লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথম প্রশ্নটি ওঠে- গেটম্যান কোথায় ছিল? শাস্তির প্রথম কোপটিও পড়ে তার উপরই। দায়িত্বে অবহেলার জন্য শাস্তি হলেও রেলের এই গেটম্যানদের জীবনের কষ্টগাথা থেকে যায় আড়ালেই।
স্বল্প বেতনে চাকরি, ঘণ্টার কোনো হিসাব নেই, থাকার স্থানটিতেও থাকে না তেমন সুবিধা, এর মধ্যেই কাজ করে যেতে হয় গেটম্যানদের। ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যেও কাজের বিরাম নেই। বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও ছুটতে হয় বেশ দূরে, ‘টেনশন’ সঙ্গী করে।
“বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও আমরা অনেক সময় যেতে পারি না দায়িত্বের খাতিরে। আর লোকজন সিগনাল মানে না, ব্যারিকেড মানে না। আর দুর্ঘটনা হলে দোষ হয় আমাদের!” ক্ষোভ নিয়ে বলছিলেন ঢাকার খিলগাঁও লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান মোহাম্মদ ইয়াসীন।
চট্টগ্রামের খৈয়াছড়ায় ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে ১১ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনা ফের সামনে এনেছে লেভেল ক্রসিংয়ের বিভীষিকার কথা।
গত ২৯ জুলাইয়ের এই দুর্ঘটনার পর লেভেল ক্রসিংয়ের পাহারাদার সাদ্দাম হোসেনকে আটক করে রেল পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা তার দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুললেও সাদ্দামের দাবি, তিনি ব্যারিয়ার নামিয়ে যানবাহন আটকে দিয়েছিলেন। কিন্তু মাইক্রোবাসটি যাওয়ার জন্য কেউ একজন সেই ব্যারিয়ার তুলে দিয়েছিল।”
এই দুর্ঘটনার পর পূর্ব রেল দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও এখনও প্রতিবেদন জমা না হওয়ায় ‘প্রকৃত ঘটনা’ জানা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে রেলপথে ৯৯টি দুর্ঘটনায় ১০৫ জনের প্রাণহানি হয়।
এর মধ্যে লেভেল ক্রসিংয়েই ঘটেছে ১৮টি দুর্ঘটনা, যেসব ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২২ জুন পর্যন্ত রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২২৭ জন। এর মধ্যে ১৯১ জনই প্রাণ হারিয়েছেন লেভেল ক্রসিংয়ে।
বেতন সীমিত, কাজের সময় বাড়তি, ছুটিও মেলে না
বেশ কয়েকজন গেটম্যানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জনবল কম হওয়ায় অনেককে দিনে ১২ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয়। জরুরি প্রয়োজনেও ছুটি মেলে না, কর্মস্থলে নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা। একে নিজেদের বঞ্চনার জীবন বলছেন তারা।
প্রায় চার বছর ধরে ঢাকার খিলগাঁও রেলগেটে গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ নূরনবী। দিনে আট ঘণ্টা কখনওবা তার বেশি সময় দায়িত্ব পালন করতে হয় তাকে। গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। সপ্তাহ দুয়েক আগে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সন্তান হওয়ার একদিন আগে ‘অনেক বলে-কয়ে’ ছুটি মিলেছিল তার।
হতাশা কণ্ঠে নূরনবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রেলে লোক (গেটম্যান) কম হওয়ায় আমাগো অনেকের উপ্রেই অনেক চাপ পড়ে। ছুটি পাওয়া আমাগো জন্য বিরাট ব্যাপার। মানুষ ঈদে বাড়িতে যায়, আমরা ডিউটি করি। ঈদের ছুটিতে আমাগো কাজ আরও বাইড়া যায়।”
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে তিন শিফটে চারজন করে মোট ১২ জন পাহারাদার থাকার কথা। কিন্তু কোনো কোনো লেভেল ক্রসিংয়ে এর চেয়েও কম পাহারাদার আছেন। ফলে আটঘণ্টারও বেশি ডিউটি করতে হয় অনেককে। অনেক ক্ষেত্রে ১২ ঘণ্টাও ডিউটি করতে হয়।
