“এসব পদে নিয়োগ দিতে গিয়ে সময় লেগেছে; বাহির থেকে বোঝা যায় না যে কতটা সময় ও কষ্ট সাপেক্ষ,” বলেন আইন উপদেষ্টা।
Published : 14 Oct 2024, 11:26 PM
গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হতে আবেদনের হিড়িক পড়েছে। পাবলিক প্রসিকিউটর বা পিপি, জেনারেল প্র্যাকটিশনার বা জিপি ও অতিরিক্ত পিপি মিলিয়ে সাড়ে ৪ হাজার পদের বিপরীতে ৬০ হাজার আবেদন পেয়ে ‘হিমশিম’ খাওয়ার কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
সোমবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য নানা বিষয়ের পাশাপাশি এই তথ্যটিও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিচারিক আদালতে নিয়োগ করা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা অনুপস্থিত থাকায় রাষ্ট্রপক্ষের মামলার বিচারকাজ অনেকটা স্থবির হয়ে আছে।
অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের প্রশাসন খোলনালচে পাল্টে দেওয়ার পর আদালতেও রাষ্ট্রপক্ষে নতুন আইনজীবী নিয়োগ করতে যাচ্ছে। তবে দুই মাসেও তাদের নিয়োগ শেষ করা যায়নি।
আসিফ নজরুল বলেন, “নিম্ন আদালতে বিচারকাজ অনেক ক্ষেত্রে ব্যাহত হয়েছিল। আদালতে পিপি, জিপি, অতিরিক্ত পিপিসহ সাড়ে ৪ হাজার সরকারি উকিল অগাস্টের ৫ তারিখে সরকার পতনের পর দুয়েকজন ছাড়া অধিকাংশই পালিয়ে গেছেন অথবা আত্মগোপন করেছেন। কেন এমনটি করেছেন, সেটা আপনারা সবাই জানেন।
“নতুন করে পিপি নিয়োগ দিতে গিয়ে সাড়ে ৪ হাজার পদের জন্য ৫০ থেকে ৬০ হাজার আবেদন এসেছে। এসব পদে নিয়োগ দিতে গিয়ে সময় লেগেছে। এই প্রক্রিয়াগুলো বাহির থেকে বোঝা যায় না, যে কতটা সময় ও কষ্ট সাপেক্ষ। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখান থেকে বাছাই করে সাড়ে ৪ হাজার লোক নির্বাচন করায় যে কি পরিশ্রম গেছে, তারাই জানে।”
আইন উপদেষ্টা বলেন, “শুক্র ও শনিবারও কাজ হয়েছে, রাত ৭টা/৮টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে। আজকেই (সোমবার) ঢাকা জেলার সরকারি কৌঁসুলিদের নিয়োগের কাগজে স্বাক্ষর করেছি। ঢাকা জেলার জন্য ৭০০ এরও বেশি আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখানেও ১০ হাজার আবেদন পড়েছিল।”
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তনের হাওয়ায় দেশের প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগ এবং অ্যাটর্নি জেনারেল পদে মুখ বদলে যায়।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ, জেলা ও দায়রা জজ, ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম, মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবুর নিয়োগ বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ২৮ অগাস্ট তার জায়গায় এহসানুল হক সমাজীকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এহসানুল হক সমাজী আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এ আদালতের পিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে নিয়োগ পাওয়ার দুই দিনের মাথায় তিনি ‘ব্যক্তিগত ও পারিবারিক’ কারণ দেখিয়ে ওই দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
পিপি পদে সমাজীকে নিয়োগ দেওয়ার পরপরই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে তার নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান। তাদের অভিযোগ ছিল, সমাজী আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবী হিসেবে পরিচিত। এরপর থেকে এখনও প্রধান পিপি নিয়োগ হয়নি।
তবে ঢাকা জেলার জন্য ৭০০ এরও বেশি সরকারি আইনজীবী নিয়োগের কথা সোমবার সচিবালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানান আইন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “নিম্ন আদালতের বিচারকাজ শুরু করা দরকার। গত ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের সময় অনেক মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে। সেই মামলাগুলো আমরা প্রত্যাহার করতে পারছি না। আমরা পারছিলাম না। কারণ, যেই মামলায় চার্জশিট হয়ে যায়, সেই মামলায় পিপি যদি আদেশ না করে তাহলে সেটা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ থাকে না।”
পদ্ধতিগত জটিলতাগুলোর কারণে সমালোচনার মুখে পড়ার কথা জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, “অনেক সময় অনেকে না বুঝে বলে যে, এত মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা সরকার কেন প্রত্যাহার করছে না। এটা তো আমরা চাইলেই প্রত্যাহার করতে পারব না। যেই মামলায় চার্জশিট হয় নাই, তদন্তের পর্যায়ে আছে, শুধু সেই মামলা প্রত্যাহার করা যায়।
“যেই মামলায় সাজা হয়ে গেছে, সেই মামলা কেন প্রত্যাহার করছি না, সেই অভিযোগও আমাদের শুনতে হয়। আইনটা একটু জানা থাকলে ভালো হয়। যেই মামলায় সাজা হয়ে গেছে, সেটা যতই ‘মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক, অবিশ্বাস্য’ মামলা হোক না কেন…‘ফ্যাসিস্ট’ শেখ হাসিনার আমলে ফরমায়েশি রায় হলে, সেটা শাস্তি হয়ে গেলে, সেটা ইচ্ছেমত প্রত্যাহার করা যায় না। যার শাস্তি হয়ে গেছে, উনার আবেদন ছাড়া স্বপ্রণোদিতভাবে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো কিছু করার নেই।”
তিনি বলেন, “অনেকে বলছে আইন মন্ত্রণালয় কিছু করছে না কেন, আমাদের যা করার আমরা করছি। ভুল থাকবে। কিন্তু বেআইনিভাবে কোনো কিছু করার ইচ্ছা আমাদের নেই।
“জুলাই-অগাস্টে যে গণআন্দোলন হয়েছে, সেখানে ছাত্র-জনতা যেসব মামলায় ভিকটিম হয়েছে, সেগুলো আমরা সাধ্যমত প্রত্যাহারের চেষ্টা করছি।”
আরও পড়ুন-