Published : 12 Apr 2025, 12:05 AM
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধন পেতে আগ্রহী রাজনৈতিক দলগুলোকে আবেদন করার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি যে সময় দিয়েছে, তাতে আর মাত্র নয় দিন বাকী আছে।
প্রায় এক মাস আগে এই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলেও এর মধ্যে পাঁচটি দল আবেদন করেছে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ সময় চেয়েছে।
আলোচনায় থাকা নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি এখনও আবেদন করেনি।
বর্তমান বাস্তবতায় নিবন্ধন আবেদনের জন্য মাত্র ৪০ দিন ‘যথেষ্ট সময় নয়’ বিবেচনায় তা বাড়ানোর পক্ষে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের দলটি।
রোজা ও টানা ছুটির কারণে গণবিজ্ঞপ্তির সময় ‘যথেষ্ট’ নয় মনে করছে অন্য দলগুলোও।
সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের নতুন দলের জন্য প্রথম ধাপে তিন মাস সময় দেওয়া হয় এবং পরে আরও দুই মাস বাড়ানো হয়।
এবার নির্বাচন কমিশন বলছে, ঘোষিত সময় ২০ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে কমিশন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
ডিসেম্বরে ভোটের লক্ষ্য ধরে ১০ মার্চ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন কমিশন-ইসি। ২০ এপ্রিল হচ্ছে আবেদনের শেষ সময়সীমা।
এরই মধ্যে রিট আবেদন করায় ১৮ মার্চ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জন্য দল নিবন্ধনে গণবিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করে আদালত। এরপরই মূলত দল নিবন্ধন আবেদনের আগ্রহে ভাটা পড়ে।
গণবিজ্ঞপ্তি জারির দুই সপ্তাহের মাথায় ২৫ মার্চ ‘আওয়ামী লিগ’ নামে একটি দলের নিবন্ধন আবেদন প্রথম পান বলে জানান ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ।
আমজনতার দল, নতুন বাংলা, সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোট, গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি- এ চারটি দল নিবন্ধন নিয়ে আবেদন করেছে নির্বাচন কমিশনে; সময় বাড়ানো, নিবন্ধন শর্তের প্রতিবন্ধকতা এবং অনুমতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে তাদের আবেদনে।
হাতে গোনা কয়েকটি দল আবেদন ইসির ডেসপ্যাচে জমা দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে বৃহস্পতিবার পৌঁছেনি।
ইসি সচিবালয়ের নিবন্ধন আবেদন দেখভালের দায়িত্বে থাকা নির্বাচনী সহায়তা ও সমন্বয় শাখার কর্মকর্তারা বলেছেন, একটি দলের আবেদন রয়েছে, ডেসপ্যাচে দুই-একটি আসতে পারে। পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনও তাদের কাছে আসেনি।
এনসিপি আগামী সপ্তাহে যাবে ইসিতে
নতুন রাজনৈতিক দলটি এরইমধ্যে নিবন্ধনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। তবে আত্মপ্রকাশের মাস দেড়েকের মাথায় নিবন্ধন শর্ত পূরণ করার সক্ষমতা থাকলেও সংস্কার কমিশনের সুপারিশ, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন, ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ ভোটের কর্মপরিকল্পনার দিকে তাকিয়ে রয়েছে দলটি।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের’ প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি।
নিবন্ধনের বিষয়ে বৃহস্পতিবার জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কার কমিটির কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার তুষার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এনসিপির পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল ২০ এপ্রিলের আগে নির্বাচন কমিশনে যাবে। এটা আগামী সপ্তাহে হতে পারে।
'আওয়ামী লিগ' নামে নিবন্ধন চান পার্বতীপুরের উজ্জল
“নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর এতো স্বল্প সময়ে নিবন্ধন শর্ত পূরণের সক্ষমতা থাকলেও বাস্তবতা বিবেচনা করে ইসির কাছে নিবন্ধন আবেদনের সময় বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হবে।”
গণবিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে ইতোমধ্যে একটি রাজনৈতিক দল আদালতে গিয়ে তাদের পক্ষে রায় পাওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি।
এনপিসির এ নেতা বলেন, নিবন্ধন শর্ত ‘শিথিলের’ সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, সরকারের তরফ থেকেও আশুবাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে ইসি এবং ভোটের কর্মপরিকল্পনাও করছে।
“কমিশনের সঙ্গে দেখা করে সার্বিক বিষয় আলোচনা করবে এনসিপি প্রতিনিধি দল। তিন-চারটি বিষয় জানার পাশাপাশি গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর রমজান ও অনেক দিন ছুটির থাকায় দলের কাজ গুছানোর অসুবিধার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য ইসির কাছে তুলে ধরা হবে। এরপর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।”
কমিশন ইতিবাচকভাবে এসব বিবেচনা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এবার কি নিবন্ধনে সাড়া কম?
