আপত্তি ওঠার পর বিতর্কিত বইটি মেলায় ‘প্রদর্শন না করার শর্ত’ মেনে নিয়ে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আদর্শ স্টল বরাদ্দের আবেদন করলেও আগের সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে বাংলা একাডেমি।
এতে এবারের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশনীটি স্টল বরাদ্দ পাচ্ছে না।
রোববার বিকালে অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ এর পরিচালনা কমিটির সভায় আগের সিদ্ধান্ত বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়; যা রাতেই চিঠির মাধ্যমে আদর্শকে জানানো হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান এটির স্বত্ত্বাধিকারী ও প্রধান নির্বাহী মাহাবুব রাহমান।
চিঠিতে বাংলা একাডেমি জানায়, “সবদিক বিবেচনা করে বইমেলা পরিচালনা কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে আদর্শ এর অনুকূলে স্টল বরাদ্দ প্রদান না করার পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে।”
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মাহাবুব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নীতিমালা মানার পরও স্টল দেওয়া হল না। বাংলা একাডেমি অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক আচরণ করছে। আমাদের উপর জুলুম করছে। এটা অন্যায়।”
বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “সোমবার সকালেই আমি আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী করণীয় চূড়ান্ত করব। আমি আইনের আশ্রয় নেব। বাংলা একাডেমি এমন অসাংবিধানিক আচরণ করতে পারে না।”
এর আগে বাংলা একাডেমির ব্যাখ্যাসহ আদর্শকে স্টল বরাদ্দের লটারির জন্য বিবেচনা না করার সিদ্ধান্ত জানানোর দুদিন পর প্রকাশনীটির পক্ষ থেকে মেলার নীতিমালা মেনে বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়।
প্রথমে মেলা আয়োজক কমিটির শর্ত মানতে না চাইলেও মাহাবুব বলেন, “
নীতিমালা মেনে নেওয়ার কথা জানিয়ে আমি বাংলা একাডেমিকে গত ২৪ জানুয়ারি চিঠি দিয়েছি। বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় যে বইটি নিয়ে আপত্তি রয়েছে, সেই বইটি মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রি থেকে বিরত থাকব এবং বইমেলার নীতিমালা অনুসরণ করব বলেও জানিয়েছি।
“তবুও আমাদের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হলো না।”
বাংলা একাডেমি গত ২২ জানুয়ারি বইমেলার স্টল বরাদ্দ সংক্রান্ত শর্ত মেনে চলতে ‘অস্বীকৃতি জানানোর’ কারণ দেখিয়ে ‘আদর্শ’কে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে না বলে ব্যাখ্যা দেয়।
তারও দুই দিন আগে বইমেলার স্টল বরাদ্দের তালিকায় নাম না থাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন আদর্শ’র প্রধান নির্বাহী মাহাবুব।
তখন তিনি অভিযোগ করে বলেন, “বাংলা একাডেমি মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যেখানে সংবিধানের ৩৯ নম্বর ধারায় প্রত্যেক নাগরিকের চিন্তা, বিবেক, বাক ও ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের কথা বলা হয়েছে, সেখানে বাংলা একাডেমি কোন যুক্তিতে সংবিধানবিরোধী অবস্থান নেয়?"
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’, ফাহাম আব্দুস সালামের ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ ও জিয়া হাসানের ‘উন্নয়ন বিভ্রম’ বই দেখিয়ে আদর্শ’র কর্ণধার বলেন, এ তিন বইয়ের জন্যই স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি বলে বাংলা একাডেমির লোকজন মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।
রোববার রাতে মাহাবুব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরে জেনেছি তিনটি বই নয়, বাংলা একাডেমি মূলত একটি বই নিয়েই আপত্তি করেছে। তাদের শর্ত মানলে আমাকে স্টল দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আশ্বাসও দেওয়া হয়।”
স্টল বরাদ্দের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককে দেওয়া আবেদনে মাহাবুব ২০২২ সালে আদর্শ থেকে প্রকাশিত ফাহাম আব্দুস সালামের ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ বইটি নিয়ে বিতর্ক ওঠায় তা ‘বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায়’ মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রি থেকে বিরত থাকবেন বলে জানান।
একই সঙ্গে বইমেলার নীতিমালা অনুসরণের কথাও জানিয়েছিলেন।
বইটি নিয়ে আপত্তির বিষয়ে বাংলা একাডেমি বলছে, “‘আদর্শ’ এর বিতর্কিত বইটির ১৫ নং পৃষ্ঠায় বাঙালি জাতিসত্তা; ১৬ নং পৃষ্ঠায় বিচার বিভাগ, মাননীয় বিচারপতিগণ, বাংলাদেশের সংবিধান, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় সদস্যবৃন্দ; ২০ নং পৃষ্ঠায় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং ৭১ নং পৃষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অশ্লীল, রুচিগর্হিত, কটাক্ষমূলক বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে।
“উপর্যুক্ত বক্তব্য বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯(২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত মত-প্রকাশের স্বাধীনতা, যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে বাক ও ভাব-প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের পরিপন্থি। যারা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন, আমাদের বিশ্বাস তারা এ বিতর্কিত বইটি পাঠ করেননি অথবা পাঠ করলেও বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯(২) এর মর্মার্র্থ অনুধাবন করতে সক্ষম হননি।”