প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “এটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই জীবনগুলো অনেক মূল্যবান।”
Published : 16 Aug 2022, 02:27 PM
ঢাকার উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কংক্রিটের গার্ডার আছড়ে পড়ে হতাহতের ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা এসেছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে এসে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “বিআরটি প্রকল্পের দুর্ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। এবং দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন।”
সোমবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরায় জসীম উদ্দীন বাস স্ট্যান্ড এলাকার প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনের সড়কে বিআরটি প্রকল্পের কংক্রিটের গার্ডার ক্রেইন দিয়ে তোলা হচ্ছিল ট্রেইলারে। এর মধ্যে ভারসাম্য হারিয়ে ক্রেন একদিকে কাত হয়ে যায়।
তখন ক্রেইনে থাকা গার্ডারটি ওই ট্রেইলারের পাশ দিয়ে টঙ্গীমুখী সড়কে চলমান একটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে। ভারী ওই গার্ডারের চাপে মুহূর্তের মধ্যে চ্যাপ্ট হয়ে যায় গাড়িটি। ততে গাড়ির ভেতরেই মৃত্যু হয় এক পরিবারের পাঁচজনের, দুজনকে উদ্ধার করে পাঠানো হয় হাসপাতালে।
পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, “উত্তরায় যে কাণ্ডটা হল, এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খুবই মর্মাহত হয়েছেন। তিনি বলেছেন- এটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই জীবনগুলো অনেক মূল্যবান।
“ওই ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, বলেছেন, প্রকল্প পরিচালক, ঠিকাদার বা প্রকল্পের যারা জড়িত হয়, তাদেরকে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”
উত্তরার ঘটনায় নিহতদের পরিবার ইতোমধ্যে একটি মামলা করেছে। চীনা ঠিকাদার কোম্পানি, ক্রেইন চালক এবং প্রকল্পের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলায় এই প্রাণহানি হয়েছে বলে সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে।
গার্ডার দুর্ঘটনা: ক্রেইন চালক, ঠিকাদার কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা
গার্ডার সরাতে ৩ ঘণ্টা: ‘অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ির ভেতর মরতে দেখলাম’
গার্ডার চাপায় চিড়ে চ্যাপ্টা গাড়ি, ভেতরেই গেল ৫ প্রাণ
গার্ডার চাপায় চিড়ে চ্যাপ্টা গাড়ি, ভেতরেই গেল ৫ প্রাণ
নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ: মেয়র আতিক
গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) আওতায় গাজীপুর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত এ উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। গাজীপুর ও টঙ্গী থেকে ঢাকায় যাওয়া ও আসার পথে যানজট কমাতে হাতে নেওয়া আলোচিত এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০১২ সালে।
মূল প্রকল্প গাজীপুর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত যেটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। আর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অংশ উত্তরা হাউজ বিল্ডিং হতে টঙ্গী চেরাগ আলী মার্কেট পর্যন্ত। চীনের চারটি কোম্পানি এই প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে।
সোমবার উত্তরার যে এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই অংশের বিআরটির কাজ করছে ঠিকাদার কোম্পানি চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি)।
এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাসের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করবে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট অনেকটাই কমে যাবে।
প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন ২০১২ সালে হলেও শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালে। নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।