বিপুল সংখ্যক বই ছাপানোর কার্যক্রমে চলমান অস্থিরতার প্রসঙ্গ ধরে এনটিসিবি চেয়ারম্যান জানান, কারও কাছে যেন জিম্মি হতে না হয়, সে পথ খুঁজছেন তারা।
Published : 06 Nov 2022, 01:13 AM
বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়ার এক দশকের রীতিতে ছেদ পড়ছে ছাপানোর জটিলতায়; যে কারণে আগামীর ‘বই উৎসব’ ঠিক সময়ে করতে ছাপা কার্যক্রমের সূচি বদলের চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারী আর যুদ্ধের বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এবারও পহেলা জানুয়ারিতে চার কোটির বেশি শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া নিয়ে চাপে থাকা সরকার বছরের শেষ দিকে এসে ছাপা কার্যক্রম চালানোর চলমান ধারা থেকে সরে আসতে চাইছে।
টানা দুই বছর এ রীতিতে ছেদ পড়ার পর ২০২৩ সালেও এ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৩৫ কোটি বই ছাপানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে অক্টোবরের শেষ দিকে। প্রকাশকরা বলছেন নানা সংকটের কথা।
এমন প্রেক্ষাপটে আগামীতে বছরের শুরুর দিকেই বিশাল এ কর্মযজ্ঞে নামার পরিকল্পনা চলছে জানিয়ে পাঠ্যবই প্রণয়ন ও ছাপানোর তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সংকট নিরসনে তাদের আলোচনায় ঘুরেফিরে এ প্রস্তাব আসছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলামের আশা জানুয়ারিতে পাঠ্যবই ছাপানোর প্রক্রিয়া শুরু করা গেলে আগামীতে নানা ধরনের ‘জটিলতা’ এড়ানো যাবে।
দুই বছরের ধাক্কার পর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিপুল সংখ্যক বই ছাপানোর কার্যক্রমে চলমান অস্থিরতার প্রসঙ্গ ধরে তিনি জানান, কারও কাছে যেন জিম্মি হতে না হয়, সে পথ খুঁজছেন তারা।
"আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আগামী জানুয়ারিতেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, এনসিটিবি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বসে টেন্ডার প্রক্রিয়াটি যেন ভালোভাবে সম্পন্ন হয় সে বিষয়ে আলোচনা করব,“ যোগ করেন তিনি।
কর্মকর্তারা বলছেন, বই উৎসবের মত সরকারের ভালো উদ্যোগে যেন কোনোভাবে সমালোচনায় না পড়ে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে সরকারকে এখন বছরে প্রায় ৩৫ কোটি বই ছাপাতে হয়।
এসব বই বছরের প্রথম দিন উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার কার্যক্রম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার শুরু করে ২০১০ সালে। সেই থেকে ৪০০ কোটির বেশি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
ছাপা নিয়ে একটু এদিক সেদিক হলেও বছরের প্রথম দিনের রীতি বজায় ছিল করোনাভাইরাস মহামারী সংক্রমণ বিস্তারের আগে পর্যন্ত। যে কারণে ২০২১ সালে প্রাথমিকের সব বই বিতরণের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠনো হলেও মহামারীর মধ্যে বই ছাপানোর কাজে বিঘ্ন ঘটায় মাধ্যমিকের সব বই যথাসময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায়নি। এ কারণে সেবার মাধ্যমিকের বই বিতরণ করা হয় কয়েকদিন ধরে।
অপরদিকে দরপত্র জটিলতায় ২০২২ সালেও প্রথম দিন সব বই সব শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া যায়নি; সব বই পেতে অনেক শিক্ষার্থীকে মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।
এ বছর দরপত্র দিতে আরও দেরি করেছে এনসিটিবি। ফলে অক্টোবরের শেষ দিকে ছাপাখানাগুলোতে কাজ শুরু হয়েছে। এতে আসছে জানুয়ারিতেও সব পাঠ্যবই পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সরকারি দরের চেয়ে কম মূল্যে কাজ নেওয়ার পর এখন ছাপাখানার মালিকরা কাগজে শুল্ক ছাড়ের দাবি করছেন।
দেরিতে কাজ পাওয়া, ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে কাগজের বাজারে অস্থিরতা, বিদ্যুৎ বিভ্রাট- সব মিলিয়ে সময়মত বই না দেওয়ার কথা তারা সরাসরিই বলছেন।
তবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে যথাসময়ে বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন।
এনসিটিবির কর্মকর্তাদের দাবি, তড়িঘড়ির কাজে মুদ্রণ কোম্পানিগুলো সুযোগ নিচ্ছে, এ চক্র তারা ভাঙতে চান।
বছরের শেষ দিকের এ তোড়জোড়ের মধ্যে বই দেরিতে দেওয়া ছাড়াও মানহীন কাজের অভিযোগও রয়েছে মুদ্রণ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।
এমন প্রেক্ষাপটে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল জানান, অনিশ্চয়তা আর জটিলতার মধ্যে কারও কাছে যেন জিম্মি হতে না হয়, সে উপায় নিয়ে বসছেন তারা।
"কী করলে যথাসময়ে আমরা কারও কাছে জিম্মি না থেকে বই দিতে পারব- সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। আমরা চেষ্টা করছি, বই নিয়ে যে টানাপড়েন হচ্ছে, সবাই মিলে আমরা যেন সমাধান করতে পারি," বলেন তিনি।
চলতি বছরের দরপত্র দিতে দেরি করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রাথমিকের বই দেশের বাইরে মুদ্রণ করা হবে না কি দেশে থাকবে, এই সিদ্ধান্ত নিতে দুই মাস অতিবাহিত হয়েছে।
"আর এগুলোর সুযোগ নিয়ে ছাপাখানার মালিকরাও কিছু সুবিধা চাচ্ছে আমাদের কাছে।"
বছরের শুরুর দিকেই পাঠ্যবই ছাপানোর প্রক্রিয়া শুরু করলে আগামীতে এসব জটিলতায় পড়তে হবে না বলে মনে করছেন তিনি।