ইউনান ইউনিভার্সিটিতে বাংলা বিভাগে পড়ছে ২৫ চীনা তরুণ। শিক্ষকদের একজন বাংলাদেশি সুবর্ণা আক্তার। ভিনদেশে বাংলা চর্চা দেখে তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে মনে হয় ‘এক টুকরো বাংলাদেশ’।
Published : 04 Jul 2023, 08:42 AM
চীনের ইউনান ইউনিভার্সিটিতে বাংলা শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর ইয়াং মেইফেং নিয়েছেন বাংলা নাম রোমানা। নিজের ভাষা মান্দারিনের পাশাপাশি বাংলায় বেশ সাবলীল তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী।
রোমানা বাংলা শেখার যে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন, তাতে মান্দারিন বা ইংরেজির কোনো শব্দ ছিল না।
রোমানার সহপাঠী জ্যাং ইউশিউ, তার বাংলা নাম সোনালি। বাংলা সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়েছে তার।
এক প্রশ্নে সোনালি বলেন, “এখন আমি হুমায়ুন আহমেদের ‘নন্দিত নরকে’ পড়ছি।”
মিয়ানমার লাগোয়া চীনের এই প্রদেশটির সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে কানাচে বাংলা ভাষার চর্চা চলে নিত্যদিন। সেখানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যেমন বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করেন, তেমনি চীনের তরুণ-তরুণীরা আগ্রহ থেকে চর্চা করে বাংলা ভাষার।
চার বছরের স্নাতক সম্মান কোর্সে পড়াশোনা করে তারা। বাংলায় কথা বলার পাশাপাশি চলে সাহিত্য, সংগীত আর নাট্যচর্চা। ভিন দেশে বাংলার এমন ব্যবহার দেখে আপ্লুত হবেন যে কেউ।
রোমানা ও তার সহপাঠীদের বাংলা গান দারুণ পছন্দ। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের ‘আমি বাংলার গান গাই’ এর পাশাপাশি বাদ যায় না হাল আমলের ‘সাদা সাদা কালা কালা’-ও।
মিডিয়া ভিজিটে যাওয়া বাংলাদেশি গণমাধ্যম প্রতিনিধিদলের মুখোমুখি হয়ে রোমানা বললেন, “বাংলায় পড়তে ও বলতে আমার ভালো লাগে।”
সরকারের বৃত্তি পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে এক বছর বাংলা ভাষা পড়েন তিনি। এরপর ফিরে যান নিজ দেশে। তার মত ২৫ জন ইউনান ইউনিভার্সিাটতে দক্ষিণ এশীয় ভাষা অনুষদের বাংলার ছাত্র। তাদের সবার আছে আলাদা বাংলা নাম।
এসব শিক্ষার্থী বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ভিনদেশে। বাংলায় গান গাইতে পারায় ইউনানের কুনমিংয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনেও ডাক পড়ে তাদের।
চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে শিক্ষা সহায়তার অংশ হিসাবে ঢাকা ও ইউনান মিলিয়ে পড়াশোনা করেন এই শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলা শিক্ষা বিভাগে মৌলিক বাংলা, বাংলা বলা, শোনা, পড়া ও লেখার পাশাপাশি বাংলাদেশ পরিচিতি ও বাংলা সাহিত্যের কোর্স পড়ানো হয়।
বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থীরা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ফরেন ল্যাংগুয়েজের অন্য কোনো ভাষায় প্রফেশনাল বা সার্টিফিকেট কোর্সে পড়তে পারেন।
ইউনান ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হু জিনমিং জানান, চীনের পঞ্চম বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে ২০২০ সালে তারা বাংলা শিক্ষা বিভাগ চালু করেন। চার বছর মেয়াদি সম্মান কোর্সে এক বছর পরপর ছাত্র ভর্তি করা হচ্ছে।
বাংলা ভাষা জানা তিনজন চীনা শিক্ষকের পাশাপাশি বাংলাদেশি সুবর্ণা আক্তারও পড়াচ্ছেন এই শিক্ষার্থীদের। তিনি বাংলাদেশে পড়াশোনা করতেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কর্মস্থলে গিয়ে শিখে নিয়েছেন চীনা ভাষা।
সুবর্ণা বলেন, “চীনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলা এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রবল। তারা ভালো বাংলা গান জানে, বাংলা নাটকও করতে পারে।
“আগ্রহের জায়গা থেকে তারা বেশ পড়াশোনা করেছে, ভাষাটাকে রপ্ত করেছে। বাংলা সিনেমা দেখে, বই পড়ার পর আমাকে জানায়, এটা দেখেছে, ওটা করেছে। আমার কাছে মনে হয়, ছোট্ট এক টুকরো বাংলাদেশ এখানে।
“বাংলাদেশি হিসাবে এখানে বাংলা ভাষা শেখাতে পেরে একজন বাংলাদেশি হিসাবে আমি গর্বিত। এ সৌভাগ্যটা সবার হয় না।”
শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনে যাওয়ার সুযোগের বিষয়ে সুবর্ণা বলেন, “বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে চলমান ব্যাপক সহযোগিতা ও ব্যবসায়ের ক্ষেত্রেও তারা কাজে যুক্ত হতে পারবে।”
ইউনান ইউনিভার্সিটি প্রায় দুইশ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট হু জিনমিং।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এখানে অনেক ভালো করছে। আমরা বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বাড়াতে চাই। গত পাঁচ বছরে ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে।”
কৃষি বিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আরও বাড়ানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানান ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রশাসক।