যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর একটি পোস্ট শেয়ার করার পর বিষয়টি সামনে আসে।
Published : 19 Mar 2025, 05:33 PM
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সব ওয়ার্ডে ‘বিশেষ এক চক্রের প্রশাসক হয়ে ওঠা’ নিয়ে বিতর্ক সামনে আসার পর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।
সেখানে তিনি লিখেছেন, “প্রশাসক নিয়োগ হবার আগে আমাকেও একটু দয়া করে জানাবেন।
“যেহেতু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছি, এতটুকু জানার অধিকার আমারও আছে।”
মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের (সামি) নিজের ফেইসবুকে সৈয়দ সামির ফাইয়াজ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর একটি পোস্ট শেয়ার করার পর বিষয়টি সামনে আসে। তারপর বুধবার সকালে ফেইসবুকে এই পোস্ট দিয়েছেন উপদেষ্টা।
যে ফেইসবুক আইডি থেকে উপদেষ্টা এই পোস্ট দিয়েছেন সেটি উপদেষ্টা নিজে ও তার অ্যাডমিন প্যানেল ব্যবহার করে থাকেন বলে নিশ্চিত করেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. নূর আলম। আসিফ মাহমুদ এ মন্ত্রণালয়েরও উপদেষ্টা।
সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের ফাইয়াজের পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন, “ঢাকা মহানগরীর ১২৯টি ওয়ার্ডেই বিশেষ একটি চক্রের যোগসাজশে প্রশাসক/কমিশনার নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এভাবে নিজ পছন্দের লোক ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে বসালে দেশে একটা নতুন অস্থিরতার ক্ষেত্র তৈরি হবে।”
ফাইয়াজের যে পোস্টটি তিনি শেয়ার করেছেন সেখানে কয়েকটি স্ক্রিনশট যুক্ত করা হয়েছে। ফাইয়াজের ওই পোস্টে বলা হয়েছে, একদল নিজেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংগঠক হিসেবে দাবি করছেন, আগে তারা জাতীয় নাগরিক কমিটিতে ছিলেন। এখন তারা ওয়ার্ডের অস্বচ্ছলদের তালিকা নিচ্ছেন ও একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য চাচ্ছেন।
ফাইয়াজের বলেছেন, তারা এও বলছেন যে ঈদ সামনে রেখে সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় এনসিপির সহযোগিতায় অস্বচ্ছল ভোটারদের ঈদ উপলক্ষে অনুদান দেওয়া হবে; ‘সিটি কর্পোরেশন বরাদ্দ দিবে, অর্থায়ন করবে। বাস্তবায়ন করবে নাগরিক পার্টি’।
তবে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান (তুহিন) পুরো বিষয়টিকে ‘মিডিয়া ট্রায়ালের মত চলছে’ বলে তুলে ধরার পাশাপাশি এটাকে ‘ষড়যন্ত্রের অংশ’ হিসেবে দেখছেন।
তার ভাষায়, “প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি পুরোপুরি সরকারের এখতিয়ার। কাকে বসাবে না বসাবে এটা তাদের ব্যাপার। দল হিসেবে এনসিপি এ ধরণের কার্যক্রমের সাথে কোনোভাবেই জড়িত না।
“যদি কেউ প্রমাণ দেখাতে পারে, ওপেন চ্যালেঞ্জ আমাদের পক্ষ থেকে। এনসিপির এত সময় নাই কোথায় কাকে নিয়োগ দেবে, এটা দেখবে। সামাজিক মাধ্যমে কেউ একজন বলল, অনেক কথাই তো বলতে পারে…, ফেইসবুকে কে কী বলল, এটা বিষয় না। সত্য তথ্য নিয়ে হাজির হোক কেউ যে এর সাথে এনসিপি জড়িত।”
এটি কেবল সামাজিক মাধ্যমে উঠায় এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে তদন্তের কোনো আলাপ উঠছে কি না, প্রশ্ন করলে তিনি তা নাকচ করে দেন।
উপদেষ্টার পোস্টে দেওয়া ইঙ্গিতের বিষয়ে তিনি বলেন, “উপদেষ্টা কী ইঙ্গিত দিছেন এটা উপদেষ্টাই বলতে পারবেন। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি স্যাটায়ার স্ট্যাটাস দিছেন। যেহেতু কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে বলে ইয়ে (অভিযোগ) করছে।”
কী ছিল অভিযোগে?
নিজের ফেইসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে ফাইয়াজ লেখেন, “লিস্টে থাকা এনসিপির ভাইব্রাদারদের কাছে জানার জন্য একটা পোস্ট:
“আমার নির্বাচনী এলাকায় গত ডিসেম্বরে জানাকের (জাতীয় নাগরিক কমিটি) একটা কমিটি হয়েছে। জুলাই অগাস্টে তাদের ভূমিকা কি ছিল কিংবা কাদের দ্বারা তারা নির্বাচিত হয়েছেন জানা নেই। বর্তমানে তারা এনসিপির সংগঠক হিসেবেও দাবি করছেন নিজেদের। তাদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও আছে যেখানে তারা এলাকার অনেককে এড করেছেন।”
তার ভাষ্য, “আজকে সে গ্রুপে দেখলাম তারা সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় এনসিপির সহযোগিতায় অস্বচ্ছল ভোটারদের ঈদ উপলক্ষে অনুদান দিবেন। একটু খটকা লাগলো। তাদেরকে প্রশ্ন করলাম এখানে এনসিপির ভূমিকা কি? তাদের নিজস্ব স্থানীয় উদ্যোগ নাকি তত্ত্বাবধান?
“তারা জানাল সিটি করপোরেশন বরাদ্দ দিবে, অর্থায়ন করবে। বাস্তবায়ন করবে নাগরিক পার্টি। ব্যাপারটা ঠিক বোধগম্য হল না। সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ হলে তা রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে কেন? বাস্তবায়ন হলেও এই ক্যাশ ফ্লো-টা কাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। কারা অস্বচ্ছল তা নির্ধারণ করবে কে? কতগুলো স্ক্রিনশট সংযুক্ত করলাম।”
তার পোস্টের পর মোহাম্মদপুর থেকেও একইরকম অভিযোগ পান বলে তিনি আরেকটি পোস্টে যুক্ত করেন।
তিনি লেখেন, “আমি পোস্টটা দেওয়ার পর মোহাম্মদপুরের এক ভাই ইনবক্সে জানালো তার নির্বাচনী এলাকাতেও একই ঘটনা। স্ক্রিনশট যুক্ত করলাম। যা বুঝলাম ঢাকা মহানগর উত্তরের অধীন সব ওয়ার্ড কমিটিতেই একই কাহিনী। এই ব্যাপারে ভাই বোনদের বক্তব্য কি?”
ফাইয়াজের এই পোস্টটি শেয়ার দিয়েই সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের ‘প্রশাসক নিয়োগের’ বিষয়টি সামনে আনেন। ফাইয়াজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।