বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে মামলাগুলো এফআইআর হিসেবে গ্রহণের আদেশ দিয়েছে আদালত।
Published : 28 Aug 2024, 01:09 AM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে রাজধানীতে তিনজন নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে আরও তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে।
রাজধানীর ডেমরার সানারপাড়ে মিরাজ হোসেন, মোহাম্মদপুরের বসিলায় বুড়িগঙ্গা ফিলিং স্টেশনের মেশিন অপারেটর মনসুর মিয়া এবং মিরপুরে নাহিদুলকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এসব মামলা হয়।
মামলাগুলোতে শেখ হাসিনাসহ মোট ১৫৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে তিনজন মহানগর হাকিম সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে মামলাগুলো এফআইআর হিসেবে গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন।
ডেমরার মিরাজ হোসেনকে হত্যার অভিযোগে ৯২ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন খোরশেদ আলম মিয়া। মহানগর হাকিম বেলাল হোসেন তার বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ডেমরা থানা পুলিশকে অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ৫ অগাস্ট মিরাজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন। ডেমরার সানারপাড় মেইন রোডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও র্যাবের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগের কয়েকশ কর্মী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গুলি চালাতে থাকে।
তখন মিরাজসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মোহাম্মদপুরের বসিলায় মনসুর মিয়া নিহতের ঘটনায় মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরীর আদালতে ২২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে।
মনসুরের ভাই আয়নাল হক এ মামলা দায়ের করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগটি মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই মনসুর মিয়া মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ এলাকায় তার সন্তানকে মাদরাসা থেকে আনতে যাচ্ছিলেন। পথে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজধানীর মিরপুরে নাহিদুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় তার ভাই সবুজ শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনকে আসামি করে অন্য মামলাটি দায়ের করেছেন।
মহানগর হাকিম মেহেদী হাসান বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগটি মিরপুর থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। তাতে নাহিদুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ছাত্র জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পর থেকে তার বিরুদ্ধে অর্ধ শতাধিক মামলা হয়েছে, যার অধিকাংশই হত্যা মামলা।