সন্দেহ হলে মোবাইল পরীক্ষা করে দেখছে আন্দোলনকারীরা। সাংবাদিকদের ছবি তুলতে নিষেধ করা হচ্ছে।
Published : 15 Aug 2024, 10:34 AM
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার শোকাবহ দিনে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়ক, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের আশপাশের রাস্তা ও লেকের পাড় দখলে নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার জন্য বা আওয়ামী লীগ পরিচয়ে কেউ এলে তাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কয়েকজন মারধরের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ এসেছে।
সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ‘জাতীয় শোক দিবস’এর ছুটি বাতিল করেছে। তার মধ্যেই ভিন্ন এক বাস্তবতায় ১৫ অগাস্ট পার করছে আওয়ামী লীগ।
দলটির অধিকাংশ নেতা এখন আত্মগোপনে, ভারতে অবস্থানকারী সভাপতি শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদেরকে দিবসটি পালনে আহ্বান জানিয়েছিলেন, নেতাকর্মীরাও সামাজিক মাধ্যমে ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে যাত্রার ঘোষণা দিয়েছিল।
কিন্তু বুধবার মধ্যরাতেই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীরা ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনের রাস্তায় অবস্থান নেয়। সকাল থেকে সেখানে কাউকে শ্রদ্ধা জানাতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
আন্দোলনকারীরা শুক্রাবাদ মোড় থেকে ৩২ নম্বর ও মেট্রো শপিংমলের সামনে অবস্থান নিয়ে আছেন। কিছুক্ষণ পরপর তারা ছোট ছোট দলে মিছিল করছেন। ধানমন্ডি ২৭ ঘুরে আবার ৩২ এ এসে জড়ো হচ্ছেন। ৩২ নম্বর সড়কে লেকের পাড়ও তারা দখলে রেখেছেন। তাদের অনেকের হাতে লাঠি ও পাইপ দেখা যায়।
৩২ নম্বর সড়কের সামনে দিয়ে ঢুকতে না পেরে লেকের পাড় দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সদস্য জাবের হোসাইন লিখন। বঙ্গবন্ধু ভবনের প্রবেশের চেষ্টা করলে তিনি মারধরের শিকার হন। পরে তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়।
কালো ব্যাজ পরে ৩২ নম্বরে গিয়েও ধাওয়ার মুখে পড়েছেন কেউ কেউ। সন্দেহ হলে মোবাইলও পরীক্ষা করে দেখছে আন্দোলনকারীরা। সাংবাদিকদের ছবি তুলতে নিষেধ করা হচ্ছে।
বিশৃঙ্খলা এড়াতে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ৩২ নম্বরের সামনে অবস্থান করছেন। বেশ কিছু পুলিশ, বিজিবি ও সেনা সদস্যকে মেট্রো শপিংমল মোড়ে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে প্রাণ দিতে হয় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
বঙ্গবন্ধু ছাড়াও তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসেরকে হত্যা করে।
সেই রাতেই নিহত হন বঙ্গবন্ধুর বোনের স্বামী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবী ও শিশুপৌত্র সুকান্ত বাবু; বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত ও রিন্টু।
ধানমন্ডির বাড়িতে পুলিশের বিশেষ শাখার সাব ইন্সপেক্টর সিদ্দিকুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু ভবনের অদূরে নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিলকেও গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় সে সময় প্রাণে বেঁচে যান।
বঙ্গবন্ধুকে জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় দাফন করা হলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের ঢাকার বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন শুরু করে। ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ১৫ অগাস্টের ছুটি বাতিল করে।
পরে ২০০৮ সালে সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে উচ্চ আদালতের আদেশে ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়। রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা পালনের পাশাপাশি ঘোষণা হয় সরকারি ছুটিও।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ১৫ অগাস্টের সাধারণ ছুটি বাতিল করে।
সরকার পতনের আঁচ সেভাবে না পড়া বঙ্গবন্ধুর নিজের জেলা গোপালগঞ্জে অবশ্য বাধাহীনভাবেই নানা আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন রাখা হয়েছে।
কালো ব্যাজ ধারণ, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া ও মোনাজাত, আলোচনা সভা এবং দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণের মত কর্মসূচি রয়েছে সেখানে।