গাইবান্ধা জেলা শহরের দুই নম্বর রেল গেটের গেট কিপার মানিক মিয়া জানান, রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের প্রকল্পের অধীনে তিনিসহ দুজন এই গেটে দায়িত্ব পালন করেন। তাদেরকে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে ডিউটি করতে হয়। তারা প্রতি মাসে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা করে বেতন পান।
২০১৫ সাল থেকে শুরু হওয়া দুটি প্রকল্পের আওতায় রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে ৭০২টি লেভেল ক্রসিং উন্নয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় অস্থায়ী ভিত্তিতে পাহারাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রায় দেড় হাজার জনকে। বেতন সর্বসাকুল্যে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা।
আর যারা স্থায়ী ভিত্তিতে রাজস্ব খাতের অধীনে চাকরি করেন, তাদের বেতন প্রকল্পের কর্মীদের চাইতে খানিকটা বেশি। তবে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দুধরনের কর্মীরই অভিযোগ একই।
খিলগাঁওয়ের নূরনবী বলেন, বেতন যা পান, তা দিয়ে বাবা, মা, ভাই, স্ত্রী ও সন্তানের খরচ চালানো কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চট্টগ্রামের পটিয়াতে একটি লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান হিসেবে কাজ করেন মোহাম্মদ রায়হান। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাসের বেতন অনেক সময় দুই মাসে পাই, অনেকসময় তিন চারমাসেও হয়। দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা ডিউটি করে যদি মাসের বেতন মাসে না পাওয়া যায়, তাহলে খাব কী?
“বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল কীভাবে দিব? ১৪ হাজার টাকা, তাও তিন মাস পর পাইলে তো সংসার সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।”
গাইবান্ধার মানিক মিয়া বলেন, “এই বেতনে সংসার চলে না; তার উপর সময় মতো পাওয়া যায় না। দ্রুত আমাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হোক।”
এই বেতন ছাড়া বছরে তিনটি উৎসব ভাতা পাওয়ার কথা তাদের। কিন্তু এখনও গত ঈদুল আজহার উৎসব ভাতা পাননি বলে জানান তিনি।
মানিকের সঙ্গী আরেক গেটম্যান আবু নাঈম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হবে বলা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যানদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া হলেও সেখানে তাদের জন্য কোনো স্যানিটেশন সুবিধা নেই। টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হলে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাঁটার দূরত্বে গিয়ে টয়লেট ব্যবহার করতে হয়, ফলে রেলগেট অরক্ষিত থাকার একটা ঝুঁকি থেকে যায়।
‘মানুষ মানে না’
অর্থনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে দিনরাত পরিশ্রমের করার পর লেভেল ক্রসিংয়ে ‘পাহারাদারদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে’ দুর্ঘটনার অভিযোগ মানতে নারাজ গেটম্যানরা।
তাদের ভাষ্য, দু-একটি দুর্ঘটনায় গেটম্যানের অবহেলা থাকতে পারে। কিন্তু সব জায়গাতে ট্রেন আসার সংকেত পেয়ে ব্যারিয়ার ফেলা হলেও মোটর সাইকেল, মাইক্রোবাসসহ পথচারীরা ব্যারিকেড তুলে, কিংবা ব্যারিকেডের নিচ দিয়ে রাস্তা পার হয়। আর তাতেই দুর্ঘটনার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।
ঢাকার মালিবাগ রেলগেটে কথা হচ্ছিল গেটম্যান সোহানুর রহমান সজলের সঙ্গে। সেখানে ছিলেন ১৪ বছর যাবৎ মাস্টার রোলে গেটকিপার হিসেবে কাজ করে চলা সালেহ আহমেদ।
সালেহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সময়মতো ব্যারিকেড ফেলি। কিন্তু মানুষের মধ্যে চিন্তাই থাকে কতক্ষণে ব্যারিকেড ফেলমু, আর কতক্ষণে তারা এইটার নিচ দিয়া পার হবে। সবচেয়ে বেশি ঝামেলা করে মোটর সাইকেলওয়ালারা। তারা ব্যারিকেডের কোনো তোয়াক্কাই করে না।”
