“জনপ্রিয় অনেক বিষয়কে পুঁজি করে ষড়যন্ত্রকারীরা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।”
Published : 07 Jul 2024, 06:35 PM
সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনে ‘ষড়যন্ত্রীরা’ সুযোগ নিতে পারে মন্তব্য করে সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তাদের ফাঁদে যাতে পা না দিতেও আন্দোলনকারীদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘এসএসসি-এইচএসসি সমমান পরীক্ষায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনে প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, “আমি এ বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলতে চাই, অনেক সময় জনপ্রিয় অনেক বিষয়কে পুঁজি করে ষড়যন্ত্রকারীরা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।”
কী ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বারংবার এমন একটা অবস্থার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়, যেখানে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীরা বার বার এগিয়ে যায়। সে ধরনের প্রচেষ্টা হচ্ছে কি না সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।”
স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করার জন্য অনেকে অনেকভাবে উসকানি দেয় জানিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কথাও তুলে ধরেন মন্ত্রী। বলেন, “সেই সময়টাতে কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের কর্মকাণ্ড নানাভাবে শুরু হয়েছিল।”
আদালতে বিচারাধীন বিষয় সমাধানের জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে নওফেল বলেন, “আদালতের সিদ্ধান্তের পরে নির্বাহী বিভাগের সেটা বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা ফ্লেক্সিবিলিটি থাকে। সেটার জন্য অবশ্যই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।”
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের একটি দল ঢাকার শাহবাগের মোড়ে আন্দোলন করছেন গত কয়েকদিন ধরে।
রোববার বিকাল ৩টা থেকে শাহবাগ, নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট, চানখারপুল, সায়েন্স ল্যাব, মতিঝিলসহ সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালিত হয়।
ওই কর্মসূচিতে রোববার থেকে সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট পালনের ঘোষণাও এসেছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।
তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়।
ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন।
ওই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।
ওইদিনই রায় প্রত্যাখান করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন করে আন্দোলন শুরু করেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আন্দোলনকারীরা তাদের কর্মসূচি করতে পারছেন, এটাই কি প্রমাণ করে না রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্নে, বাক স্বাধীনতা চর্চার প্রশ্নে আমাদের সরকার কারও উপরেই কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি? মানুষের বাকস্বাধীনতা অবশ্যই আছে।”
কোটার বিষয়ে তিনি বলেন, “যে কথা বলা হচ্ছে, কোটার প্রশ্নে মেধাবী এবং কম মেধাবী নাকি জেলাভিত্তিক, সেটা তো খুবই সাবজেক্টিভ বিষয়।
“একটা নির্দিষ্ট মানের মেধা ধারণ না করে কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষে প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করা সম্ভব নয়, সেটা তো আমরা সকলেই জানি। সেক্ষেত্রে তার পরবর্তী ধাপ কীভাবে নির্ধারিত হবে, সেটা যেহেতু আদালতে পেন্ডিং আছে, সেটা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।”
ডিআরইউর যেসব সদস্যদের সন্তান ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এসএসসি এবং ২০২৩ সালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, অনুষ্ঠানে তাদেরকে সংবর্ধনা ও বৃত্তি দেওয়া হয়।
সংগঠনটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য এজেডএম মফিউদ্দিন শামীম, ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন, কল্যাণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।