নির্বাচন যে সময়টায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, বাংলাদেশে তখন থাকবে ভরা পৌষ মাস।
জানুয়ারির শুরুতে ওই সময়টায় শীত আর কুয়াশার দাপট থাকবে বলেই আভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অফিস।
বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তখন ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও নামতে পারে।
সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সেই কাজটা ইসি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই সেরে ফেলতে চায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নির্বাচনের সময় আবহাওয়া কেমন থাকতে পারে, সেই পূর্বাভাস তারা ইতোমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় উপস্থাপন করেছেন। পাশাপাশি প্রতি ১০ দিনের পূর্বাভাসও তারা ইসিকে সরবরাহ করবেন।
“সভায় আমরা বলেছি, ইতোমধ্যে শীত শীত ভাব শুরু হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম ভাগ পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলে তীব্র শীত এবং উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ঘন কুয়াশা থাকতে পারে অনেক এলাকায়।”
আজিজুর রহমান জানান, উত্তরাঞ্চলের তেঁতুলিয়াসহ কোথাও কোথাও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করতে পারে ওই সময়টায়। ভোর ৩টা থেকে সকাল ৮/৯টা পর্যন্ত থাকতে পারে ঘন কুয়াশা।
নির্বাচনী মালামাল সরবরাহ, ভোটের পর ফলাফল কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আনার সময় উত্তরাঞ্চলের প্রত্যন্ত এবং দক্ষিণের পার্বত্য এলাকায় কুয়াশার বিষয়টি বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছে আবহাওয়া অফিস।
সবশেষ নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ষাকালের চেয়ে ভোটের জন্য শীতকালই সুবিধাজনক। আবহাওয়া বৈরী না হওয়ায় গত তিন নির্বাচনে তেমন অসুবিধা হয়নি।
কবে কোন নির্বাচন
· প্রথম সংসদ নির্বাচন: ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ
· দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন: ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি
· তৃতীয় সংসদ নির্বাচন: ১৯৮৬ সালের ৭ মে
· চতুর্থ সংসদ নির্বাচন: ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ
· পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি
· ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন: ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি
· সপ্তম সংসদ নির্বাচন: ১৯৯৬ সালের ১২ জুন
· অষ্টম সংসদ নির্বাচন: ২০০১ সালের ১ অক্টোবর
· নবম সংসদ নির্বাচন: ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর
· দশম সংসদ নির্বাচন: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি
· একাদশ সংসদ নির্বাচন: ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর
এবার ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, “এখন দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস থেকে বলা হলেও ডিসেম্বরে আরও সুস্পষ্ট আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যাবে। ভোটের কয়েক দিন আগে আরও সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া যাবে।”
দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস বলছে, ডিসেম্বরের শেষ ভাগ থেকে জানুয়ারির প্রথম ভাগে নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড়ের মত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার শঙ্কা নেই।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, শীতের সময় কুয়াশা থাকলেও নদী অববাহিকায় নির্বাচনী মালামাল পৌঁছাতে আগে কখনো সমস্যা হয়নি। তবে ভোট শেষে নির্বাচনী মালামাল নিয়ে ফেরার সময় কুয়াশার জটিলতা বিবেচনায় রাখতে হয়। পার্বত্য এলাকায় প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করার কথা মাথায় রাখতে হবে।
রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির দুর্গম এলাকার ৩৩টি কেন্দ্রে নির্বাচনী মালামাল আনা নেওয়ায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে হতে পারে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন, বার্ষিক পরীক্ষা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এবং কারিগরি পরীক্ষা ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। ভোটকেন্দ্র সংস্কারে ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন সংশ্লিষ্টরা।
একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের ৬/৭ দিনের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। এবার নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিলের কথা রয়েছে। তার আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
আরও পড়ুন