যা বললেন, তা ঠিক কি না, দেখার জন্য কিছুক্ষণ থাকার অনুরোধ করলেন সালেহ আহমেদ। তাতে দেখা গেল, ট্রেনের হুইসেল শোনার পরও ব্যারিকেড অতিক্রম করে লেভেল ক্রসিং পার হচ্ছেন কয়েকজন।
গেটকিপার সজল তখন বললেন, “একে তো মানুষজন ব্যারিকেড ফেলার পরেও সেটার তোয়াক্কা করে না, তার উপর এই লেভেল ক্রসিংয়ের দুইটা ব্যারিকেডের মধ্যে একটা প্রায় নষ্ট। সময়মত ব্যারিকেড নামানো যায় না। বারবার (কর্তৃপক্ষকে) বলার পরেও তারা বিষয়টা আমলে নেয় নাই।”
ঢাকার মহাখালী লেভেল ক্রসিংয়ে গিয়েও দেখা যায় একই দৃশ্য। গেটম্যান ব্যারিকেড ফেলার পরেও কয়েকজন মোটর সাইকেল আরোহী এবং পথচারীকে দেখা যায় তা তুলেই পার হচ্ছেন।
এই লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এইটা প্রতিদিনের ঘটনা। দেশের মানুষ আইন মানে না, নিয়ম মানে না। অনেকসময় ক্রসিংয়ের কাছে আইসা চলন্ত ট্রেন থেকেও অনেকে লাফ দিয়া নামার চেষ্টা করে, তাদের কিছু হইলেও দোষ হবে আমাদের।”
চট্টগ্রামের পটিয়া লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান রায়হান বলেন, “অনেকসময় স্থানীয় নেতারা আইসাও আমাদের সাথে ঝামেলা করে। তারা বাইক নিয়ে আসে। ব্যারিকেড ফেলার পরে যেতে না দিলে হুমকি ধামকি দেয়।”
রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, রেলপথের দুই পাশে ১০ ফুট এলাকায় চলাচল আইনত নিষিদ্ধ। ওই সীমানার ভেতর কেউ প্রবেশ করলে গ্রেপ্তারের বিধান রয়েছে। রেলওয়ে আইন ১৮৯০-এর ১২৮ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ট্রেনের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে বা বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড হবে।
রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পুর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে রেলওয়ের অনুমোদিত মোট ১ হাজার ৪৬৮টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৫৬৪টিতে গেটম্যান নিযুক্ত আছে। বাকি ৯০৪টিই আছে অরক্ষিত অবস্থায়।
তাছাড়া সারাদেশে অননুমোদিত লেভেল ক্রসিং আছে ১ হাজার ৩২১টি। এগুলো স্থানীয় সরকার, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের দায়িত্বে আছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে।
তার মানে দেশের মোট ২ হাজার ৭৮৯টি লেভেল ক্রসিংয়ের প্রায় ৮২ শতাংশই অরক্ষিত। এসবে ট্রেন চলাচলের সময় যানবাহন আটকানোর জন্য কোনো পাহারাদার কিংবা প্রতিবন্ধক নেই। বাকি ১৮ শতাংশ ক্রসিংয়ে পাহারাদার ও প্রতিবন্ধক থাকার পরেও সেগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটলে শোরগোল পড়ে যায়।
রেলওয়ে জানায়, নতুন রেললাইন তৈরি করে প্রথম ট্রেন চালানোর ১০ বছরের মধ্যে এর ওপর দিয়ে কোনো সড়ক গেলে তা সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব রেলের। এরপর কোনো সড়ক নির্মাণ হলে তা আগে রেল কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়। সড়কের কারণে তৈরি লেভেল ক্রসিংয়ে পথরোধক ও পাহারাদার দিয়ে তা সুরক্ষা করার দায়িত্ব রেলওয়ের না, সেই দায়িত্ব সড়ক নির্মাণকারী সংস্থার।
কী বলছে রেল কর্তৃপক্ষ
লেভেল ক্রসিং নিরাপদ করতে আরও গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না কেন, এ প্রশ্নের উত্তরে রেলের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রকল্পের আওতায়ই প্রায় দুই হাজার গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
“যেই পরিমাণে রেল ক্রসিং গেট আছে, সবগুলোতে গেটম্যান নিয়োগ দিতে হলে প্রকল্পের সব টাকা তাদের বেতন দিতে গিয়েই শেষ হয়ে যাবে। তাছাড়া আমরা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান,এখানে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়াও সহজ না।”
