সংঘাত নিয়ে দুই পক্ষের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
Published : 25 Nov 2024, 06:07 PM
ঢাকার বেসরকারি মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রায় দুই ঘণ্টা সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সোমবার বেলা ১২টা থেকে মোল্লা কলেজের সামনে প্রায় দুই ঘণ্টার এ সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদেরকে নেওয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেল, ন্যাশনাল মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে।
সংঘাতে মোল্লা কলেজের তিন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে বলে প্রথমে দাবি করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীর।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এ হামলায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের কিছু ছাত্র নামধারী ব্যক্তি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের মদদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। হামলাকারীদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী নয়, বরং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত ব্যক্তিবর্গ।”
তবে সংঘাতে কোনো প্রাণহানির খবর পুলিশের তরফে নিশ্চিত করা হয়নি।
তবে বিকালে কলেজের ফেইসবুক পেইজে প্রকাশ করা বিজ্ঞপ্তিতে কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হলেও কেউ নিহত হওয়ার তথ্য দেওয়া হয়নি। এতে বলা হয়, আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মোল্লা কলেজ ও আশপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। মোতায়েন করা হয়েছে ছয় প্লাটুন বিজিবি সদস্য।
পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেলে মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদারের মৃত্যুর ঘটনায় রোববার ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। পূর্বঘোষিত সেই ‘সুপার সানডে' কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ও পাশের সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ওই সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। গণ্ডগোলের মধ্যে নিরাপত্তার কারণে মাঝপথে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
ওই হামলা ও লুটপাটের প্রতিবাদে সোমবার ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচির ডাক দেন সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এর অংশ হিসেবে এদিন সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রওনা হন ডেমরা সড়ক সংলগ্ন মোল্লা কলেজে। সেখানে তাদের সঙ্গে মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাতুল সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছিল তারা- এটা সবাই জানে। তারা হামলা করলে আমরা পুলিশকে আসতে বলি ৯৯৯ এ কল দিয়ে। পুলিশ এসেছে অনেক পরে।"
সেনাবাহিনীও আড়াইটার পরে আসে জানিয়ে তিনি বলেন, “অল্প কয়েকজন পুলিশ ছিল প্রথমে। তারা হামলার শুরুতে দূরে সরে যায়। সেনাবাহিনী, পুলিশ আগে আসলে কোনো ক্ষতি হতো না।'
হামলায় মূল সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ১০ তলা উঁচু ভবনের সামনের অংশের কাঁচ ভেঙে দেয়। আর পেছনের তিনটি ভবনের বেশিরভাগ কক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়; বেঞ্চ, সিলিং ফ্যান, সিসি ক্যামেরা, চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে অধ্যক্ষের অফিস, ল্যাবরেটরি ও ল্যাবও আছে।
'মেগা মানডে': সংঘাতে রণক্ষেত্র মোল্লা কলেজ, আহত শতাধিক
দলে দলে এসে ন্যাশনাল মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী কলেজে তাণ্ডব
মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষে ৪ কিলোমিটার দূরের সানারপাড় রওশন আরা কলেজ থেকে আসেন শিক্ষার্থী সাকিব হাওলাদার।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ আছে কলেজের ছাত্রদের নিয়ে। সেখানেই ঘোষণা করা হয়েছিল গতকাল রাতে আজকে এই কলেজে হামলা হবে।
ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, “প্রথম দফার হামলায় আমরা কম ছিলাম। তারা তো শত শত ছিল। কয়েক হাজারের মত।
“পুলিশও চলে গিয়েছিল। পড়ে আমরা এলাকাবাসীদের নিয়ে তাদের উপর হামলা করলে চলে যায়। তাদের সঙ্গে বাইরের লোকও (অছাত্র) ছিল।"
তবে সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী তুহিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকালকে মোল্লা কলেজের নেতৃত্বে ঢাকার বেশ কয়েকটি কলেজ একত্রিত হয়ে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় সোহরাওয়ার্দী কলেজের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে।
“আমরা গতকাল রাত থেকে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রশাসনকে সময় দিয়েছিলাম এ ঘটনার সুষ্ঠু একটা সমাধান করার জন্য। কিন্তু আমাদের দেয়া সময়ের ভেতর তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা। তাই আজ সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আমরা দুইটি কলেজের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে সেখানে গেলে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়।”
তুহিনের ভাষ্য, “আমাদের কিছু শিক্ষার্থী তাদের ধাওয়া করে মোল্লা কলেজের দ্বিতীয় তলায় উঠলে তারা আমাদের অনেক শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে রাখে। রুমের ভেতর তাদের ওপর নারকীয় তাণ্ডব চালায়।”
সোহরাওয়ার্দী কলেজের আরেক শিক্ষার্থী ফাহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সুষ্ঠু বিচারের দাবি নিয়ে সেখানে গেলে- তাদের পোলাপান প্রস্তুত ছিল আমাদের ওপর হামলা করার জন্য।
“আমদের বেশ কিছু শিক্ষার্থী সেখানে অবরুদ্ধ হলে আহতদের নিয়ে আমরা ক্যাম্পাসে চলে আসি। তাদের মধ্যে যারা গুরুতর আহত তাদের ঢাকা মেডিকেলে আর বাকিদের ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।'
মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল হাই শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হামলা করতে আসারা তো অনেক বড়। কারো কারো আইডি কার্ড ছিল গলায়। বাকিদের ছিল না। তারা হামলায় করে আমাদের কলেজ ভাঙছে। কিছু রাখে নাই। উপর থেকে ফেলে দিয়েছে সব।"
বেলা সোয়া ৪টার দিকে সেনাবাহিনী মাইকে ঘোষণা দেয় পথচারী ও এলাকাবাসীদের চলে যেতে অনুরোধ করে। এসময় সেনাবাহিনীর গাড়িকে অনুসরণ করে ছোট ছোট যান চলাচল করতে দেখা যায়।
ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এদিন সকাল ৭টা থেকে সূত্রাপুর ও ডেমরা এলাকায় ‘পর্যাপ্ত জনবল’ মোতায়েন করা হয়। তারা অত্যন্ত ধৈর্য্যের সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।
“এরপরও উচ্ছৃঙ্খল ও মারমুখী শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হয়ে সেখানে হামলা চালায়।”
তিনি বলেন, “সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজ এবং মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের জেরে প্রায় ২৫ শিক্ষার্থী আহত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুইজন নিহত হয়েছে মর্মে অনেকেই অপপ্রচার চালাচ্ছেন, যা মোটেই সঠিক নয়।”