এ মামলায় ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল।
Published : 20 Apr 2025, 05:24 PM
‘জোরপূর্বক গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ অভিযোগে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৪ জুন দিন ধার্য করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেয়।
ট্রাইব্যুনালে এই মামলার অন্যতম আসামি র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে হাজির করা হয়।
শুনানিতে ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম দাবি করেন, গত দেড় দশকে জোরপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত অসংখ্য হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
তিনি বলেন, “২০০ গুমের ঘটনার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আট/নয় শত গুমের ঘটনা ঘটেছে। গুমের শিকার ৩০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থা এসব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে এবং করছে।” একইসঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে দুই মাস সময় চান তিনি।
তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, এসব হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে জিয়াউল আহসানকে।
গুমের মামলায় ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
প্রধান কৌঁসুলি বলেন, তদন্ত সংস্থা ইতোমধ্যে গুমের স্থানগুলো পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে উত্তরায় র্যাব-১ এর কার্যালয়ে অবস্থিত ‘বন্দিশালা’, যেখানে ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের’ নিয়ে রাখা হত। আরেকটি স্থান হচ্ছে আগারগাঁওয়ে র্যাব-২ এর কার্যালয়; সেখানে ‘গুমঘর’ রয়েছে। কচুক্ষেত এলাকায় যে ‘আয়নাঘর’, যা জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল নামে পরিচিত, সেখানে গুম করে রাখা ব্যক্তিদের ‘আলামত’ পাওয়া গেছে। এছাড়া গুমের পর বন্দিদের উপর নির্যাতনে ব্যবহৃত ‘সামগ্রীও পাওয়া গেছে’ এসব আয়নাঘরে।
তার দাবি, এসব আয়নাঘরের আকৃতি পরিবর্তন করা হয়েছে। গুমের আলামত নষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে, যা তদন্তে পাওয়া গেছে।
তাজুল ইসলাম দাবি করেছেন, গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, এমপি, দলীয় নেতা এবং র্যাব, সিটিটিসিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
‘গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার’ অভিযোগে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনাসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।
অন্যদের মধ্যে আছেন, সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ।
গুম: ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মাইকেল চাকমার অভিযোগ
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে এবার 'গুমের' অভিযোগ
শেখ হাসিনা গতবছরের ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। তিনি এখনো ভারতেই আছেন।
ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি গুমের অভিযোগ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারেরে গঠিত গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গত ১৫ ডিসেম্বর যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।