জনগণের সম্পত্তি নষ্ট ও ‘সংঘাত’ করলেই শুধু সরকার ব্যবস্থা নেয়, এমন বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রকে জানানোর কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল।
Published : 15 Jan 2023, 06:27 PM
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু এর ঢাকা সফরের বিভিন্ন আলোচনায় ঘুরে ফিরে বাংলাদেশের রাজনীতি ও আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গ এসেছে।
রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাতেও ওই প্রসঙ্গ আসে।
দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মধ্যাহ্নভোজের সময় রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে সফরকারী এ মার্কিন কূটনীতিকের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “তিনি কিছু জানতে চেয়েছেন। ১০ ডিসেম্বর যে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদেরকে (বিএনপিকে সমাবেশ) ব্যবস্থা করে দিয়েছি, এজন্য তারা খুশী হয়েছেন।
“তারা বলেছেন, সবারই রাজনীতি করবার অধিকার আছে। আমরা বলেছি, আমরা সেটা মানি, সেজন্য তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছেন, তারা অবস্থান নিচ্ছেন, সেগুলোতে আমাদের কোনো বাধা নাই।”
বিচারবহির্ভূত হত্যা কমাতে র্যাবের কাজে উন্নতি দেখছেন ডনাল্ড লু
জনগণের সম্পত্তি নষ্ট ও ‘সংঘাত’ করলেই শুধু সরকার ব্যবস্থা নেয়, এমন বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রকে জানানোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা শুধু তারা যদি পাবলিক প্রপার্টি নষ্ট করে, ফায়ার ওপেন করে কিংবা রাস্তাঘাট বন্ধ করে তখন আমরা তাদেরকে নিষেধ করি।
“তাছাড়া তারা মুক্ত। তারা রাজনৈতিক দল, তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে এবং ১০ তারিখেও করেছে, কিছুদিন আগেও করেছে এবং সবার জন্যই এটা উন্মুক্ত আছে, আমরা কাউকে বাধা দিচ্ছি না।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মধ্যাহ্নভোজে যান ডনাল্ড লু।
দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ওই বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়ে সেখানে কথা বলেছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লু দুই দিনের সফরে শনিবার ঢাকায় আসেন। সফরকালে সরকারের নীতি নির্ধারক ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সঙ্গে তার বৈঠক করার কথা জানিয়েছিল মার্কিন দূতাবাস।
নির্বাচন নিয়ে দুপুরে কী আলোচনা হয়েছে- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “নির্বাচনের কথা আমরা আগেই বলে দিয়েছি যে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন একটা হওয়ার জন্য, সেজন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী কাজ করছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কাউকে বাধা দিচ্ছেন না তাদের মতামত প্রকাশ করার জন্য।
“এটা তিন মাস আগে সমস্ত নিরাপত্তা বাহিনী, সমস্ত কিছু নির্বাচন কমিশনের কাছে চলে যাবে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবেন তিনি। আমরা তার আগ পর্যন্ত যাতে পিসফুল পরিবেশ থাকে, সেটা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি।”
র্যাব নিয়ে সরকার এখন যে প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে, সেটাকে যুক্তরাষ্ট্র সাধুবাদ জানিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল।
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা এবং দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে র্যাবকে নিয়ে প্রশংসা করেন লু।
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবসহ এ বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা বলা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। লুর সঙ্গে বৈঠকেও বিষয়টি ওঠে।
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল র্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে এক প্রশ্নে বলেন, “দ্বিতীয় কথা আসছে যে, তারা আমাদের বর্তমান অ্যাক্টিভিটিজের সাথে পরিচিত। আমরা, যেভাবে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করেছে, এ দেখে তারা সন্তুষ্ট। তারা বলেছেন. অনেক অগ্রগতি হয়েছে, আমরা চাই এই অগ্রগতি যেন তোমাদের সবসময় থাকে। পাশাপাশি প্রশ্ন এসে যায় যে, আপনারা যে প্রশ্নটি করলেন…
“তারা বলেছেন ‘এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া আমাদের দেশে। এটা একটু সময় নিতে পারে, তোমরা যে প্রসেসে অ্যাডভান্স হচ্ছ, কাজ করছো, আমার মনে হয় এটা ভবিষ্যতে ক্লিয়ার হয়ে যাবে’; এই রকমই তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন।”
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো সময়সীমা যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কোনো টাইমফ্রেম তারা বলে নাই।
“তারা বলেছে, এটা একটি জটিল প্রক্রিয়া, স্যাংকশন উইড্রো করাটা একটা জটিল প্রক্রিয়া। এবং সেই প্রক্রিয়াটা তোমাদেরকে ফুলফিল করতে হবে। আমরা মনে করছি, আমরা সেই পথেই এগোচ্ছি। এবং তিনি বলেছেন, তোমরা রাইটলি এগোচ্ছ, তোমরা যে পথে এগোচ্ছ সেটা সত্যিকারের পথ।”
র্যাবের সংস্কারের বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে, এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “র্যাবের সংস্কার নিয়ে কোনো কথা হয়নি। বরং তারা বলেছেন, র্যাব এখন যে কাজগুলো করছে, এটা সন্তোষজনক, আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যে প্রসেসে এগোচ্ছি, সেটাই প্রসেস। সেই প্রসেসে এগোলেই এটার মীমাংসা হয়ে যাবে।”