পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলছেন, শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়, বাংলাদেশের দূতকে তলব করে দ্বিপক্ষীয় কিছু বিষয়েও আলোচনা করেছে মস্কো।
Published : 22 Feb 2023, 08:41 PM
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা রুশ জাহাজ বাংলাদেশ ঢোকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে মস্কোতে ঢাকার শীর্ষ কূটনীতিককে তলবের বিষয়টি পর্যালোচনা করার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
বুধবার ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছি। কী আলোচনা হয়েছে আমরা তা বিশ্লেষণ করব।
“এবং এখানে শুধু এটি (রুশ জাহাজে নিষেধাজ্ঞা) নয়, আমরা যতদূর জেনেছি যে দ্বিপক্ষীয় আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “গতকালকের (মঙ্গলবার) বৈঠকের বিষয়ে অফিসিয়াল রিঅ্যাকশন আমরা দাপ্তরিকভাবে আগামীকাল আপনাদের জানিয়ে দেব।”
ইউক্রেইনে রুশ আক্রমণের জেরে রাশিয়ার উপর বেশি কিছু বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা। সেই তালিকায় রাশিয়ান ব্যাংক, জাহাজ ও পণ্য রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক লেনদেন যোগাযোগ পরিষেবা সুইফটও রাশিয়ার ব্যাংকের সঙ্গে সব ধরনের আর্থিক লেনদেন বন্ধ রেখেছে।
এর ফলে বাংলাদেশও এখন রাশিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন করতে পারছে না। অথচ আর্থিক বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে বড় মেগ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাশিয়ার সহযোগিতাতেই নির্মাণ হচ্ছে।
সেই প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ও রসদের বড় একটি অংশ রাশিয়া থেকে আসার কথা। এর অংশ হিসেবে যন্ত্রপাতির চালান নিয়ে জানুয়ারিতে এসেছিল ‘উরসা মেজর’ নামের একটি জাহাজ। কিন্তু মার্কিন কূটনৈতিক চাপে পণ্য খালাসের অনুমতি না পেয়ে জাহাজটি ভারতীয় জলসীমা থেকে ফিরে যায় গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই রাশিয়ার যে ৬৯টি জাহাজের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেসব নৌযানের বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রবেশে গত ১৬ জানুয়ারি নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
ঢাকার এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে অবস্থান জানাতে মঙ্গলবার মস্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে তলব করে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশি বন্দরে বাংলাদেশের জন্য মালামালবাহী রুশ জাহাজ ভেড়ার ক্ষেত্রে তার দেশের কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক প্রতিবেদন কূটনৈতিক মিশন প্রধানের নজরে এনেছি আমরা।
“ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিপরীতে হয়েছে এই পদক্ষেপ। বহুমাত্রিক পর্যায়ে আমাদের সহযোগিতার জন্য এটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।”
মঙ্গলবার রুশ বার্তা সংস্থা তাসের খবরে বলা হয়, ৬৯টি রুশ জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা তাসকে গত সপ্তাহে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশে রুশ দূতাবাস। দূতাবাস এও জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের মানে এই নয় যে, রাশিয়ার মালামাল আমদানির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে ১৭ ফেব্রুয়ারি রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধে একটি ‘জটিল পরিস্থিতি’ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার বলেন, “বাংলাদেশও আমাদের নীতিগত অবস্থান থেকে যখন যেখানে ভোটিং প্যাটার্ন যে রকম হওয়া উচিত, আমরা সেভাবে করেছি। সাধারণ পরিষদে শিগগির আরেকটা রেজ্যুলেশন আসছে, এটা নিয়ে আমরা বিবেচনা করছি।”
আরও পড়ুন
মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রুশ জাহাজ বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ
রাশিয়ার জাহাজে নিষেধাজ্ঞা: মস্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব
রুশ জাহাজ ফিরিয়ে দেওয়া বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূলে হয়নি: মস্কো
বাংলাদেশকে মাঝে রেখে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি চলছেই