দশমীর দিন সিঁদুর খেলা, দুর্গাকে মিষ্টি মুখ করানো এবং প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রার আয়োজন রাখা হয়েছে।
Published : 13 Oct 2024, 02:48 PM
শঙ্খনাদ-উলুধ্বনি, ঢাকের বাদ্যি এবং সধবাদের সিঁদুর খেলার আচারে দেবী দুর্গাকে অশ্রুভেজা ভালোবাসায় বিদায় দিচ্ছেন তার ভক্তরা।
এবারের দুর্গোৎসবে তিথির কারণে নবমীর দিনই বিহিত পূজা এবং 'দর্পণ বিসর্জন' হলেও, রোববার দশমীর দিন সিঁদুর খেলা, দুর্গাকে মিষ্টি মুখ করানো এবং প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রার আয়োজন রাখা হয়েছে।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বেলা ১১টা থেকে একে দুর্গার কপালে এবং অন্যের গালে-কপালে সিঁদুর মাখানোর আনুষ্ঠানিকতায় মেতে উঠেন ভক্তরা। এ সময় নাচে-গানে আনন্দময়ীর বন্দনা করেন তারা। দুর্গার নামে জয়োধ্বনিও তোলেন।
মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সিঁদুর হলো সধবা নারীর প্রতীক। সধবা নারীরা সিঁদুর দিয়ে সংসারের জন্য কল্যাণের প্রার্থনা করেন।"
সিঁদুর খেলা কেন হয় জানতে চাইলে প্রণব চক্রবর্তী বলেন, "আমরা কর্মের প্রয়োজনে নানা জায়গায় ছড়িয়ে থাকি। মায়ের আগমনের সাথে সাথে সংসারের সকলে একত্রিত হয়েছি। মায়ের বিদায়ের সাথে সাথে আমরাও আবার ছড়িয়ে যাব। এই বিদায় মুহূর্তে আমরা একে অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করি এবং সকলের যেন কল্যাণ হয় তার জন্যই এ সিঁদুর খেলি।
“বিশেষ করে সধবা নারীরা সংসারের কল্যাণের জন্য এই সিঁদুর খেলায় অংশ নেন। এটি আমাদের পারস্পরিক ঐক্য, সোহার্দ্য বজায় রাখার বার্তা দেয়।"
হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন দেবীদুর্গা। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
মহালয়ার মধ্য দিয়ে ২ অক্টোবর এবারের দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছিল। ওইদিন থেকেই দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয়। এরপর গত বুধবার ষষ্ঠী থেকে পাঁচ দিনের যে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছিল, এদিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হতে চলেছে।
মাঝে বৃহস্পতিবার নবপত্রিকায় প্রবেশ ও স্থাপনে হয় মহাসপ্তমী। পরদিন শুক্রবার সকালে কুমারী পূজার পাশাপাশি মহাঅষ্টমীর বিহিত পূজা এবং সন্ধিপূজা হয়। শনিবার নবমী এবং দশমীর বিহিত পূজার পাশাপাশি শাস্ত্রীয় মতে 'দর্পন বিসর্জন' করা হয়।
ঢাকেশ্বরীর প্রধান পুরোহিত ধর্মদাস চট্টোপাধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মায়ের কাছে আমরা জগত সংসারের সবার জন্য মঙ্গল কামনা করেছি। মা তার মহিমা দিয়ে আমাদের সবাইকে ভালো রাখবেন এই প্রত্যাশা রেখেছি। মা তো দশভূজা, তিনি দশ হাতে যেন আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনেন, সেই প্রত্যাশা রেখেছি।"
লালবাগের কিশোর দাস ঢাকেশ্বরীতে এসেছিলেন তার নব বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে।
তিনি বলেন, "এবারই আমাদের প্রথম দুর্গা পূজা উদযাপন। ছয় মাস আগে বিয়ে করেছি। একসঙ্গে আনন্দ করছি। আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় দাওয়াত করেছি, নিজেরাও যাচ্ছি। সব মিলিয়ে আনন্দের মাঝেই কেটেছে পূজার দিনগুলো। সামনের দিনগুলো সবার ভালো হোক।"
ঢাকেশ্বরীসহ ঢাকার রমনা কালী মন্দিরাসহ দেশের বিভিন্ন মন্দির মণ্ডপে বিজয়া দশমীতে সিঁদুর খেলায় মেতেছেন সনাতন ধর্মের অনুসারীরা।
রমনা কালী মন্দিরে দুপুর ১২টায় গিয়ে দেখা যায়, মণ্ডপে নাচে-গানে মেতেছেন অনেকে।
'আসছে বছর আবার হবে' বলে অনেকে স্লোগানও দিয়েছেন।
সন্তানকে কোলে নিয়ে ঊর্মিলা চক্রবর্তী মণ্ডপে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন, এর ফাঁকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "স্বামী-সন্তানকে নিয়ে মায়ের কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি। আমরা যেন ভালো পথে চলতে পারি। আমার সন্তান যেন ভালো মানুষ হয়।"
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের পুরোহিত রাজিব চক্রবর্তী জানিয়েছিলেন, শাস্ত্র মতে, দুর্গা এবার মর্ত্যে এসেছেন দোলায় চেপে, ফিরছেন ঘোড়ায় চড়ে।
দশমীর দিন রক্তদান কর্মসূচিরও আয়োজন রেখেছে পূজা উদযাপন পরিষদ।
বিকেল ৩টায় ঢাকার পলাশীর মোড় থেকে প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা বের করবে পূজা উদযাপন পরিষদ।
এবার দেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্দির ও মণ্ডপে এবার পূজা হয়েছে; আর ঢাকা মহানগরে এবার পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২৫২টি।