একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সাক্ষাৎ চেয়েছে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।
Published : 09 Oct 2018, 11:46 PM
৩০ অক্টোবর থেকে সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হওয়ায় চলতি মাসের শেষ সপ্তাহেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এ আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে চায় সাংবিধানিক সংস্থাটি।
মঙ্গলবার জানতে চাইলে একজন নির্বাচন কমিশনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা একটা ফরমালিটিজ। তফসিল ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত। এজন্য ইতোমধ্যে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। আশা করি, অক্টোবরের শেষ নাগাদ আমাদের এ সৌজন্য সাক্ষাত হতে পারে।”
তিনি জানান, সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে ১৫ অক্টোবর কমিশন সভাও রয়েছে। ভোটের প্রস্তুতির কাজগুলো কমিশন সচিবালয় দেখভাল করছে।
সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন সিইসির নেতৃত্বে ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত হয়। তার এক সপ্তাহের মাথায় ২৫ নভেম্বর ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়।
ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি কাজ গুছিয়ে আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কমিশন সভার তারিখ নির্ধারণ হয়েছে। তাতে সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরা হবে। তবে ১৫ অক্টোবরের কমিশন সভায় ভোটের তফসিল নিয়ে আলোচনা হবে না।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তফসিল নিয়ে পরবর্তী আলাদা একটি সভায় বসবে কমিশন। যেখানে সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি অনুমোদন করবে। নির্বাচন কমিশনই ভোটের তারিখ চূড়ান্ত করবে।”
৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সাক্ষাতের বিষয়ে ইসি সচিবালয় থেকে সোমবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে ২৮-৩০ অক্টোবরের মধ্যে সাক্ষাতের এ সময়সূচি নির্ধারণের আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, ভোটের প্রস্তুতির প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে। ভোটের কোনো দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে একটা সময় ধারণা করা হচ্ছে।
“যেহেতু ৩০ অক্টোবর আমাদের সময় (নির্বাচনের ক্ষণ গণনা) শুরু হবে, এরপর যে কোনো সময় তফসিল করতে পারে কমিশন। আমাদের প্ল্যান ডিসেম্বরের মধ্যে করার।“
পূর্ববর্তী নির্বাচন
বাংলাদেশে প্রথম থেকে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে যথাক্রমে- ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ, ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬ সালের ৭ মে, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি।
দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচন বর্জন করে।
তার আগে নবম সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয় ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর। তিন দফা তারিখ পরিবর্তন করে ভোট হয় ২৯ ডিসেম্বর।
ওই সময়কার নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা প্রথমে যে তফসিল দিয়েছিলাম তা কয়েক দফা পরিবর্তন করতে হয়েছে। দলগুলোর সঙ্গে বিশেষ করে দুটি দলের সঙ্গেও ভোটের সম্ভাব্য সময় নিয়ে কথা বলেছিলাম। পরে ২৯ ডিসেম্বর চূড়ান্ত দিন দিয়েছিলাম।”
মনোনয়ন দাখিল, বাছাই, প্রত্যাহার ও প্রচারের পর্যাপ্ত সময় রেখে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অন্তত ৪৫ দিন সময় দিয়ে তফসিল ঘোষণা করা হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, প্রথম সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগে ৬০ দিন, দ্বিতীয় ৫৪ দিন, তৃতীয় ৪৭ দিন, ৪র্থ ৬৯ দিন পঞ্চম ৭৮ দিন, ষষ্ঠ ৪৭ দিন, সপ্তম ৪৭ দিন, অষ্টম ৪২ দিন, নবম সংসদ নির্বাচন ৪৭ দিন ও দশম সংসদ নির্বাচনে ৪২ দিন সময় হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করেছিল কমিশন।
ফিরে দেখা ২০১৩-১৪
>>১৮ অক্টোবর: দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার প্রস্তাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণ।
>>২১ অক্টোবর: প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব নাকচ করে সাবেক ১০ উপদেষ্টাকে নিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের পাল্টা প্রস্তাব দেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
>> ভোটের ক্ষণগণনা শুরু ২৫ অক্টোবর: টানা হরতালের প্রাথমিক কর্মসূচি দেয় বিএনপি। হরতাল ও আল্টিমেটাম প্রত্যাহারের শর্ত দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
>> ২৬ অক্টোবর: জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সঙ্কটের আশঙ্কায় দেশবাসীর উৎকণ্ঠার মধ্যে সরাসরি কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। দেশজুড়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে বহুল আলোচিত টেলিফোন আলোচনায় দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন বিরোধীদলীয় নেতা।
>> ৪ নভেম্বর: সর্বদলীয় সরকারের না যাওয়ার ঘোষণা বিএনপির।
>> ১১ নভেম্বর: নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয় সরকার’ গঠনের জন্য মন্ত্রিসভার সদস্যরা মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
>>১৭ নভেম্বর: রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ। নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারেরও বিষয়েও আলোচনা।
>>১৮ নভেম্বর: সর্বদলীয় সরকারে ছয়মন্ত্রী ও দুই প্রতিমন্ত্রীর শপথ।
>> ১৯ নভেম্বর: দশম সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জানাতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের সাক্ষাত।
>> ২০ নভেম্বর: সংসদের অধিবেশন শেষ।
>> ২১ নভেম্বর: নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার গেজেট: মন্ত্রিসভার ২৯ জন সদস্যের দায়িত্ব বণ্টন।
>> ২৩ নভেম্বর: তফসিল ঘোষণাকে সামনে রেখে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরের জন্য ঢাকা থেকে দশম সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সরবরাহ শুরু হয়।
>>২৫ নভেম্বর: জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।
>> ৫ জানুয়ারি: বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের বর্জনের মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিংসতায় ১৩ জেলায় ২১ জন নিহত হয়েছেন। সংসদের মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টির প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় বাকি ১৪৭টি আসনে ভোট হয় । এর মধ্যে গোলযোগের কারণে আটটি আসনের ভোটের ফলাফল স্থগিত হয়।
>> ৭ জানুয়ারি: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
>> ৮ জানুয়ারি: দশম সংসদ নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীদের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
>> ৯ জানুয়ারি: সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ নেন নির্বাচিতরা।
>> ১২ জানুয়ারি: ৪৯ সদস্যের মন্ত্রিসভার শপথের মধ্যে দিয়ে টানা দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
>> ১৩ জানুয়ারি: রাষ্ট্রপতি দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করেন।
>> ২৪ জানুয়ারি: নবম জাতীয় সংসদ ভাঙার গেজেট প্রকাশ।
>> ২৯ জানুয়ারি: দশম সংসদের যাত্রা শুরু।