৃণমূলের লোকের কাছে, যারা ভোটার- তাদের কাছে যাওয়া দরকার। বিদেশিদের কাছে নালিশ করে খুব লাভ হবে না। কারণ বিদেশিরা তো ভোট দেবে না… ভোট দেবে বাঙালিরা।”
রোববার ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠকের সূত্র ধরে এ দিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
তৃণমূলের মানুষদের কাছে যাওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি সবসময় বলি, আমাদেরও তৃণমূলের ভোটারদের কাছে যেতে হবে। এবং আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে যাতে দেশের মানুষের মঙ্গল করতে পারি।
“মানুষের সাথে কথা বলে বুঝতে হবে, অনেক উন্নয়ন হচ্ছে, আবার কোথাও কোথাও অসুবিধা আছে। তৃণমূলের লোকের সাথে আলাপ করলে, তারা বলবে এখানে খারাপ, এখানে খারাপ।”
রোববার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসভবনে গিয়ে বৈঠক করে।
এর আগে গত মাসের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে গিয়েছিলেন।
এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করছে এবং বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে।
এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। বৈঠকের আলোচনার বিভিন্ন দিক উঠে আসে তার বক্তব্যে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “না, কোনো আলোচনা হয়নি …. তত্ত্বাবধায়ক এসব নিয়ে।”
ব্লিংকেন কী বক্তব্য দিয়েছেন, তা উদ্ধৃত করতে গিয়ে মোমেন বলেন, “তোমাদের দেশের আইনে তোমাদের নির্বাচন হবে। তোমরা এত মিরাকল দেশ, অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে এক নম্বর দেশ, এত ভালো করেছ তোমরা! সুতরাং আমরা আশা করব, তোমরা নির্বাচনে একটা ম্যাজিক দেখাবে। নির্বাচন এমন ভালো করবা, যাতে আমরা দুনিয়ার কাছে বলতে পারি, এটা বাংলাদেশ।”
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘না’।
নির্বাচন নিয়ে সর্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র চায় একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরাও চাই। এখানে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। আমি সহযোগিতা চেয়েছি। আমি বলেছি, সুষ্ঠু নির্বাচন সরকার একা করতে পারবে না।
“নির্বাচন কমিশন একা করলে হবে না। সব দল ও মতের লোকের আন্তরিকতা থাকতে হবে। তোমরা এসব ব্যাপারে সাহায্য কর।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, “আমরা বলেছি, গণমাধ্যমে স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার জন্য ডিএসএ নয়। এটা তৈরি করা হয়েছে দুটি কারণে। একটি হচ্ছে, কেউ ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যাতে না করতে পারে।
“আরেকটি হচ্ছে বিনা কারণে কোনো ব্যক্তি বিশেষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে, মিথ্যা প্রচারণা করে অসম্মান করা। সে বেচারা রেসপন্ড করতে পারে না, এই জন্য। সব দেশে এ ধরনের আইন আছে। তবে, কোথাও কোথাও প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটু বেশি যাচ্ছে, সেটা আমরা রেকটিফাই করব।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কেউ কেউ তাদেরকে (যুক্তরাষ্ট্রকে) বলেছেন যে, আমাদের বিরোধী দল মিটিং করতে পারে না, কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না, করতে গেলে তাদের জেলে নিয়ে যায়। আমরা তো রাজনৈতিক কারণে জেলে নিই না, কোনো অপরাধ করলে জেলে নিই।”
এ বিষয়ে ওয়াশিংটনের কাছে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের ব্যাখ্যা দিয়েছি। আমি মনে করি, তারা এটাতে খুব খুশি এবং শুধু যেটা চায়, খামোখা যেন কাউকে হয়রানি না করা হয়।”
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আলাপ হওয়ার কথা জানিয়ে মোমেন বলেন, “বলেছি, আমাদের দেশে ১২৫১টি দৈনিক পত্রিকা বের হয়। তোমার দেশ এত বড় দেশ, মাত্র ১২৭৯টা বের হয়। সুতরাং আমরা মোটামুটি তোমাদের কাছাকাছি আছি।
“আমরা হলাম সেই জাতি- যারা গণতন্ত্র, ন্যায়বিচারের জন্য এবং গণমাধ্যম ও ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছি। যুদ্ধ করেছি, রক্ত দিয়েছি। সুতরাং আমাদেরকে নতুন করে এটা শেখানোর প্রয়োজন নাই।”