সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শনিবার ওয়ারেন্ট না দেখিয়ে সাদা পোশাকে রিং রং ম্রো’কে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ।”
Published : 23 Feb 2025, 10:23 PM
বান্দরবানের লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের করা ‘মামলায়’ গ্রেপ্তার আদিবাসী যুবক রিং রং ম্রো’র মুক্তি চেয়ে শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে কয়েকটি আদিবাসী ছাত্র-যুব সংগঠন।
রোববার বিকেলে ঢাকার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশের কথা জানিয়ে সংগঠনগুলোর পক্ষে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার ওয়ারেন্ট না দেখিয়ে সাদা পোশাকে রিং রং ম্রো’কে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে ১৯৯৬ সালে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ রাবার চাষের জন্য লিজ দেয়।
এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিভিন্ন অভিযোগ জানিয়ে তাদের লিজ বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় আদিবাসীরা।
সমাবেশে ম্রো স্টুডেন্টস কাউন্সিলের পক্ষে পায়া ম্রো বলেন, “বহু বছর ধরে রাষ্ট্র কখনও নিজে, কখনও বা তার মদদপুষ্ট কর্তৃপক্ষ আদিবাসীদের ভয় ভীতি দেখিয়ে প্রান্তিকতার খাদে ঠেলে দিচ্ছে। তারই বহিঃপ্রকাশ ভূমিরক্ষা কমিটির নেতা রিং রং ম্রোকে মিথ্যা মামলায় আটক করা।”
হিল উইমেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা বলেন, “স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, সিভিল ড্রেসে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। অথচ তারই বাহিনী গতকাল রিং রং ম্রোকে ওয়ারেন্ট না দেখিয়ে সিভিল ড্রেসে গ্রেপ্তার করেছে।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি রেংইয়ং ম্রো বলেন, “লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মাস্তানি বহু আগে থেকেই জারি রয়েছে। এই কোম্পানির মাস্তানি প্রকাশ্যে আসে ২০১৭ সালে।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, “২০২২ সালে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার পর আমরা বাচ্চাদের জন্য পাঠশালা স্থাপন করতে চেয়েছিলাম। আমাদেরকে সেই এলাকায় যেতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ বলেছে, আমরা নাকি অবৈধ জায়গায় স্কুল স্থাপনের চেষ্টা করছি।”
রিং রং ম্রো’র বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো শান্তিময় চাকমা বলেন, “ওই রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ সেখানকার স্থানীয়দের উচ্ছেদের চেষ্টা করছিল। এর প্রতিবাদে রিং রং ম্রোসহ স্থানীয়রা ভূমি রক্ষা কমিটি গঠন করে। এরপর থেকে তাদের বিরুদ্ধে নানা সময় মিথ্যা অভিযোগে বিভিন্ন মামলা করা হয়।
“গতকাল তাকে সুনির্দিষ্ট কোন মামলায় এবং কোন অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে বিষয়ে আমাদেরকে কিছুই জানায়নি।”
বিষয়টি নিয়ে লামা থানার ওসি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “রিং রং ম্রো’র নামে ২০২২ সালে আদালতে দুইটি মামলা হয়। ২০২৩ সালে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। সেই দুটি ওয়ারেন্টমূলে শনিবার সন্ধ্যায় লামার কেয়াজুপাড়া থেকে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। আজকে আমরা আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছি, এখন সে কারাগারে আছে।”
তবে মামলার অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে তিনি জানাতে না পারলেও মামলা দু’টির বাদী লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বলে নিশ্চিত করেছেন ওসি।
সাদা পোশাকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি বলেন, “এটা রিমোট এরিয়া, পোশাক পরে গেলে আসামিকে পাওয়া যায় না। অভিযানে যাওয়ার সময় পেছনে পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা থাকেন, আর সামনে কয়েকজন সাদা পোশাকে যান। গ্রেপ্তারের পর পরই পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা গিয়ে নিয়ে আসেন, এখানেও এমনটা হয়েছে।
“আর ওয়ারেন্ট না দেখানোর বিষয়টি সঠিক নয়, আমরা ওয়ারেন্ট দেখিয়েই তাকে গ্রেপ্তার করেছি।”