“যে যত প্রভাবশালী হোক তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করা যাবে। তদন্ত শেষে মামলা করা যাবে, মানে বিচারের আওতায় আসবে”, বলেন তিনি।
Published : 18 Jun 2024, 09:03 PM
ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কী করে জানবেন, সে প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ঈদের পরদিন মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, “সরকার অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়তে চায় না। সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তেমন অভিযোগ আসেনি। তবে দুর্নীতি হলে তদন্ত হবে, বিচার হবে।
“বিচার বিভাগ স্বাধীন, দুদকও স্বাধীন। যে যত প্রভাবশালী হোক তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করা যাবে। তদন্ত শেষে মামলা করা যাবে, মানে বিচারের আওতায় আসবে।”
সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির খোঁজ মেলা নিয়ে আলোচনা থামতে না থামতেই এবার শুরু হয়েছে আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার পরিবারকে নিয়ে।
দৈনিক মানবজমিন ও পরে দৈনিক প্রথম আলোতে তার পরিবারের সম্পত্তির বিষয়ে নানা তথ্য ছাপা হয়। এতে লেখা হয়, "বাড়ির পর বাড়ি। জমি এবং ফ্ল্যাটের সারি। কী নেই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়ার। রীতিমতো গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। তবে শুধু নিজের নামে নয়। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ের নামেও বিপুল সম্পত্তি গড়েছেন ডিএমপির সাবেক এই কমিশনার।"
পরে প্রথম আলো গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের তথ্য তুলে ধরে লিখেছে, পুলিশের সাবেক এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্ত্রীর নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৬৭ শতক জমি রয়েছে। এই তিন জেলায় তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আরও ১৬৬ শতক জমি।
আছাদুজ্জামান মিয়া ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাকে জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।
প্রথম আলো সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যও ছেপেছে। সেখানে দাবি করেছেন, তিনি উত্তরাধিকার সূত্রেই বিপুল সম্পত্তির মালিক। তার স্ত্রী, কন্যা, জামাতাও ভালো আয় করেন।
এ নিয়ে আলোচনার মধ্য আছাদুজ্জামান মিয়া বিদেশে গেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তথ্য ছাপা হয়েছে।
এক প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করেনি। তার ব্যাপারে কী করে জানব? সরকারের নজরে আসার আগে সরকার কীভাবে ব্যবস্থা নেবে?”
যখনই কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নজরে এসেছে, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে দাবি করে সড়ক মন্ত্রী বলেন, “গণমাধ্যমে আসার পর কিংবা সরকারের নজরে আসার পর সরকার কারো দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি এমন ঘটনা ঘটেনি।
“দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা দিয়েছেন এবং দুদককেও স্বাধীন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন, দুর্নীতি করলে তদন্ত হবে। দুদক এটি করবে।…বিএনপি শাসনামলে এমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।”
সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন কীভাবে
নাফ নদীতে মিয়ানমারের যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ঈদের দিনের বক্তব্যেরও জবাব দেন কাদের।
তিনি বলেন, “সার্বভৌমত্বের কোথায় আঘাত হানা হয়েছে? বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের কোনো লঙ্ঘন মিয়ানমার সরকার করেনি। অনুপ্রবেশকারীরা চলে গেছে, জাহাজও সরে গেছে।”
গত সপ্তাহের বুধবার নাফ নদীতে মিয়ানমারের যুদ্ধ জাহাজের উপস্থিতি, সেখান থেকে মিয়ানমারের ভেতরে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অভিযান এবং মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিনমুখী নৌযানে গুলি করা হয়। এতে বেশ কয়েক দিন যাতায়াত বন্ধ থাকে।
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের এই দ্বীপে আটকে পড়া ১০ হাজার মানুষ নিত্যপণ্যের সংকটেও পড়ে এবং পরে প্রশাসনের উদ্যোগে বড় জাহাজে করে সেখানে মালামাল পাঠানো হয়।
গত শনিবার ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা আক্রান্ত হলে সেই আক্রমণের জবাব দেব। আমরা আমাদেরকে এত খাটো করে দেখি কেন? আমরাও প্রস্তুত আছি। আমরা আক্রমণ করব না। কিন্তু আক্রমণ হলে কি আমরা ছেড়ে দেব?”
একই দিন মির্জা ফখরুল বলেন, “পত্রিকায় খবরে এসেছে, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে সংকট, সেখানে আতঙ্ক। কি দুঃখজনক! মানে এটাকে কী বলব? কত ‘ব্যর্থতা’ এই সরকারের যে আমার একটা দ্বীপ, সেই দ্বীপে আমরা যেতে পারছি না।”
পরের দিন ওবায়দুল কাদের বলেন, “তারা না জেনে, না বুঝে সব বিষয় নিয়ে অহেতুক মন্তব্য করে। কূটনৈতিক প্রজ্ঞা ও কৌশলের বাইরে গিয়ে মির্জা ফখরুল দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য রেখেছেন।”
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ও গুজব গুঞ্জনের মধ্যে রোববার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর থেকে বিবৃতি দিয়ে অপপ্রচারে কান না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ঈদের দিন ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় মির্জা ফখরুল বলেন, “কেন তাদের বিজিবি প্রধান যাচ্ছে বার বার? কেন সেনাবাহিনীর প্রধান বলছেন, ‘আমরা সতর্ক আছি’। আর ওবায়দুল কাদেরও বলছেন আমরা সতর্ক আছি। তাহলে আমরা গুজবটা ছড়ালাম কোথায়? এটা তো বাস্তবতা সেন্ট মার্টিনে মিয়ানমারের ঘটনাগুলো একটা সমস্যা তৈরি করেছে।”
ঈদ নিয়ে বক্তব্যের জবাব
ওবায়দুল কাদের এর জবাব দেওয়ার পাশাপাশি ঈদ নিয়ে বিএনপি নেতার বক্তব্যেরও প্রতিক্রিয়া জানান।
ফখরুল বলেছিলেন, “দ্রব্যমূল্য যেভাবে বেড়েছে এতে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আমাদের ঈদুল আজহায় ঠিক সেভাবে আনন্দ উপলব্ধি অথবা উপভোগ করার সুযোগ থাকছে না।”
কাদের বলেন, "মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে এক কোটি ৪ লাখের বেশি কোরবানি হয়েছে, যা গতবারের তুলনায় বেশি। মূল্যস্ফীতির কারণে ঈদ ব্যাহত হয়েছে, বিএনপির এ তথ্য ঠিক নয়।”
“সমালোচনা করে বিএনপিসহ তাদের সমর্থকরা দেশটাকে শ্রীলঙ্কা বানিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছে”, এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “মূল্যস্ফীতি আছে, তবে এটা কমাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”
ঈদের দিনেও সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির অপপ্রচার বন্ধ থাকেনি অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি।”