শাওন হত্যাকাণ্ডে এর আগে নাবিল নামের একজন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন; প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে তিনি হত্যায় জড়িত থাকার কথা ‘স্বীকার করেছেন’ বলে যাত্রাবাড়ী থানা জানিয়েছিল।
Published : 22 Feb 2023, 05:04 PM
ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে মাদক মামলার আসামি শাওনকে খুনের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব বলছে, এলাকায় ‘আধিপত্য’ বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের বিবাদের জেরে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন- মিজানুর রহমান ওরফে মিজান বেপারী ওরফে ফরমা মিজান (৩২) এবং জুয়েল রানা ওরফে ফুটবল জুয়েল (২৯)। মঙ্গলবার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ধারালো অস্ত্র ও একটি ইয়ামাহা মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মিজান যাত্রাবাড়ী এলাকার ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসী’।
“তার নামে যাত্রাবাড়ী ও মীরহাজিরবাগ এলাকায় মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সময় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও মারামারির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ঢাকায় বিভিন্ন থানায় ৫টি মামলাও রয়েছে।“
জুয়েলও মীর হাজীরবাগের বাসিন্দা, কাজ করেন ওয়ার্কশপে। মাদক ব্যবসার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধেও। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় জুয়েলের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা মঈন।
এর আগে শাওন ‘হত্যাকাণ্ডে’ নাবিল নামের একজন যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে নাবিল ‘অপরাধের’ কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মফিজুল আলম।
তিনি বলেন, সিসি ক্যামেরার ভিডিও থেকে তারা বুঝতে পেরেছেন, ‘নাবিলের ছুরিকাঘাতে’ শাওনের মৃত্যু হয়েছে। আর খুনের সময় নাবিলের সঙ্গে আরও একজন ছিল, যাকে ধরার চেষ্টা চলছে।
যাত্রাবাড়ীর মীর হাজীরবাগে সোমবার ভোরে স্থানীয় এক মুদি দোকানের সামনে শাওনের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শাওনের শরীরে ছুরিকাঘাতের একাধিক চিহ্ন ছিল।
সে সময় শাওনকে ‘মাদক ব্যবসায়ী’ হিসেবে বর্ণনা করে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই তোরগুল হাসান সোহাগ জানিয়েছিলেন, তার (শাওন) বিরদ্ধে পাঁচটি মাদক মামলার খবর তারা জানেন। সেগুলোর মধ্যে শ্যামপুর থানায় কিছুদিন আগে দায়ের করা একটি মামলাও রয়েছে।
বুধবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসে র্যাব কর্মকর্তা আল মঈন জানান, শাওন দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে মীর হাজিরবাগ এলাকায় বসবাস করছিলেন; টিকাটুলীতে একটি ট্রাভেলস কোম্পানিতে তিনি কাজ করতেন।
“এলাকায় অপরাধীদের দুটি দলের মধ্যে শাওন একটিতে যুক্ত ছিলেন। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শাওনের সঙ্গে প্রতিপক্ষ রজবের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। পরে ঝগড়া ও হাতাহাতিতে গড়ায় সেটি। ঘটনাটি রজব তার বড় ভাই মিজানকে জানায়। পরবর্তীতে তারা কিছুদিন আগে মিজানের নেতৃত্বে শাওনকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার পরিকল্পনা করে।“
কমাণ্ডার মঈন বলেন, রোববার রাতে শাওন তার স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে আনতে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। তাকে হত্যায় মিজান, রজব ও জুয়েল- এই তিনজন তিন ভূমিকায় ছিলেন।
“হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মিজান মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি অবস্থান নেন। আর মিজানের ছোট ভাই রজব অতর্কিতভাবে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করেন শাওনকে। আর হত্যাকাণ্ডের সময় জুয়েল রাস্তার মোড়ে পাহারা দিচ্ছিলেন। গুরুতর জখম হয়ে শাওন উঠে দৌঁড় দিলে হামলাকারী দৌড়ে গিয়ে তাকে আবারও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। ঘটনার পরপর মিজান ও জুয়েল মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।“
আর নাবিলের ভূমিকা নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মফিজুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ঘটনাস্থল থেকে সিসি ক্যামেরার ভিডিও উদ্ধার করে তাতে দেখা গেছে, নাবিল শাওনের বুকে ছুরি মেরেছে।
“রোববার দিবাগত রাত ২টা ৪১ মিনিটে গলির ধারে বসে থাকা শাওনের কাছে আসে নাবিল ও আরও একজন। মিনিটখানেকের মধ্যেই নাবিল পকেট থেকে সুইচ গিয়ার (এক ধরণের ছুরি) বের করে শাওনের বুকে আঘাত করে। প্রথম আঘাতটি লাগলেও পরের দুটি ছুরিকাঘাত এড়িয়ে শাওন দৌড় দেন। এই ঘটনাস্থলের পাশের গলিতে পড়ে ছিল শাওনের লাশ।
ওসি মফিজুল আলম আরও বলেন, “নাবিল প্রাথমিকভাবে ছুরি মারার কথা স্বীকার করেছে। নাবিলের সঙ্গে থাকা আরেক আসামিকে আমরা খুঁজছি। এ কারণে তার নাম বলছি না। আর র্যাব যাদের ধরেছে তারাও মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।“