”এতে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আইনি নোটিস পাঠানো হবে,“ বলেন তিনি।
Published : 27 Jun 2024, 08:34 PM
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদের অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান সশরীরে দুদক কার্যালয়ে গিয়ে চেয়ারম্যান বরাবর চিঠিটি জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
চিঠিতে তিনি ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামানের বিপুল সম্পদ থাকার খবর সংবাদমাধ্যমে এলেও তা নিয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু না করায় এ আবেদন করার কথা তুলে ধরেন।
পরে এ আবেদনকে নোটিস হিসেবে বিবেচনা করা হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই আইনজীবী বলেন, “না এটি চিঠি। এতে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আইনি নোটিস পাঠানো হবে।“
ওই আইনজীবী চিঠিতে লিখেছেন, “গত ১৬ জুন দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় ‘মিয়া সাহেবের যত সম্পদ‘’ এরপর দৈনিক প্রথম আলোতে ‘এবার আলোচনায় আছাদুজ্জামান মিয়ার বিপুল সম্পদ‘ এবং দৈনিক খবরের কাগজ পত্রিকায় ‘আছাদুজ্জামানের কত সম্পদ?‘ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
“অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে জাতীয় দৈনিকের পাতাজুড়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরও অনুসন্ধানের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বিষয়টি দুদকের নিষ্ক্রিয়তা, যেখানে প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন।“
চিঠিতে বলা হয়েছে, “জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ক্ষুণ্ন করে এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
”অতএব এ বিষয়ে যথাযথ অনুসন্ধানের উদ্যোগ গ্রহণ করে জানানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।“
এই আইনজীবির করা আবেদনের বিষয়ে দুদকের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে কমিশনের সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন বলেছিলেন, “তার (আছাদুজ্জামান) বিষয়ে অনুসন্ধান করা হবে কি না সেটা কমিশনের পরবর্তী বৈঠকের পর জানানো যাবে।”
সম্প্রতি দুদকের অনুসন্ধানে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসার মধ্যেই গত কয়েক দিন ধরে সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামানের সম্পদ নিয়ে আলোচনা চলছে।
এ নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক মানবজমিন, পরে আরও কয়েকটি পত্রিকায় আছাদুজ্জামানের ‘বিপুল সম্পদের’ তথ্য তুলে ধরা হয়।
গত ১৬ জুন ‘মিয়া সাহেবের যত সম্পদ’ শিরোনামে মানবজমিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাড়ির পর বাড়ি। জমি এবং ফ্ল্যাটের সারি। কী নেই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়ার। রীতিমতো গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। তবে শুধু নিজের নামে নয়। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ের নামেও বিপুল সম্পত্তি গড়েছেন ডিএমপি’র সাবেক এই কমিশনার।"
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, “পুলিশের সাবেক এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্ত্রীর নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৬৭ শতক জমি রয়েছে। এই তিন জেলায় তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আরও ১৬৬ শতক জমি।”
আছাদুজ্জামান মিয়া ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাকে জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।
আছাদুজ্জামান মিয়া অবৈধ উপায়ে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে দুদক ‘তদন্তে নামতে পারে’ বলেও প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুগান্তরসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
এসব খবর প্রকাশের মধ্যে তার দেশত্যাগের খবরও চাউর হয়।
তবে ‘অবৈধ’ সম্পদের যেসব তথ্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে, সেসব ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ দাবি করেন আছাদুজ্জামান। সরকারকে বিতর্কিত করতে ‘পরিকল্পিতভাবে’ এসব খবর প্রকাশ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
গত ১৮ জুন মোবাইল ফোনে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার সকল সম্পদ ‘বৈধ আয়ে উপার্জিত অর্থ’ দিয়ে কেনা।
সস্ত্রীক দেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমানোর তথ্যও ‘সঠিক নয়’ মন্তব্য করে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘চিকিৎসার জন্য’ তিনি সপরিবারে সিঙ্গাপুরে গেছেন।
তখন তিনি বলেছিলেন, “দুয়েক দিনের মধ্যে আমি চিকিৎসা শেষ করে দেশে আসব। আমি যখন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে এলাম, তার কয়েকদিন পর পরিকল্পিতভাবে এসব খবর প্রকাশ করা হয়েছে।”
আছাদুজ্জামন বলেন, “বাবার একমাত্র সন্তান হিসেবে পারিবারিকভাবে বেশ কিছু সম্পদও পেয়েছি। সেসবের কিছু বিক্রি করে নতুন করে সম্পদ কেনা হয়েছে। সে সব আয়কর নথিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।”
‘ছেলে মেয়ের অর্থ’ দিয়ে কেনা সম্পত্তিও পত্রিকার প্রতিবেদনে তার নামে প্রচার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার।
পুলিশের সাবেক এই কর্মকর্তার সম্পদের অনুসন্ধান চেয়ে দুদকে চিঠি দেওয়ার পর আইনজীবি রিগ্যান সাংবাদিকদের বলেন, “পত্রপত্রিকায় যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তা অনুসন্ধান করে জনগণকে জানানো দুদকের দায়িত্ব।
”আমরা বলছি না আমরা আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন বা করেন নাই। এখানে তিনি দোষী বা নির্দোষ এটা অনুসন্ধান করা দরকার। অনুসন্ধান হলেই প্রকৃত ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসবে।”