রুশ জাহাজ ফিরিয়ে দেওয়া বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূলে হয়নি: মস্কো

মস্কোর অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশকে রাশিয়াবিরোধী অবস্থান নিতে বাধ্য করছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2023, 04:11 PM
Updated : 6 Feb 2023, 04:11 PM

‘নিরপেক্ষ’ দেশগুলোকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে যুক্তরাষ্ট্র বাধ্য করছে বলে অভিযোগ তুলে এর সপক্ষে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে দেখাল মস্কো।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার এক বিবৃতিতে এই উদাহরণ হিসেবে কয়েকমাস আগে রুশ জাহাজকে বাংলাদেশের বন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন।

রাশিয়া থেকে পণ্য নিয়ে আসা ‘উরসা মেজর’ জাহাজতে মোংলা বন্দরে ভিড়তে না দিতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা ‘সম্পূর্ণ আইন-বহির্ভূত’ বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ সরকার বরাবরই বলে আসছে, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এই নীতি ধরেই চলছে তারা।

ইউক্রেইনে রাশিয়ার অভিযানের পর তার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি মস্কোর উপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার অবসানও চাইছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে রাশিয়ার সহায়তায়; সেই কেন্দ্রের জন্য নানা সরঞ্জাম নিয়ে দুই মাস আগে আসতে গিয়ে ফিরে যেতে হয় ‘উরসা মেজর’কে।

নভেম্বরে ওই জাহাজটি রাশিয়া ছাড়ার পর ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস বাংলাদেশ সরকারকে জানায়, ‘স্পার্টা-৩’ নামের যে জাহাজের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আছে, সেই জাহাজের নাম ও রঙ বদলে ‘উরসা মেজর’ হিসেবে চলছে। নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা এই জাহাজ যেন বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে দেওয় না হয়।

তখন রুশ জাহাজটিকে সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকৃতি জানায় বাংলাদেশ সরকার। এর মধ্যে রুশ দূতাবাস তৎপরতা চালালেও অবস্থানে অটল থাকে সরকার।

পরে ভারতের বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে বিকল্প জাহাজে করে রূপপুর পারমাণিক কেন্দ্রের সেসব সরঞ্জাম আনার চেষ্টা করা হলেও তা শেষ পর্যন্ত হয়নি।

Also Read: বাংলাদেশকে মাঝে রেখে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি চলছেই

এই গোটা ঘটনার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে বলে মনে করেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।

তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার পক্ষে টানতে যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ দেশের জনগণ ও রাজনীতিকদের উপর ‘হুমকি ও ব্ল্যাকমেইলের’ আশ্রয় নিয়ে থাকে।

“সবক্ষেত্রে আমাদের অংশীদাররা এই নির্জলা ব্ল্যাকমেইল প্রতিহত করতে পারছেন না। তার সুনির্দিষ্ট উদাহরণ হচ্ছে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে রাশিয়ার জাহাজ ‘উরসা মেজর’ ভিড়তে না দেওয়া।”

মারিয়া জাখারোভা বলেন, “আমেরিকানদের শর্তের প্রেক্ষাপটে সেখানকার (বাংলাদেশ) কর্তৃপক্ষ মোংলা বন্দরে জাহাজটি ঢোকার বিষয়ে পূর্ববর্তী অনুমতি বাতিল করেছিল।

“এই ঘটনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতির একটি চালানের সরবরাহ এক মাসের বেশি সময় পিছিয়ে দিয়েছে, যা বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূলে হয়নি।”

তৃতীয় দেশকে নিষেধাজ্ঞায় শরিক হতে বাধ্য করার মতো কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, রাশিয়াবিরোধী নিষেধাজ্ঞায় শরিক হতে তৃতীয় দেশকে বাধ্য করার মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণরূপে আইন-বহির্ভূত এবং এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।”

রুশ ওই জাহাজ ফেরত পাঠানোর পর তা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও কথা বলেছিলেন। তার ভাষ্যে, রাশিয়া ‘জেনেশুনে’ নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা জাহাজে পণ্য পাঠানোর কারণে ‘অবাক’ হন তিনি।

গত ২২ জানুয়ারি সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, “আমাদের কাছে তাজ্জব লেগেছে যে রাশিয়া জেনেশুনে নিষেধাজ্ঞা আছে এমন জাহাজের নাম পরিবর্তন করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পণ্য পাঠিয়েছে। আমরা এটি আশা করিনি।”

ওই সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “রাশিয়ার শত শত জাহাজ আছে। এর মধ্যে ৬৯টি জাহাজের উপর নিষেধাজ্ঞা আছে। এগুলো ছাড়া যে কোনোটাতে মালামাল পাঠাতে পারত।”