“দেখা যাচ্ছে যে, সুপারিশপত্রটাকে পুঁজি করে অনেকে জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে।”
Published : 12 May 2024, 09:10 PM
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ বছরে উন্নীত করতে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যে সুপারিশ করেছিলেন, সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন তিনি।
রোববার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেছেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা না বাড়াতে সরকারের সিদ্ধান্তের পর সেই সুপারিশের ‘কার্যকারিতা নেই’।
তিনি বলেন, “কিছু চাকরিপ্রার্থী এ বিষয়টা নিয়ে অনুরোধ করেছিলেন, আমি কিছু কিছু বিষয়ে তাদের সাথে আলোচনাকালীন সময়ে মনে হয়েছিল, সেটার ব্যাপারে একটা সুপারিশ করা যেতে পারে। সে হিসাবে আমি একটা সুপারিশপত্র দিয়েছি। কিন্তু এটা দেখা যাচ্ছে যে, এই সুপারিশপত্রটাকে পুঁজি করে অনেকে জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে।
“ইতোমধ্যে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সেটা জাতীয় সংসদে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, সরকারের বা রাষ্ট্রের নীতিগত সিদ্ধান্তটা কী। এটা বৃদ্ধির করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত যে নেই, সেটা বলে দেওয়া হয়েছে।”
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে তা ৩২ বছর। এই সীমা বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েক বছর ধরেই আন্দোলন করে আসছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। যদিও সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।
এর মধ্যে গত ১৭ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেনকে পাঠানো এক চিঠিতে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর সুপারিশ করেন শিক্ষামন্ত্রী।
তবে চিঠিতে তিনি বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটি তার ব্যক্তিগত সুপারিশ। এটি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ নয়।
ওই চিঠিতে শিক্ষামন্ত্রী লিখেছিলেন, “সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩৫ করা হলে অনেকে বেসরিকারি খাতের অভিজ্ঞতা নিয়ে সরকারি চাকরিতে আসতে পারবে। এখন যারা একদম ফ্রেশ আসছে, তাদের সেরকম অভিজ্ঞতা থাকে না। সেক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হলে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারবেন তারা।”
বিশ্বের প্রায় ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা কমপক্ষে ৩৫ বছর বলেও চিঠিতে তুলে ধরেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রীর ওই সুপারিশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরা হবে বলে ৫ মে জানিয়েছিলেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। পরদিন সংসদে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আপাতত সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
জনপ্রশাসনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে ‘চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ’ শনিবার ঢাকায় ফের আন্দোলনে নামলে পুলিশ লাঠিপেটা করে।
এদিন পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। পরে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে সেখান থেকে ১৩ জন আন্দোলনকারীকে আটক করে পুলিশ।
আগের অবস্থান থেকে সরে আসার কথা জানিয়ে রোববার শিক্ষামন্ত্রী নওফেল বলেন, “একটি পক্ষ দেখা যাচ্ছে যে, আমার সেই সুপারিশপত্রটাকে পুঁজি করে এখানে সংঘাতমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে, সেখানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।
“সুতরাং আমি তাদেরকে বলব, এটা অত্যন্ত খারাপ কাজ তারা করছেন। রাষ্ট্র উত্তর দিয়ে দিয়েছে, এখানে বিষয়টির সমাপ্তি ঘটেছে। আমার সেই সুপারিশটার কার্যকারিতা সেখানে নেই এখন আর, যেহেতু জাতীয় সংসদে জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলে দিয়েছেন।”
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা না বাড়ানোর বিষয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রীর দেওয়া পরিসংখ্যান মেনে নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি সেখানে আলোচনা করে জানতে পেরেছি, যারা চাকরি পায় তাদের এক শতাংশ মাত্র ৩০ বছর বয়সী।
“সুতরাং যেখানে ১ শতাংশ মাত্র, সেখানে ৩৫ করলে আর কতইবা বাড়বে, সেটাতো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সেটা জনপ্রশাসনমন্ত্রী মন্ত্রী আমাকে ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। সেটা নিয়ে এখন তাদের জল ঘোলা করা উচিত হবে না বলেই আমি মনে করি।”