সারজিস বলেছেন, ‘সাধারণ সম্পাদক’ নামের কোনো পদ আর ফাউন্ডেশনে নেই।
Published : 22 Jan 2025, 11:30 AM
দায়িত্ব পালনে ‘প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না’ জানিয়ে ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের সময় হতাহতদের সহায়তায় গঠিত ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের’ সাধারণ সম্পাদকের পদ ‘ছেড়ে দিয়েছেন’ সারজিস আলম।
আওয়ামী সরকারের পতন ঘটানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এ সমন্বয়ক ফেইসবুকে পোস্টে এ ঘোষণা দিয়েছেন।
সেখানে সারজিস বলেছেন, তার পদত্যাগের পর ‘সাধারণ সম্পাদক’ নামের কোনো পদ আর ফাউন্ডেশনে নেই।
এই বিষয়ে জানতে সারজিস আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের’ কল সেন্টারে কর্মরত সাইদুর রহমান শাহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, "সারজিস ভাই অনেক দিন ধরেই ফাউন্ডেশনের সাথে নেই। পোস্টে যা লিখেছেন ঠিক আছে।"
কেন ফাউন্ডেশন ছেড়ে দিয়েছেন সেই ব্যাখ্যায় সারজিস কাজের ক্ষেত্রে তার সময়ের স্বল্পতাকে কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, “যতদিন পর্যন্ত আমি আমার সর্বোচ্চ সময় ফাউন্ডেশনে দিতে পেরেছি ততদিন আমি দায়িত্ব পালন করেছি। যখন মনে হয়েছে, এখন থেকে ফাউন্ডেশনে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া আমার জন্য সম্ভব হবে নয় তখন আমি দায়িত্ব থেকে সরে এসেছি।”
দায়িত্বপালনে নিজের সততা ‘অটুট রেখেছেন’ বলেও দাবি করেছেন সারজিস।
'জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের' হটলাইন-ওয়েবসাইট চালু
'জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে' প্রধান উপদেষ্টার শত কোটি টাকার অনুদান
“আমার কাছে নিজের সীমাবদ্ধতা অ্যাড্রেস করা এবং সে অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণ বা ত্যাগ করা কোনো দুর্বলতা নয় বরং এটাতে সৎ সাহস লাগে। আমি চেষ্টা করেছি আমার চেয়ারের দায়িত্বের সাথে সৎ থাকতে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত এ ফাউন্ডেশনের সভাপতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গত ১০ সেপ্টেম্বর গঠিত এ ফাউন্ডেশনে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকার সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
গত জুলাই-অগাস্টের কোটা ও সরকার পতনের গণআন্দোলনে হতাহতদের পরিবারকে সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে সংগঠনটি কাজ করছে।
সারজিস জানিয়েছেন, গত বছরের ২১ অক্টোবর থেকে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের’ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ করেছেন তিনি।
এই দুই মাস ১০ দিনের দায়িত্ব পালনকালে ফাউন্ডেশন থেকে কোনো বেতন বা সম্মানী তিনি নেননি বলেও জানিয়েছেন সারজিস।
ফাউন্ডেশনের কাজ এগিয়ে নিতে এখন কে কে দায়িত্বে থাকছেন সেই বিষয়টিও পোস্টে স্পষ্ট করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এই নেতা।
সারজিস বলেছেন, এখন থেকে 'এক্সিকিউটিভ কমিটি' পুরো অফিসের সার্বিক বিষয় পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে ৷
“চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) সেখানে অফিসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে ৷ মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বর্তমানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে ৷
“'গভর্নিং বডি ফাউন্ডেশনের পলিসি মেকিংয়ে কাজ করবে। যেখানে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ ৪জন উপদেষ্টা রয়েছেন (স্বাস্থ্য, সমাজকল্যাণ, স্থানীয় সরকার, আইসিটি)৷ ‘সাধারণ সম্পাদক' নামে কোনো পদ এখন নেই।”
'জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের' সম্পাদক সারজিস, সিইও স্নিগ্ধ
২২২৯ পরিবার পেয়েছে ৪৭ কোটি টাকা সহায়তা: জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন
আন্দোলনে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ এর জমজ ভাই স্নিগ্ধকে শুরুতে ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল।
পরে গেল অক্টোবরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দ্বিতীয় সভায় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আনা হয় সারজিসকে; এবং স্নিগ্ধকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ দেওয়া হয়।
ফাউন্ডেশন থেকে কয়টি পরিবার আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন তা তুলে ধরে সারজিস বলেন, “৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভ্যারিফায়েড ৮২৬ জন শহীদ পরিবারের মধ্যে ৬২৮জনকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয় ৷
পাশাপাশি প্রায় ১১ হাজার ভ্যারিফায়েড আহতের মধ্যে প্রায় ২ হাজার আহতকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়।”
এর আগে ফাউন্ডেশনে প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেছেন, হতাহতদের মধ্যে দুই হাজার ২২৯ পরিবারকে এ পর্যন্ত ৪৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
সারজিস বলেছিলেন, ফাউন্ডেশনের হিসাবে এখন পর্যন্ত ১০৯ কোটি ২০ লাখ ৫ টাকা অনুদান জমা হয়েছে। বিতরণ করা হয়েছে ৪৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ফান্ডে ৬১ কোটি টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।
তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে ১৯৮ জনের পরিবারের সহায়তা পাওয়া বাকি রয়েছে। তালিকা যাতে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।