সৌর বিদ্যুতের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানিতে সব ধরনের আমদানি শুল্ক কমানোর দাবি উঠেছে ‘বাংলাদেশ জ্বালানি সমৃদ্ধি ২০৫০’ শীর্ষক সম্মেলনে।
Published : 13 Dec 2024, 09:09 PM
রাজধানীতে তিনদিনের এক সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কর্মরত বিশেষজ্ঞরা সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ নীতি বাস্তবায়নের দাবি তুলে ধরেছেন।
একইসঙ্গে তারা দেশে নবায়নযোগ্য শক্তিখাত পুরোদমে চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত বৃহদাকার ও গৃহস্থালিতে সৌর বিদ্যুতের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানিতে সব ধরনের আমদানি শুল্ক কমানোরও দাবি জানান।
শুক্রবার বিয়াম ফাউন্ডেশনে ‘বাংলাদেশ জ্বালানি সমৃদ্ধি ২০৫০’ শীর্ষক সম্মেলনের সমাপনীতে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে এসব দাবি উঠে এসেছে।
সম্মেলনের আয়োজকদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্য তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশে বিদ্যুতের চড়াদামের অন্যতম কারণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে দেওয়া ক্যাপাসিটি পেমেন্ট সুবিধা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার প্রায় ৪১ শতাংশ অব্যবহৃত ছিল। কেবল ২০২৩ সালে সরকার ২৬ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন সম্মেলনে বলেন, “পরিবেশ মন্ত্রণালয় এখনও বাংলাদেশের নেট-জিরো লক্ষ্য ঘোষণা করেনি। আর এ কারণেই দেশে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ছে না।”
এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সমর্থন পেলে অর্জন করা সম্ভব, এমন নেট-জিরো লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশও ঠিক করতে পারবে।”
তিনি বলেন, “আমরা এখনও বিগত সরকারের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে আমরা পরিবর্তন আনার সুযোগও পেয়েছি।”
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সমন্বিত বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) অবশ্যই বাতিল হওয়া উচিত। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো এবং বিদ্যুৎ মিশ্রণে নবানয়নযোগ্য শক্তির পরিমাণ বাড়ানো, এমন মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনা বানানো ও কার্যকর করা উচিত।”
বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি জাহিদুল আলম বলেন, “নবায়নযোগ্য জ্বালানির সংশ্লিষ্ট মালামালের আমদানি শুল্ক কমানো না গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কখনই ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবে না।”
নীতিনির্ধারক, অ্যাকাডেমিক, গবেষক, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, জ্বালানি কোম্পানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জলবায়ু ও মানবাধিকার কর্মী, আদিবাসী সম্প্রদায়, তরুণ, ছাত্র এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রায় ৪০০ প্রতিনিধির পক্ষে বিডব্লিউজিইডি এর সদস্য সচিব হাসান মেহেদী শেষ দিন সম্মেলনের ঘোষণা পাঠ করেন।
এ ঘোষণায় নীতি সমন্বয়, প্রাতিষ্ঠানিক ও পদক্ষেপগত সংস্কার, কার্যকর আর্থিক পদ্ধতি, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং আরও উন্নত সামাজিক ও পরিবেশগত সুশাসনের মতো বিষয়ে জরুরিভিত্তিতে মনোযোগ দেওয়ার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিডব্লিউজিইডি), সিপিডি, টিআইবি, মিডিয়া রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিসশয়েটিভ (এমআরডিআই), বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল’ইয়ারস অ্যাসোসিয়েশন (বেলা), মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ), অ্যাকশন এইড বাংলাদেশসহ প্রায় দুই ডজন সংগঠন যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
পুরনো খবর:
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনা সংশোধন করা উচিত: জাইকা প্রতিনিধি
বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে দুর্নীতির সুযোগ দেওয়াই ছিল গত সরকারের লক্ষ্য: ফাওজুল কবির