গত ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক ডজনের বেশি নতুন রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব ঘটে।
এমন পরিস্থিতিতে ইসিতে নিবন্ধন আবেদনে দলগুলোর সাড়া কম পাওয়া যাচ্ছে কি না জানতে চাইলে ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী বলেন, “প্রথমবার অনেক দল আবেদন করেছিল। অর্ধশত দল এখন নিবন্ধিত হয়ে আছে। সুতরাং অধিকাংশ দলই তো নিবন্ধিত, তাই অনেক দলেরই আর আবেদন করতে হচ্ছে না।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, নিবন্ধনে তো কমিশন বরাবরই একটা যৌক্তিক সময় দিয়ে থাকে।
এবারও সময় বাড়ানোর এখতিয়ার ইসির, এ কথা তুলে ধরে জেসমিন টুলী বলেন, “দলগুলো আবেদনও দিয়ে থাকে। বরাবরই কমিশন সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে এসব বিষয় দেখে থাকে। এখন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ, ইসির আইনি সংস্কার ও সরকারের পদক্ষেপের উপর অনেক বিষয় নির্ভর করে।
“নিবন্ধন শর্ত নিয়ে কোনো সংশোধন এলে আবার সে অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত নিতে পারে হয়ত।”
নতুন দলের ক্ষেত্রে ইসির নিবন্ধনের শর্ত হল, দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানার প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল দেখাতে হবে।
অন্যদিকে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ হল, নতুন দলের নিবন্ধন শর্ত শিথিল করে ১০ শতাংশ জেলা কার্যালয়, ৫ শতাংশ উপজেলা কার্যালয় এবং ন্যূনতম ৫ হাজার সদস্য থাকার বিধান করা।
২০০৮ সালে এটিএম শামসুল হুদা কমিশন আইনি সংস্কার এনে নিবন্ধন প্রথা চালু করে। তাতে তিনটি নিবন্ধন শর্ত দেওয়া হয়। ভোটে নিবন্ধিত দলগুলোকেই অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বাইরে অন্যদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হয়।
সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ৯৮টি আবেদন পড়েছিল।
বিগত চার সংসদ নির্বাচন মিলে এ পর্যন্ত ৫৫টি দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। বাতিল হওয়া ৫টি বাদে বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রয়েছে ৫০টি দল।
সময় বাড়াতে আবেদন
এক মাস নিবন্ধন আবেদনের সময় চেয়ে আবেদন করেছে আমজনতার দল।
বৃহস্পতিবার দলটির আহ্বায়ক মিয়া মশিউজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট্কমকে বলেন, “রমজান, স্বাধীনতা দিবসের ছুটি, ঈদুল ফিতর ও সাপ্তাহিক ছুটি এবং নানা সঙ্গত কারণে নিবন্ধন কাজের স্বাভাবিক গতি ‘বাধাগ্রস্ত’ হয়েছে।
“আমরা দল নিবন্ধনের আবেদনের শেষ সময় ২০ এপ্রিলের পরিবর্তে ১৫ মে নির্ধারণের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসির কাছে আবেদন করেছি।”
সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোট জুন পযন্ত সময়ে চেয়েছে।
শুক্রবার দলটির চেয়ারম্যান খায়রুল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এত কম সময়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা, কমিটি পুনর্গঠন ও জেলা/উপজেলা কার্যালয় স্থাপন সম্ভব নয়। এ কাজ শেষ করতে অন্তত তিন মাস প্রয়োজন। তবুও আমরা দরখাস্ত জমার সময় ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন করেছি সিইসির কাছে।”
রাজনৈতিক দল নতুন বাংলা নিবন্ধনের আবেদন করার অনুমতি চেয়েছে ইসির কাছে।
নিবন্ধন: রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ছাড়া অন্যদের আবেদনে বাধা দেখছে না ইসি
নিবন্ধন: আগ্রহী দলের আবেদনের শেষ সময় ২০ এপ্রিল
দলটির চেয়ারম্যান মো. আকবর হোসেন ফাইটন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী নতুন দলের জন্য যে শর্তটি রয়েছে তা সাংঘর্ষিক। কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলার কমিটি সংক্রান্ত শর্তটি পূরণে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সেজন্য আমরা বলেছি, অন্য শর্তপূরণ করতে এক নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের নিবন্ধন দেওয়ার অনুমতি চেয়েছি।”
গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি (ডেমোক্রেটিক পিপল পাওয়ার-ডিপিপি) নামে দলটিকে ইসিতে অন্তভুক্ত করার জন্য আবেদন করেছে।
জানতে চাইলে ডিপিপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক ফরাজী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছি। এটা জানিয়ে রেখে ইসিতে চিঠি দিয়েছি। যাতে এ নামটা আর কাউকে না দেয় নির্বাচন কমিশন। ২০ এপ্রিলর মধ্যে নিবন্ধন আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
এবার সবার আগে ২৫ মার্চ ‘আওয়ামী লিগ’ নামে নতুন একটি দল গঠনের কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন আবেদন করেছেন উজ্জল রায় নামের এক ব্যক্তি। দলটি ‘গঠন’ করে ওইদিনই তিনি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন। আর প্রতীক হিসেবে চেয়েছেন নৌকা অথবা ইলিশ। দলের কার্যালয় দেখানো হয়েছে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ।
'রকেট' প্রতীকে নিবন্ধন পেল বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি
ডিসেম্বরে ভোট ধরে নিয়ে কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছে ইসি
অবশ্য, নিবন্ধন শর্ত পূরণে কোনো ধরনের কাগজপত্র যুক্ত করেননি দলটির একমাত্র এই নেতা।
তেমন সাড়া না পেলেও এনসিপির সময় বাড়ানোর দাবি এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রিট আবেদনের পর সময় বাড়ানোর ইঙ্গিত রয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটির।
তবে এখনও এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কথা বলতে নারাজ ইসি।
শর্ত শিথিল ও সময় বাড়ানো হবে কি না, জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইন-বিধি অনুযায়ী বিদ্যমান শর্তপূরণ করেই আবেদনের সময় ২০ এপ্রিল পর্যন্ত রয়েছে। এ সময়ে যত আবেদন পড়বে এবং সময় বাড়ানোর আবেদন থাকলে তা কমিশনে আসবে। ওই পর্যন্ত অপেক্ষা করে এ বিষয়ে (সময় বাড়ানো) পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কমিশন সভায়।”