এদিন ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে এসে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকেই হামলার শিকার হয়েছেন; এবং আহতদের অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
Published : 15 Aug 2024, 05:56 PM
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার শোকাবহ দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন যারা, তাদের মধ্যে অন্তত ৩০ জনকে একটি কলেজে ‘আটকে’ রেখেছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। পরে তাদের উদ্ধার করে গাড়িতে করে নিয়ে গেছেন সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা।
এদিন ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে আসা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকেই হামলার শিকার হয়েছেন; আহতদের অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আন্দোলনকারীরা শুক্রাবাদ মোড় থেকে ৩২ নম্বর ও মেট্রো শপিংমলের সামনে অবস্থান নেন। লাঠি ও পাইপ হাতে ৩২ নম্বর সড়কে লেকের পাড়ও তারা দখলে রাখেন।
তারা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার জন্য বা আওয়ামী লীগ পরিচয়ে কেউ এলে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। একটা সময় যারাই শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সেখানে গেছেন, তাদেরকেই মারধর করা হয়েছে।
বিশেষ করে কালো পোশাক বা ব্যাজ পরা কাউকে দেখলে ধাওয়া করা হয়েছে। সন্দেহ হলে মোবাইল ফোনও ঘাঁটাঘাটি করতেও দেখা গেছে।
সকাল ৮টার দিকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা অন্তত ৩০ জন নারী পুরুষের একটি দলকে কিল-ঘুষি মেরে, লাঠিপেটা করে নিউ মডেল কলেজে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে সেনাবাহিনীর চারটি এবং বিজিবির একটি গাড়ি নিউ মডেল কলজের সামনে এসে থামে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গাড়ি থেকে নেমেই হুইসেল বাজিয়ে কলেজের সামনে থাকা আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেন।
পরে কয়েকজন সেনাসদস্য কলেজের ভেতরে ঢুকে আটকে থাকা ব্যক্তিদের বের করে গাড়িতে তোলেন। এর মধ্যে একটি গাড়িতে ৯ জন নারী এবং দুটো গাড়িতে ২০ জনের বেশি পুরুষকে তোলা হয়। এরপর গাড়িগুলোকে পান্থপথের দিকে চলে যেতে দেখা যায়।
এ সময় আন্দোলনকারীরা ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান তোলেন। নিউ মডেল কলেজের সামনে তখন দাঁড়িয়ে ছিলেন ১০ জনের মত সেনাসদস্য।
৩২ নম্বর সড়কের সামনে তখন মাইকে ঘোষণা দিতে শোনা যায়, “সকালে আওয়ামী লীগের দুষ্কৃতকারীরা ৩২ নম্বরের সামনে এসে ঝামেলা করার চেষ্টা করেছিল। ছাত্রজনতা তাদের প্রতিহত করেছে। এখন যাদের ধরবেন, উপযুক্ত প্রমাণ না পেলে কিছুই করবেন না। দুষ্কৃতকারীদের নিউ মডেল কলেজে আটকে রাখবেন।”
আন্দোলনকারীরা ছাড়াও সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও ৩২ নম্বরের সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এছাড়া পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা মেট্রো শপিংমল মোড়েও সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।
সকালে ৩২ নম্বর সড়কের সামনে দিয়ে ঢুকতে না পেরে লেকের পাড় দিয়ে ৩২ এ যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যার্থ হন আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সদস্য জাবের হোসাইন লিখন। বঙ্গবন্ধু ভবনের প্রবেশের চেষ্টা করার সময় লিখনকে মারধর করার অভিযোগ এসেছে। পরে তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়।
যুবমহিলা লীগের একদল নেত্রী ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরের পাশ দিয়ে ৩২ নম্বরের দিকে আসার চেষ্টা করলের তাদের উপর হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা।
ওই দলের আহত এক নেত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মারতে মারতে আমাদের একেক জনকে একেক দিকে নিয়ে গেছে। একজনকে তো তুলে নিয়ে গেছে।”
আবহানী মাঠের পাশ দিয়ে বত্রিশ নম্বরে আসার সমায় মারধরের শিকার হন যুব মহিলালীগের কেন্দ্রীয় এক নেত্রী।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার সামনে আবহানী মাঠের সামনে মোবাইল চেক করে করে অকেককে মারধর করেছে। আমাকে প্রথমে চিনতে পারেনি, পরে কেউ একজন বলে ফেলে যে এ তো যুবমহিলা লীগের নেত্রী, লাঠি দিয়ে আমাকে কয়েকজন যুবক মারধর শুরু করে। পরে কেউ একজন আমাকে ওদের হাত থেকে বাঁচিয়ে পাশে নিয়ে যায়।”
সকাল থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে উপস্থিত কয়েকজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, মাইকে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর যেভাবে মারধর করা হয়েছে, তাতে অন্তত আহতের সংখ্যা শতাধিক হতে পরে।
পুরনো খবর