"স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর পরিবারের প্রতি সমব্যথী। তিনি বিডিআর সদস্যদের দাবি-দাওয়াকে অন্য সকল কাজের ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।”
Published : 20 Feb 2025, 01:54 AM
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহালের দাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে 'বঞ্চিত' বিডিআর সদস্যদের প্ল্যাটফর্ম জাস্টিস ফর বিডিআর।
বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার এবং 'জাস্টিস ফর বিডিআর' প্লাটফর্মের সংগঠক আয়াতুল্লাহ বেহেশতী।
আয়াতুল্লাহ বেহেশতী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, 'জাস্টিস ফর বিডিআর' প্ল্যাটফর্মের সংগঠকরা বিকেল ৫টার দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বিষয়টিকে ‘সাদরে গ্রহণ করেছেন’ বলে এই সংগঠকের ভাষ্য।
মাহিন সরকার বলেন, "স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর পরিবারের প্রতি সমব্যথী। তিনি বিডিআর সদস্যদের দাবি-দাওয়াকে অন্য সকল কাজের ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তিনি উপদেষ্টা কমিশনের সাথে বিষয়টি নিয়ে বসবেন এবং কার্যক্রম আরও বেগবান করার ব্যাপারে জোর দেবেন। কমিশনের কাজের অগ্রগতি তিনি আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন।"
আয়াতুল্লাহ বেহেশতী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটিকে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়ার জন্য অনুরোধ করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়গুলো নিয়ম অনুযায়ীই সম্পন্ন করতে হবে।"
তিনি বলেন, "২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিডিআরের ৫৭ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ১০ জন বিভিন্ন পদবীর বিডিআর সদস্য এবং ৭ জন বেসামরিক নাগরিকসহ মোট ৭৪ জন শহীদ হন। এটি জাতির ইতিহাসের অন্যতম মর্মান্তিক অধ্যায় এবং সার্বভৌমত্বের ওপর এক ভয়াবহ আঘাত।"
তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড এবং পিলখানার বাইরে অবস্থানরত অন্যান্য ব্যাটালিয়ন-সেক্টর-ট্রেনিং স্কুলে কর্মরত বিডিআর সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে’ বলে অভিযোগ করেন আয়াতুল্লাহ বেহেশতী।
“হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করার লক্ষ্যে গণহারে নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের বিনা বিচারে জেলখানায় বন্দি রাখা হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যাদের ফৌজদারি মামলায় কোনোভাবে জেলে দিতে পারে নাই, তাদেরকে বিশেষ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে জেল জরিমানাসহ সাজা প্রদান করা হয়।”
তিনি বলেন, "পিলখানায় যখন হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়, পিলখানার বাইরে দেশের অন্যান্য ইউনিটের বিডিআর স্থাপনাগুলো ছিল পুরোপুরি শান্ত এবং ওইদিন বিভিন্ন ইউনিটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিডিআর সদস্যদের অস্ত্র অস্ত্রাগারে জমা নিয়ে নেওয়া হয়। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার বাইরে দেশের বিভিন্ন ইউনিটে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়।
“এই ঘটনাগুলো দ্বারা দেশের সকল বিডিআর ইউনিট সমূহে অবস্থানরত সৈনিকদের মনে ভিতির সঞ্চার হয় যা দুই বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ফলে নিরাপত্তা হীনতার তাগিদ থেকে বিডিআর সদস্যরা তাদের পরিবার, সরকারি সম্পদ ও নিজেদের সুরক্ষার জন্য প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যা 'বিদ্রোহ' হিসেবে চিহ্নিত করে হাজারো নিরীহ বিডিআর সদস্যকে গ্রেপ্তার, জেল-জরিমানা এবং চাকরিচ্যুতির মত কঠোর শাস্তির শিকার করা হয়, যা ছিলো বিচারের নামে চরম প্রহসন ও স্বেচ্ছাচারিতার এক নগ্ন নিদর্শন।"
এ ধরনের কর্মকাণ্ড ‘প্রহসনমূলক’ মন্তব্য করে আয়াতুল্লাহ বলেন, "এর মাধ্যমে হাজার হাজার নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদেরকে চাকরিচ্যুত করে তৎকালীন সরকার কর্তৃক সৃষ্ট পরিস্থিতিকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে এবং প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।"