ছাত্র শিবিরের সঙ্গেও রাফাত সাদিকের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে দাবি সিটিটিসির।
Published : 10 Nov 2022, 09:48 PM
জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. শফিকুর রহমানের ছেলে রাফাত সাদিক সাইফুল্লাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ বলছে, শিবিরের এ সাবেক কর্মীর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার পেছনে জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক নির্দেশনা রয়েছে কি না তা যাচাই করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
রাফাত সাদিক সম্প্রতি সিলেটের রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্নি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছিলেন, যিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদে নাম আসায় গত বুধবার জামায়াত আমীরের ছেলে রাফাতকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে তাকে ঢাকায় এনে যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তাকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে দিয়েছে।
সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান জানান, নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে এ বছর জানুয়ারিতে ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’ নাম নিয়ে কাজ শুরু করে নিষিদ্ধ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। এ সংগঠনের সঙ্গে রাফাতের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে।
তবে এর আগে রাফাত সিলেট অঞ্চলে জঙ্গী সংগঠনের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে কাজ শুরু করে বলে দাবি তার।
সিটিটিসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আগে রাফাত নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ছাত্র শিবিরের সঙ্গেও তার সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে সিটিটিসি’র জিজ্ঞাসাবাদে রাফাত জানিয়েছে।
তার বাবা যে জামায়াতে ইসলামীর আমীর এটা তারা পরে জেনেছেন বলে দাবি তার।
“তবে যেহেতু তার বাবা জামায়াতের আমীর আর সে শিবির করত, সেহেতু তার জঙ্গি হওয়ার পেছনে জামায়াতে ইসলামীর কোনো নির্দেশনা আছে কি না তা আমরা দেখব,” বলেন তিনি।
সিটিটিসি প্রধান জানান, সিলেট থেকে হিজরত করতে বের হওয়া সেজাদুল ইসলাম সাহাব তানিম ওরফে ইসা ওরফে আরাফাত ওরফে আনোয়ার ওরফে আনবির, মো. জাহিদ হাসান ভূঁইয়া ও আরিফ হাসান ওরফে সৈয়দ রিয়াজ আহমদ নামে তিনজনকে গত ১ নভেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ তিনজনই রাফাতের নির্দেশে এবং পরিকল্পনায় হিজরতের উদেশ্যে বের হয়েছে বলে আদালতে স্বীকার করেছে।
এ পর্যন্ত সিলেট থেকে সবচেয়ে বেশি ব্যক্তি হিজরত করতে বাসা থেকে বের হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর সবটাই রাফাত নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, “রাফাতের নেতৃত্বেই ২০২১ সালের জুনে ১১ যুবক হিজরত করেছিল। তারা বান্দরবানে গিয়েছিল। সেখানে যাওয়ার পর যারা তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে যাবে কথা ছিল তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
“এরপর সাত দিন তারা বান্দরবানে পাহাড়ে অবস্থান করে যোগাযোগ করতে না পেরে পুনরায় সিলেটে ফিরে আসে।”
এই ১১ জনের মধ্যে রাফাতের খুবই ঘনিষ্ঠ এক সংগঠক তাহিয়াতের নাম জানতে পেরেছে সিটিটিসি।
এই তাহিয়াত দুই মাস পর আবার হিজরত করে- এমন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে সিটিটিসি প্রধান বলেন, সম্প্রতি হিজরত শেষে ফিরে আসা একজনকে গ্রেপ্তারের পর সিটিটিসি’র কাছে থাকা জঙ্গিদের প্রোফাইল তাকে দেখানো হয়। সেখানে সে তাহিয়াতসহ আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে, যারা নাইক্ষ্যংছড়িতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
রাফাতের বিরুদ্ধে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশন (আরএসও) যোগোযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডে আসার পর জিজ্ঞাসাবাদে সকল বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। তাহিয়াতকে গ্রেপ্তারের চেষ্টাও চলছে বলে জানান তিনি।