“একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে যেখানে সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন, সেখানে আমাদের বাহিনীরও ৪৪ জন সদস্য শহীদ হয়েছেন,” বলেন তিনি।
Published : 07 Oct 2024, 05:10 PM
নিষিদ্ধ ঘোষিত হিজবুত তাহরীর বা অন্য কোনো সংগঠনের ‘জঙ্গি ভাবাদর্শে’ কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ নেই বলে সতর্ক করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক ময়নুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, “কেউ জঙ্গি তৎপরতা করবে বা আইএসআই বা অন্য কোনো সংগঠনের ভাবাদর্শে চলবে- এটার কোনো সুযোগ নাই। ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের মূল মিডিয়া সমন্বয়ককে আমরা গ্রেপ্তার করেছি।”
সোমবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
সম্প্রতি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একদল তরুণ ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাদের হাতে কালেমা লেখা কালো ও সাদা পতাকা যেমন দেখা গেছে, তেমনই কপালেও দেখা গেছে কালেমা লেখা কাপড়।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইজিপি বলেন, “যারা তথাকথিত পতাকা নিয়ে হঠাৎ করে ঝটিকা মিছিল করেছে, গত দুইদিন আগে এমন তিনজনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এ ধরনের কোনো তৎপরতার সুযোগ নাই। যারা নিষিদ্ধ সংগঠন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে।”
তবে ইসরায়েলের আগ্রাসনের মতো বিষয়ে প্রতিবাদ জানানোর অধিকার সবারই আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা স্বাধীনভাবে বিভিন্ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তাদের মতামত তুলে ধরতে চায়- যেমন ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলের যে আগ্রাসন, এটির বিরুদ্ধে অনেকে মিছিল-মিটিং করছে; সেটি একটি পক্ষ আছে।
“প্রত্যেকে তার যে নাগরিক স্বাধীনতা, সংগঠন ও অ্যাসেম্বলির স্বাধীনতা, সেগুলো আমরা দেখতে চাই। সে যেন স্বাধীনভাবে এই বাংলাদেশে এটা প্রয়োগ করতে পারে।”
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে যেসব ‘জঙ্গি’ ও ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ কারামুক্ত হয়েছে, তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জামিন পান বলে ভাষ্য আইজিপি ময়নুলের।
“জামিন হিসাব করে দেখেছি, যেসব জঙ্গি এবং সস্ত্রাসীদের কথা বলা হচ্ছে- তাদের জামিন কার্যক্রমটা অনেক আগের। বিগত সরকারের সময়ের। তারা কোনো কারণে তখন বের হতে পারে নাই বা বের হয় নাই।”
তবে তাদের উপর পুলিশের নজরদারি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কেউ যদি আবারও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত হয়ে পড়ে, কেউ যদি জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত হয়- সেক্ষেত্রে তাদেরকে ‘বিহাইন্ড বা বাস্ক’ থাকতে হবে, তাদের বাইরে আসার সুযোগ নাই।”
অনুপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা শুরু
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশপ্রধান ময়নুল ইসলাম বলেন, “একটা বিষয় যারা বিভিন্ন মামলায় আসামি হয়েছে, এখানে আমাদের অনেক পুলিশ সদস্য রয়েছেন। যেসব সদস্যের সম্পৃক্ততা আমরা পেয়েছি, ইতোমধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করেছি। সিনিয়র কর্মকর্তা, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা মিলে এই সংখ্যাটা ১৭ জন।
“এছাড়া অনেক সদস্য আছে, যাদেরকে মামলার আসামি হয়েছে এবং অনেকে আছে- যারা বিভিন্ন কারণে হয়তো কর্মস্থলে থাকছেন না।”
তিনি বলতে থাকেন, “আমাদের যে বিপ্লব, দ্বিতীয় বিপ্লব বলছি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে অনেকেই যারা সে সময় একসেস (বাড়াবাড়ি) করেছে, তারা কিন্তু নাই। কিন্তু সংখ্যাটা নিতান্তই অল্প।
“ইউনিট ওয়াইজ হিসাব করে দেখেছি, সংখ্যাটা হচ্ছে মাত্র ১৮৭ জন। ২ লাখ ১৪-১৫ হাজার সদস্যের একটা বাহিনী, সেখানে ১৮৭ জন যেকোনো সময় বিভিন্ন কারণে গরহাজির হতে পারে।”
আইজিপি বলেন, “যারা গরহাজির সদস্য- ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল অ্যাকশন শুরু হয়েছে। কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে তারা কেন গরহাজির, নোটিস করা হয়েছে।
“তারা যদি না আসে, আমাদের ব্যবস্থা ক্লিয়ার- তাদেরকে চাকরিতে রাখার কোনো সুযোগ নাই।”
পুলিশের মনোবল ‘ফিরছে’
পুলিশপ্রধান ময়নুল বলেন, “একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে যেখানে সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন, সেখানে আমাদের বাহিনীরও ৪৪ জন সদস্য শহীদ হয়েছেন।
“তার প্রেক্ষিতে আমাদের বাহিনীর ভেতরে নিচের দিকে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য ছিল। এর প্রেক্ষিতে রাজারবাগে অনেক ধরনের সিচ্যুয়েশন তৈরি হয়েছিল। এ অবস্থা থেকে তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনার যে কার্যক্রম, সেটা কিন্তু চলমান আছে।
তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে সবাই সবজায়গায় কাজ করছে। মনোবল ফিরিয়ে আনার বড় কাজ হচ্ছে- পুরনো যারা কোনো একটা জায়গায় দীর্ঘদিন কাজ করেছে, নানা কারণে তাদের কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু বাধা-বিপত্তি তৈরি হয়েছে; তাদেরকে আমরা সরিয়ে সেখানে নতুন জনবল দিয়েছি।”