Published : 09 Jul 2023, 12:35 AM
এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় অভিযান শুরুর পথ থেকেই বিভিন্ন ভবন ও বাসায় একের পর এক ডেঙ্গুর জীবানুবাহী এ মশার লার্ভা মিলছে। পাশাপাশি প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর হিসাবও আগের দিনের সংখ্যা ছাড়াচ্ছে।
শনিবার উত্তর সিটির অভিযানে মোহাম্মদপুর এলাকার ছয়টি বাড়ির মধ্যে পাঁচটিতেই পাওয়া গেছে ডেঙ্গুর জীবানুবাহী এইডিস মশার লার্ভা।
এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে থেকেই ঢাকার পাশাপাশি অন্যান্য জেলাতেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে চলেছে।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় এ বছরের রেকর্ড সংখ্যক ৮২০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যাদের নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে।
শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে যাওয়া এসব রোগীর ৬০৩ জনই ঢাকার এবং ২১৭ জন ঢাকার বাইরের।
এইডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে দুজন মারা গেছে। তাদের নিয়ে ডেঙ্গুতে এ বছর মৃত্যু হল ৬৭ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ১৮ থেকে ২৭ জুন যে প্রাক-বর্ষা মৌসুম জরিপ করেছে তাতে ঢাকায় গত পাঁচ বছরের মধ্যে এইডিস মশার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে মশা নিয়ন্ত্রণের জোর দেওয়ার পরামর্শ এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।
শনিবার আকস্মিক পরিদর্শনে মোহাম্মদপুর এলাকায় যান ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এসময় তিনি জাপান গার্ডেন সিটির একটি ভবনের বেইজমেন্টে গিয়ে দেখতে পান বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে আছে। সেখানে জন্মেছে এইডিস মশার লার্ভা। ওই সময় প্রচুর পূর্ণাঙ্গ মশা সেখানে ওড়াওড়ি করছিল।
সেখান থেকে বের হয়ে মেয়র ডিএনসিসির কর্মকর্তা ও সংবাদকর্মীরাসহ পাশের আরেকটি ভবনের বেইজমেন্টে যান। সেখানে বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী, বাথরুমের কমোডসহ নানা উপকরণ রাখা ছিল। মেঝেতে বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা পানিতে লার্ভা পাওয়া যায়।
পরে জাপান গার্ডেন সিটির তৃতীয় বহুতল ভবনের বেইজমেন্টে পরিদর্শনকালেও দেখা গেছে, নিচতলায় গাড়ি ধোয়ার জায়গায় পানি জমে আছে। সেই পানিতে অসংখ্য লার্ভা কিলবিল করছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিবারণ শাখার কর্মীরা নিশ্চিত করেন এগুলো এইডিস মশার লার্ভা। ছিটিয়ে দেওয়া হয় ওষুধ।
এসময় জাপান গার্ডেন সিটি ফ্ল্যাট ওনার্স কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিদের কাছে মেয়র জানতে চান এখানে এত মশার লার্ভা কীভাবে এল। পরে একই প্রশ্ন রাখেন সাংবাদিকরাও।
জবাবে সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান দাবি করেন, বেইজমেন্টে চালকরা পানি দিয়ে গাড়ি পরিষ্কার করে। তারা ইচ্ছে করলেই দ্রুত পরিষ্কার করতে পারেন না। পরিষ্কার করলেও অন্য এলাকা থেকে মশা চলে আসে।
“আমরা পরিষ্কার করলেও অন্য এলাকা থেকে মশা চলে আসে। পুরো ঢাকা শহরেই মশা। আজকে থেকে আমরা চেষ্টা করব যেন মশা না হয়।”
সিটি করপোরেশনের কর্মীদের এসব ভবনে ঢুকতে দেওয়া হয় না এমন অভিযোগে বিষয়ে তিনি বলেন- “সিটি করপোরেশনের লোকজনকে ঢুকতে কোনো বাধা দেওয়া হয় না। তারা নিয়মিতই আসেন।”
কিন্তু কিছুক্ষণ পরই উল্টো কথা বলেন সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের লোকজন এলে তারা সহযোগিতা করেন। কিন্তু করপোরেশনের কর্মীরা আসেন না।
“তারা ছয় থেকে নয় মাস এখানে আসে না। এখানে কোনো ফগার মেশিন ঢোকে না। আমরা তাদের খুশিও করি কিন্তু তারা আসে না। তবে এই অবস্থার জন্য আমরা দুঃখিত। আমরা চেষ্টা করব আগামী তিনদিনের মধ্যে পরিস্থিতি উন্নতি করার।”
মশার লার্ভা পাওয়ার অভিযোগে জাপান গার্ডেন সিটিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাসির উদ্দিন মাহমুদ।
পরে মোহাম্মদপুরের পিসি কালচার হাউজিং এলাকায় যান মেয়র আতিকুল। সেখানে ১২ নম্বর সড়কের একটি নির্মাণাধীন বাড়ির নিচতলায় জমে থাকা পানিতে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। ওই বাড়ির মালিককে সেখানে পাওয়া যায়নি। নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা হারুনুরুর রশিদ নামে একজনকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে ওই বাড়ির মালিককে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এরার শ্যামলী রিং রোডের একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে যায় ডিএনসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে কনকর্ড রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের নির্মাণাধীন ওই ভবনে কোনো লার্ভা পাননি ডিএনসিসির কর্মীরা।
সবার শেষে রিং রোডের বি-৮/১ নম্বর বাড়িতে যান মেয়র আতিকুল ইসলাম। ওই বাড়ির নিচতলায় নির্মাণসামগ্রী রাখা। সেখানে জমে থাকা পানিতে এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। ওই বাড়ির মালিককে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ওই বাড়ি পরিদর্শনের সময় এক শিশুকে কোলে করে সেখানে আসেন প্রতিবেশী এক ব্যক্তি। তার অভিযোগ, তিনি পাশের ভবনে থাকেন। এই বাড়িতে জন্মানো ডেঙ্গু মশা আশাপাশের বাড়ির লোকজনকে আক্রান্ত করেছে।
“এই বাড়িটা ঝুঁকিপূর্ণ, আমরা অনেকবার বলেছি জায়গাটা পরিষ্কার করে রাখতে, কিন্তু বাড়ির মালিক শোনেন না। আমার ছেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। আমার স্ত্রী এখনও হাসপাতালে ভর্তি। আশপাশের অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এই বাড়ি থেকে।”
ছয়টি বাড়ি পরিদর্শন করে পাঁচটিতেই এইডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি কী বার্তা দেয় জানতে চাইলে মেয়র বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ঢাকার ৮০ শতাংশ ভবনের বেইজমেন্টেই মশার লার্ভা পাওয়া যাবে।
“মশা কিন্তু ড্রেনে হচ্ছে না। হচ্ছে ছাদের মধ্যে, বেলকনিতে বা কারও ঘরের মধ্যে। বিশেষ করে আন্ডারগ্রাউন্ডে যেখানে গাড়ি রাখছি সেখানার অবস্থা কিন্তু ভয়াবহ।”
ডেঙ্গু: দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হলে বিপদ বড়
হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ১২ হাজার ছাড়াল
এইডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় জাপান গার্ডেন সিটিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা