বইমেলায় জঙ্গি হামলার কোনো হুমকি নেই: ডিএমপি কমিশনার

“এখানে নাশকতা ও জঙ্গি তৎপরতার ঘটনা অতীত ঘটেছে। এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে মাথায় রেখে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে,” বলেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2024, 08:48 AM
Updated : 31 Jan 2024, 08:48 AM

অমর একুশে বইমেলা ঘিরে জঙ্গি হামলার কোনো হুমকি না থাকলেও সব দিক মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান।

তিনি বলেছেন, "বই মেলা অসাম্প্রদায়িক আয়োজন। এই আয়োজনকে বিভিন্ন সময় হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। এখানে নাশকতা ও জঙ্গি তৎপরতার ঘটনা অতীত ঘটেছে। এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে মাথায় রেখে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই।"

বুধবার সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একুশে বইমেলার নিরাপত্তা প্রস্তুতি ঘুরে দেখার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বিকালে মাসব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করবেন।  

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে লেখক হুমায়ুন আজাদকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়। কয়েক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর ওই বছর অগাস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। পরে ১২ অগাস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

এরপর ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে জঙ্গি হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ রায়। চাপাতির আঘাতে আঙুল হারান তার স্ত্রী।

২০২৩ সালে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের নামে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদাকে উড়োচিঠি দিয়ে বোমা হামলার হুমকি দেওয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো অঘটন ছাড়াই শেষ হয় মেলা।

এবার তেমন কিছুর আশঙ্কা করছেন না জানিয়ে পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, “বইমেলায় ডিএমপির পক্ষ থেকে ব্যপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলায় একটি পুলিশ কন্ট্রোলরুম বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে মেলা ও এর আশপাশ পর্যবেক্ষণ করা হবে।

“নিয়মিত গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি মেলায় প্রবেশপথে কয়েক ধাপে নিরাপত্তা তল্লাশি করা হবে। মেলার ভেতরে বাইরে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ওয়াচ টাওয়ারসহ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

বিভিন্ন সময় মেলায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে বিভিন্ন বই নিয়ে আপত্তি তুলেছে পুলিশ। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “এমন কোনো লেখা বা বিষয় পাঠকের যদি নজরে আসে বা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় এবং সেটি নিয়ে যদি কোনো সমালোচনা হয়, তখন পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করা ও প্রয়োজন হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি আছে।”

তিনি বলেন, এবারের মেলায় বিশেষ একটি সুবিধা যুক্ত হয়েছে। মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন মেলার গাঁ ঘেষে। তাই দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধা বাড়বে। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে। তাতে দর্শনার্থীদের  মেলায় প্রবেশ সহজ হবে।

'পড় বই, গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।' এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৪।

ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না।

ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় 'শিশুপ্রহর' থাকবে।

বইমেলার প্রবেশ ও প্রস্থানপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকায় তিন শতাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব ও আনসার সদস্যরা মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।