গেটম্যানদের বেতন-ভাতা সুবিধা ও চাকরি স্থায়ীকরণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের প্রকল্পে যা বরাদ্দ ছিল,সেই বেতনই তাদের দেওয়া হচ্ছে। তবে যারা অস্থায়ী হিসেবে আছেন,তাদের চাকরি স্থায়ী করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আমরা আবেদন করেছি।”
দুর্ঘটনা এড়াতে সবার সচেতন হওয়ার উপর জোর দিচ্ছেন রেলের মহাপরিচালক।
লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান থাকুক কিংবা না থাকুক অথবা সেটি ব্যারিয়ার দিয়ে বন্ধ থাকুক অথবা না থাকুক- সবক্ষেত্রেই পারাপারের সময় সড়কযানের চালককে নিজ দায়িত্বে ট্রেন চলাচলের গতিবিধি খেয়াল করার পরামর্শ দেন তিনি।
গেটম্যানদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ধীরেন্দ্রনাথ বলেন, “ট্রেন না থাকলে কোনো যানবাহন যদি ক্রসিংয়ের কাছে গিয়ে লাইনের সাথে আটকে যায়; তাহলে সেক্ষেত্রে কী করতে হবে, ট্রেন আসার আগে কিভাবে ব্যারিয়ার ফেলতে হবে- এসব বিষয়ে গেটম্যানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।”
বেশকিছু লেভেল ক্রসিংয়ে সতর্কতার জন্য ঘণ্টা বসানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন মিলে যে পরিমাণে শব্দ দূষণ করে, এই ঘণ্টার আওয়াজ পাওয়াও মুশকিল হয়ে যায়।”
কোনো রাস্তার উপর রেললাইন নির্মাণ হলে সেই রাস্তায় গেট নির্মাণ থেকে শুরু করে নিরাপত্তার দায়িত্ব রেলওয়ে নেবে জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু বিদ্যমান রেললাইনের উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হলে নির্মাণকারী সংস্থাকেই সেই রাস্তার পাহারার দায়িত্ব নিতে হবে। আন্ডারপাস এবং ওভারপাস নির্মাণের ক্ষেত্রেও তাদের দায়িত্ব নিতে হবে।”
দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট যা বলছে
লেভেল ক্রসিংয়ের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমাতে সবার সম্মিলিত সদিচ্ছা ও সচেতনতা প্রয়োজন বলে মনে করেন বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান।
স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি- দুই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে লেভেল ক্রসিংগুলোর ঝুঁকি কমানোর জন্য ক্রসিংয়ের দুই পাশে পঞ্চাশ মিটার দূরত্ব রেখে তিনটি করে ছয়টি গতিরোধক বসাতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি ক্রসিংয়ে ফ্লাশিং লাইট বসাতে হবে, যাতে ট্রেন এলে আলো জ্বলে ওঠে। এছাড়াও লেভেল ক্রসিংয়ে ১০০ ডেসিবেল শব্দ সৃষ্টি করে এমন ঘণ্টা বসাতে হবে।
“ক্রসিংয়ের দুইপাশে নকশা করে মিরর বা আয়না বসাতে হবে। সেগুলো এমনভাবে বসাতে হবে, যাতে করে লেভেল ক্রসিং পার হওয়া যানবাহনের চালক ট্রেনটি দেখতে পারেন। দুর্ঘটনা ঘটলে যানবাহনের চালক বলেন, তিনি ট্রেন দেখতে পাননি, ট্রেনের চালকও বলেন তিনি সেই যানবাহন দেখতে পাননি। এই ব্লেমগেম দূর করার জন্য অতি সত্ত্বর সেফটি অডিটের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
তাছাড়া লেভেল ক্রসিংয়ের দুইপাশে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করার পরামর্শ দেন তিনি।
রেললাইন ও লেভেল ক্রসিংয়ের দুইপাশের অবৈধ স্থাপনাগুলো প্রায়ই উচ্ছেদ করা হয় জানিয়ে রেলের মহাপরিচালক বলেন, “প্রায়ই অবৈধ স্থাপনাগুলোকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু দুইদিন পরই তারা আবার ফিরে আসে, দোকানিরা দোকান বসায়।”
পূরকৌশেলের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, “যেই সিস্টেমের মধ্যে মানুষের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপার থাকে, সেখানে ত্রুটি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এ কারণেই পর্যায়ক্রমে আমাদের লেভেল ক্রসিংগুলোকে স্বয়ংক্রিয় করে ফেলতে হবে।”
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মিন্টু চৌধুরী ও গাইবান্ধা প্রতিনিধি তাজুল ইসলাম রেজা]