সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার দাবি, ‘সরকারকে বিতর্কিত করতে’ তার নামে এসব রটানো হচ্ছে।
Published : 19 Jun 2024, 10:32 AM
‘অবৈধ’ সম্পদের যেসব তথ্য সংবাদ মাধ্যমে এসেছে, সেসব ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ দাবি করে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, তার সকল সম্পদ ‘বৈধ আয়ে উপার্জিত অর্থ’ দিয়ে কেনা।
সস্ত্রীক দেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমানোর তথ্যও ‘সঠিক নয়’ মন্তব্য করে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘চিকিৎসার জন্য’ তিনি সপরিবারে সিঙ্গাপুরে গেছেন।
আছাদুজ্জামান মিয়া মঙ্গলবার টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুয়েক দিনের মধ্যে আমি চিকিৎসা শেষ করে দেশে আসব। আমি যখন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে এলাম, তার কয়েকদিন পর পরিকল্পিতভাবে এসব খবর প্রকাশ করা হয়েছে।”
দুদকের অনুসন্ধানে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসার মধ্যেই গত কয়েক দিন ধরে সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামানের সম্পদ নিয়ে আলোচনা চলছে।
এ নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক মানবজমিন, পরে আরো কয়েকটি পত্রিকায় আছাদুজ্জামানের ‘বিপুল সম্পদের’ তথ্য তুলে ধরা হয়।
গত ১৬ জুন ‘মিয়া সাহেবের যত সম্পদ’ শিরোনামে মানবজমিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাড়ির পর বাড়ি। জমি এবং ফ্ল্যাটের সারি। কী নেই সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়ার। রীতিমতো গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। তবে শুধু নিজের নামে নয়। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ের নামেও বিপুল সম্পত্তি গড়েছেন ডিএমপি’র সাবেক এই কমিশনার।"
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, “পুলিশের সাবেক এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্ত্রীর নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৬৭ শতক জমি রয়েছে। এই তিন জেলায় তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আরও ১৬৬ শতক জমি।”
আছাদুজ্জামান মিয়া অবৈধ উপায়ে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে দুদক ‘তদন্তে নামতে পারে’ বলেও প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুগান্তরসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
আছাদুজ্জামান মিয়া ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাকে জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।
দুর্নীতি ও দেশত্যাগের খবর নিয়ে কথা বলতে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে আছাদুজ্জামান মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব সংবাদ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং সরকারকে বিতর্কিত করতে প্রকাশিত হয়েছে।”
‘দুয়েক দিনের মধ্যে’ দেশে ফিরবেন জানিয়ে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমার সকল সম্পদ বৈধ আয়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে কেনা। বাবার একমাত্র সন্তান হিসাবে পারিবারিকভাবে বেশ কিছু সম্পদও পেয়েছি। সেসবের কিছু বিক্রি করে নতুন করে সম্পদ কেনা হয়েছে। সে সব আয়কর নথিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।”
আছাদুজ্জামান বলছেন, তার ছেলে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে বড় পদে আছেন এবং ছেলের বউ একটি বিদেশি ব্যাংকে চাকরি করেন। তার মেয়ে এবং জামাতা চিকিৎসক। তাদেরও সম্পদ কেনার ‘যোগ্যতা’ আছে।
‘ছেলে মেয়ের অর্থ’ দিয়ে কেনা সম্পত্তিও পত্রিকার প্রতিবেদনে তার নামে প্রচার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার।
তার দাবি, অতীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের ‘বিতর্কিত করতে একটি চক্র’ কাজ করছে। ওই চক্র এরইমধ্যে ‘অনেককে নিয়ে’ রিপোর্ট করেছে।
আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।
মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকার ‘অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়তে’ চায় না।
“আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করেনি। তার ব্যাপারে কী করে জানব? সরকারের নজরে আসার আগে সরকার কীভাবে ব্যবস্থা নেবে?”
দুর্নীতি দমন কমিশন আছাদুজ্জামান মিয়ার বিষয়ে তদন্তের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে কি না জানতে চাইলে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ ব্যাপারে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।
তবে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদের বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন তিনি দেখেছেন। তার মতে, এসব অভিযোগ কতটুকু সত্য, দুদকের উচিত তা যাচাই- বাছাই করা।
কেউ অভিযোগ না করলেও দুদক স্বউদ্যোগে এ বিষয়ে তদন্ত করার ক্ষমতা রাখে বলে জানান এ আইনজীবী।
তিনি বলেন, “সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। সাবেক ডিআইজি মিজানুর রহমান দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এছাড়া আরো বেশ কিছু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করছে। এসব কারণে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দুদকের তদন্ত করে দেখা উচিত।”
আরো পড়ুন