নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ: মেয়র আতিক

মেয়র বলেছেন, এ প্রকল্পের কাজ চলার সময় নিরাপত্তার যেসব ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2022, 07:12 AM
Updated : 16 August 2022, 07:12 AM

উত্তরায় ক্রেইন থেকে কংক্রিটের গার্ডার পড়ে পাঁচজনের মৃত্যুর পর ঢাকার বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের সব ধরনের কাজ আপাতত বন্ধ ঘোষণা করেছেন উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

দুর্ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, “নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ঢাকায় বিআরটিএ প্রকল্পের সব ধরনের কাজ বন্ধ থাকবে।”

সেখানে উপস্থিত বিআরটি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সামনেই মেয়র বলেন, এ প্রকল্পের কাজ চলার সময় নিরাপত্তার যেসব ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি।

“ফলে কিছু দিন পরপরই দুর্ঘটনা ঘটছে। জনদুর্ভোগ বাড়ছে। এভাবে উন্নয়ন কাজ চলতে দেওয়া যাবে না। আগে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”

বিআরটি কর্তৃপক্ষ, সড়ক বিভাগের সচিবের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে মেয়র আতিক বলেন, “আমি বলেছি, বিআরটির কাজ বন্ধ করে দেব। আপনারা আমার সঙ্গে পরশু বসবেন। "

Also Read: গার্ডারে গাড়ি চাপা পড়ে প্রাণহানি: নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

Also Read: এক বিআরটিতেই বারবার গার্ডার দুর্ঘটনা

Also Read: গার্ডার চাপায় চিড়ে চ্যাপ্টা গাড়ি, ভেতরেই গেল ৫ প্রাণ

বিআরটি, মেট্রোরেলসহ ঢাকায় যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে সেগুলোর পরিচালকদের আগামী বৃহস্পতিবার নগর ভবনে ডাকা হয়েছে বলে জানান মেয়র।

তিনি বলেন, "সেখানে তাদের সঙ্গে আমি কথা বলব। প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই কাজ শুরু করতে পারবে “

সোমবার বিকালে উত্তরার জসিম উদ্দীন রোডের মাথায় প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে বিআরটি প্রকল্পের একটি বিশালাকার গার্ডার ক্রেন থেকে আছড়ে পড়ে একটি প্রাইভেট কারের ওপর। এতে প্রাইভেটকারের মধ্যেই মারা যান দুই শিশু ও দুই নারীসহ পাঁচজন।

ওই পরিবারের আরও দুই সদস্যকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, মাত্র দুদিন আগে বিয়ে হয়েছে তাদের।

চাপা পড়ে থাকার তিন ঘণ্টা পর গার্ডার সরিয়ে ও গাড়ি কেটে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলে স্বজনদের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি তৈরি হয়।

মর্মান্তিক এই ঘটনার পর ব্যস্ত সড়কের মাঝখানে নিরাপত্তা বেষ্টনী ‘না রেখে’ বিআরটি প্রকল্পের কাজ করা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা যায়, ৫০ টন ওজনের গার্ডারটি প্রাইভেটকারে আছড়ে পড়ার আগ মুহূর্তে সেটি যখন শূন্যে ঝুলছিল, তখনও তার ঠিক নিচ দিয়ে কয়েকটি গাড়ি দ্রুত পার হচ্ছিল।

এ ছাড়া ৫০ টন ওজনের গার্ডার বহনকারী ক্রেইনের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। যদিও ক্রেইনটির সক্ষমতা ৮০ টন বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ।

হতাহতের ওই ঘটনায় ‘অবহেলার কারণে মৃত্যুর’ অভিযোগে ক্রেইন চালকের পাশাপাশি প্রকল্পের ঠিকাদার চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশনের (সিজিজিসি) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে নিহতদের পরিবার।

গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) আওতায় গাজীপুর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। গাজীপুর ও টঙ্গী থেকে ঢাকায় যাওয়া ও আসার পথে যানজট কমাতে হাতে নেওয়া আলোচিত এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০১২ সালে।

মূল প্রকল্প গাজীপুর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত যেটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। আর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অংশ উত্তরা হাউজ বিল্ডিং হতে টঙ্গী চেরাগ আলী মার্কেট পর্যন্ত। চীনের চারটি কোম্পানি এই প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে।

সোমবার উত্তরার যে এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই অংশের বিআরটির কাজ করছে ঠিকাদার কোম্পানি চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি)।

এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাসের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করবে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট অনেকটাই কমে যাবে।

প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন ২০১২ সালে হলেও শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালে। নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।