খতনার জন্য অজ্ঞান করা হয়েছিল শিশু আয়ানকে, সংজ্ঞা না ফেরায় নেওয়া হয়েছিল আইসিইউতে। এক সপ্তাহ পর তার মৃত্যু হয়।
Published : 11 Jan 2024, 03:04 PM
ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল কোনো নিবন্ধন ছাড়াই চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, ওই মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমুহ) ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ইউনাইটেড মেডিকেলে খতনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি করেছে। সেই কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই তারা ব্যবস্থা নেবেন।
পাঁচ বছর বয়সী আয়ানকে খতনা করানোর জন্য গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার সাঁতারকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল তার পরিবার। অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পর আর জ্ঞান ফেরেনি তার।
পরে তাকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। গত ৭ জানুয়ারি সেখানেই মৃত্যু হয় শিশুটির।
আয়ানের বাবা শামীম আহামেদ ইতোমধ্যে বাড্ডা থানায় মামলা করেছেন। ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট সাইদ সাব্বির আহমেদ, সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তাসনুভা মাহজাবিন,অজ্ঞাতনামা পরিচালকসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে সেখানে।
ওই দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারসহ ছয় দফা বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে মানববন্ধন করেন আয়ানের স্বজনরা।
অধিদপ্তরের পরিচালক আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ নিবন্ধনের আবেদন করেছিল। কিন্তু সেই আবেদন ত্রুটিযুক্ত হওয়ায় তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
“এ অবস্থায় তাদেরকে আবারও যথাযথভাবে আবেদন করতে হবে। কিন্তু এখন যেহেতু নিবন্ধন নেই, তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালানোর কোনো সুযোগ নেই।”
মইনুল আহসান বলেন, আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্বঃপ্রণোদিত হয়ে একটি তদন্ত কমিটি করেছে। ১৮ জানুয়ারির মধ্যে কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।
“যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন, তাই আমরা এই মুহূর্তে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলে অবশ্যই আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনাইটেড হাসপাতালের পাবলিক রিলেশন্স ম্যানেজার আরিফুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "যথাযথ নিয়ম মেনে আমাদের মূল প্রতিষ্ঠান 'ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড' এর নামে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। বর্তমানে সেটি প্রক্রিয়াধীন। আর মেডিকেল কলেজটি চালুর পরই সেখানে চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু হয়েছে।"
তিনি বলেন, “নিবন্ধনের জন্য করা আমাদের আবেদনটি যে ত্রুটিযুক্ত এ বিষয়ে কোনো চিঠি বা নোটিস আমাদের দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ত্রুটি থাকলে সেটা আমরা ঠিক করব। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাদের রেগুলেটরি অথোরিটি, তারা যে ইনস্ট্রাকশন দেবে আমরা অবশ্যই তা মেনে চলব।”
আয়ানের বাবার করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, খতনা করানোর জন্য আয়ানকে গত ৩১ ডিসেম্বর সকালে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে নেওয়ার পর তাকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। আয়ানের স্বজনদের ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করতে বলা হয়।
এর ঘণ্টা খানেক বাদে আরো চিকিৎসক ‘উদ্বেগ নিয়ে’ অস্ত্রোপচার কক্ষে প্রবেশ ও বের হতে থাকে দাবি করে মামলায় বলা হয়, তখন বাদী ও পরিবারের সদস্যরা অস্ত্রোপচার কক্ষে প্রবেশ করে দেখেন, আয়ানের জ্ঞান ফেরেনি। চিকিৎসকরা তার বুকে চাপ দিচ্ছেন।
শিশুটির বাবা এজাহারে বলেছেন, একপর্যায়ে আয়ানকে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল থেকে গুলশানের ইউনাইটেড হসপিটালে নেয় কর্তৃপক্ষ। সেখানকার আইসিউইতে রাখা হয় তাকে। আয়ানের পরিবার তাকে অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলেও ইউনাইটেড হসপিটাল কর্তৃপক্ষ তা করতে দেয়নি।
মামলায় বলা হয়, এক সপ্তাহ বাদে রোববার রাত ১১টা ২০ মিনিটে আয়ানকে মৃত ঘোষণা করে ইউনাইটেড হসপিটাল। এরপর চিকিৎসা বাবদ পৌনে ছয় লাখ টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়।
তখন শামীম বিষয়টি ফোন করে বাড্ডা থানাকে জানান। পুলিশ গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য আয়ানের মৃতদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
চিকিৎসকদের অবহেলায় আয়ানের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছে তার পরিবার।
আয়ানের বাবা শামীম আহামেদ মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের অনুমতি ছাড়া আমার ছেলেকে পুরোপুরি অজ্ঞান করা হয়েছে। এছাড়া তার চিকিৎসায় অবহেলা করেছেন চিকিৎসকরা। এজন্য আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।”
শিশু আয়ানের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে এদিনই রিট করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। জনস্বার্থে করা এই আবেদনে শিশুটির পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করা হয়েছে।
আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা আমলে নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বলেছে, চিকিৎসকের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে কারও মৃত্যু বা অন্য কোনো ধরনের ক্ষতি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এ ঘটনার তদন্ত করে আগামী ১২ জানুয়ারির মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে মানবাধিকার কমিশন।
পুরনো খবর:
ইউনাইটেড মেডিকেলের বিরুদ্ধে আয়ানের বাবার মামলা
শিশু আয়ানের মৃত্যু: ১২ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন চায় মানবাধিকার কমিশন